বাসস
  ১০ অক্টোবর ২০২৫, ১৯:০৪
আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২৫, ১৯:১৯

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম আর নেই

কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। ফাইল ছবি

ঢাকা, ১০ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক, কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম মারা গেছেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)

রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ শুক্রবার বিকেল ৫টায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনি ১৯৫১ সালের ১৮ জানুয়ারি সিলেট শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সৈয়দ আমীরুল ইসলাম এবং মাতা রাবেয়া খাতুন। 

গত শুক্রবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশে (ইউল্যাব) যাওয়ার পথে তিনি গাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে গাড়িচালক একজনের সহায়তায় তাকে পার্শ্ববর্তী একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। খবর পেয়ে মাজহারুল ইসলামসহ অন্যরা সেখানে যান। সেখান থেকে তাকে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকেরা জানান, তার ‘ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক’ হয়। পরে সেখানে তার হৃদযন্ত্রে রিং পরানো হয়।

গত শনিবার থেকে অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। অক্সিজেন লেভেল কমতে থাকে, ফুসফুসে পানি জমার কারণে পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে রোববার সন্ধ্যায় লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। প্রায় ৪৮ ঘণ্টা লাইফ সাপোর্টে থাকার পর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছিল। 

তবে পরে আবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে পুনরায় লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। আজ বিকেল ৫টায় চিকিৎসকেরা লাইফ সাপোর্ট সরিয়ে নিয়ে তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে মাজহারুল ইসলাম জানিয়েছেন।

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৬ সালে মাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৬৮ সালে সিলেট এমসি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ১৯৭১ ও ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করেন। ১৯৮১ সালে কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইয়েটস-এর কবিতায় ইমানুয়েল সুইডেনবার্গের দর্শনের প্রভাব বিষয়ে পিএইচডি করেন। 

পেশাগত জীবনে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসরের পর তিনি ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টস বাংলাদেশে (ইউল্যাব) যোগ দেন।

১৯৯৬ সালে তাকে বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ২০১৮ সালে একুশে পদক প্রদান করা হয়। মাইকেল মধুসূদন দত্ত, কাজী নজরুল ইসলাম, শামসুর রাহমানের উপর তার উল্লেখযোগ্য গবেষণা কর্ম রয়েছে।

সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের গল্পগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে - স্বনির্বাচিত শ্রেষ্ঠ গল্প, থাকা না থাকার গল্প, কাচ ভাঙ্গা রাতের গল্প, অন্ধকার ও আলো দেখার গল্প, প্রেম ও প্রার্থনার গল্প, সুখ দুঃখের গল্প ও বেলা অবেলার গল্প। তার লেখা উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে-আধখানা মানুষ্য, দিনরাত্রিগুলি, আজগুবি রাত, তিন পর্বের জীবন, যোগাযোগের গভীর সমস্যা নিয়ে কয়েকজন একা একা লোক, ব্রাত্য রাইসু সহযোগে ও  কানাগলির মানুষেরা।

সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের মরদেহ আজ বারডেমের হিমঘরে রাখা হবে বলে তার পরিবার, বন্ধু ও স্বজনেরা জানিয়েছেন। সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আগামীকাল শনিবার সকাল ১১টায় তার মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হবে। এরপর বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা হবে। পরে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হতে পারে।