শিরোনাম
ঢাকা, ৭ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস): ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
আজ মঙ্গলবার প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রতিবেদনে এমন পূর্বাভাস দেওয়া হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৪ দশমিক ৮ শতাংশে এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৩ শতাংশে পৌঁছাবে।
‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ বিশ্বব্যাংকের ‘সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট’-এর অংশ।
প্রতিবছর দুইবার এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এটি দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, সম্ভাবনা এবং দেশগুলোর নীতিগত চ্যালেঞ্জ বিশ্লেষণ করে।
‘চাকরি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও বাণিজ্য’ শীর্ষক অক্টোবর-২০২৫ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৬ শতাংশে শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জও রয়েছে।
প্রতিবেদনে পরীক্ষা করা হয়েছে, বাণিজ্য উন্মুক্তকরণ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার কীভাবে দেশগুলোতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সহায়ক হতে পারে।
‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে উল্লেখযোগ্য পুনরুদ্ধারের দিকে অগ্রসর হয়। এর পেছনে মূল কারণ ছিল শক্তিশালী রপ্তানি, রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দেশটি মধ্য মেয়াদে প্রবৃদ্ধির একটি ঊর্ধ্বমুখী ধারা বজায় রাখতে সক্ষম হবে। তবে টেকসই প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বিশেষত যুবক ও নারীদের জন্য জরুরি সংস্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাজারভিত্তিক বিনিময় হার নীতির কারণে বৈদেশিক চাপ কমেছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল হয়েছে এবং চলতি হিসাব ঘাটতি কমেছে। এছাড়া, রপ্তানিও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
কঠোর মুদ্রানীতি, প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের কম আমদানি কর এবং ভালো ফলনের কারণে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে কম রাজস্ব আদায়, বেশি ভর্তুকি এবং ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বৃদ্ধির কারণে বাজেট ঘাটতি সম্প্রসারিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে দারিদ্র্য বেড়েছে। মোট শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ কমে ৬০ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে ৫৮ দশমিক ৯ শতাংশে নেমেছে, যেখানে নারীরা বেশি প্রভাবিত হয়েছেন।
শ্রমবাজারের বাইরে থাকা ৩০ লাখ অতিরিক্ত কর্মক্ষম মানুষের মধ্যে ২৪ লাখ নারী।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের বিভাগীয় পরিচালক জ্যঁ পেম বলেন, ‘অর্থনীতি দৃঢ়তা দেখিয়েছে, কিন্তু এটিকে স্বাভাবিক ধরে নেওয়া যায় না।’
তিনি বলেন, ‘শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখতে এবং আরও ভালো ও বেশি কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে বাংলাদেশকে সাহসী সংস্কার ও দ্রুত বাস্তবায়নের পথে এগোতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বাড়ানো, ব্যাংক খাতের দুর্বলতা দূর করা, জ্বালানি ভর্তুকি কমানো, নগরায়ণের পরিকল্পনা করা এবং বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করা।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত দুই দশকে শিল্পখাতের চাকরি ঢাকায় ও চট্টগ্রামে কেন্দ্রীভূত হয়েছে, যা আঞ্চলিকভাবে সমান উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার দিকটি তুলে ধরে। এতে দেশব্যাপী সার্বজনীন চাকরি সৃষ্টি নিশ্চিত করতে স্থানীয় উন্নয়ন কৌশল পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট জোহানেস জুট বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় ব্যাপক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা রয়েছে। তবে প্রবৃদ্ধির ঝুঁকিগুলো মোকাবিলায় দেশগুলোকে সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধা সর্বাধিকভাবে কাজে লাগানো এবং বিশেষ করে মধ্যবর্তী পণ্যের জন্য বাণিজ্য বাধা কমানোর মাধ্যমে দেশগুলো উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারবে। পাশাপাশি ব্যক্তিগত বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে এবং অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান শ্রমশক্তির জন্য নতুন চাকরি সৃষ্টি করতে পারবে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি এখনও বিদেশি বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য খুব বেশি উন্মুক্ত নয়। অনেক খাতে উচ্চ শুল্ক থাকায় সেগুলোতে চাকরি কমছে।
অন্যদিকে, কম শুল্কযুক্ত খাত, যেমন সেবা খাত, গত দশকে নতুন চাকরির বড় অংশ তৈরি করেছে।
বিশ্ব ব্যাংক আরও বলেছে, যদি ধাপে ধাপে পরিকল্পিতভাবে শুল্ক কমানো যায়, বিশেষ করে বড় ধরনের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আওতায়, তাহলে তা বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে পারে। এতে প্রতিযোগিতা বাড়বে, উৎপাদনশীলতা বাড়বে এবং নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।