শিরোনাম
শাহজাহান নবীন
ঝিনাইদহ, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ (বাসস) : দুই বছর বন্ধ থাকার পর জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার সলেমানপুর সাহাপাড়া শতবর্ষী মন্দিরে নারীদের উদ্যোগে এক ব্যতিক্রম দুর্গাপূজা আয়োজন করা হয়েছে।
প্রতিবছর এই মন্দিরে পূজা আয়োজনে পুরুষরা থাকলেও এবছর আয়োজন করেছেন নারীরা। ‘নবারণ মহিলা সংঘ’ নামে নারীদের একটি সংগঠন এ উদ্যোগ নেয় ।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, সলেমানপুর সাহাপাড়ার শতবর্ষী এই মন্দিরে প্রতিবছর পুরুষরা দুর্গাপূজার আয়োজন করতেন। তবে অজ্ঞাত কারণে গত দুই বছর মন্দিরে দুর্গাপূজার আয়োজন করেনি মহল্লার পুরুষরা। একারণে সাহাপাড়া মহল্লার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আত্মীয় স্বজনরাও পূজার ছুটিতে বেড়াতে আসতে চাইতো না।
এবছরও দুর্গাপূজার আয়োজন নিয়ে পুরুষদের মধ্যে কোনো তোড়জোড় ছিল না। পরে নবারণ মহিলা সংঘ পূজার ২০ দিন আগে একটি সভা আহ্বান করে। ওই সভায় মহল্লার সকল নারী উপস্থিত হয়ে পূজা আয়োজনে সম্মত হন।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নারীরাই বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাঁদা তোলেন। পূজার কেনাকাটা থেকে শুরু করে ডেকোরেটর ভাড়া করা ও মন্দির সাজানোর কাজ নারীরা মিলেমিশে সম্পন্ন করেন। পূজা আয়োজন সম্পন্ন করতে নারীরাই গঠন করেছেন একটি কমিটি। ওই কমিটির সকল সদস্য নারী।
সাহাপাড়ার বাসিন্দা সুজিত সাহা বাসসের সাথে আলাপকালে বলেন, প্রতি বছর আমরা পুরুষরা পূজার আয়োজন করতাম। এবার নারীরা উদ্যোগ নিয়েছেন। পূজার যাবতীয় খরচাদি ও অনুষ্ঠান মা-বোনেরা মিলে করছেন। আমরা পুরুষরাও তাদের সকল কাজে সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছি।
নবারণ মহিলা সংঘের সাধারণ সম্পাদক কবিতা শর্ম্মা বলেন, গত বছর পুরুষেরা উদ্যোগ না নেয়ায় আমাদের মহল্লায় পূজার আয়োজন বন্ধ হয়ে যায়। এবছর আমরা পাড়ার দিদি, বৌদি, পুত্রবধূরা মিলে পূজার আয়োজন করেছি। দারুণ এক প্রশান্তি অনুভব করছি। নারী-শিশুসহ সব বয়সের মানুষ এখানে আসছেন। তারা আনন্দ উপভোগ করছেন।
নবারণ মহিলা সংঘ ও পূজা কমিটির সভাপতি বেবী রানী সাহা বাসসকে বলেন, দুর্গাপূজা আয়োজনের লক্ষ্যে প্রথমে মহল্লার ৩০ জন নারীকে নিয়ে একটি মিটিং করি। এরপর মহল্লার বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমরা চাঁদা তুলেছি। সকলেই দারুণ সহযোগিতা করেছেন। আন্তরিকতা দিয়ে সব শ্রেণিপেশার মানুষ আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বর্তমানে আমাদের নবারণ মহিলা সংঘে ১০০ সদস্য রয়েছেন। আগামীতেও আমরা এই আয়োজনের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চাই।
তিনি আরও বলেন, এবছর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই ভালো। উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন থেকে আমাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। এলাকার অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও আমাদের সহযোগিতা করছেন।
সরেজমিনে মন্দির প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, সাহাপাড়া মন্দিরে পূজার আনুষঙ্গিক সব কাজ করছেন নারীরা।
আরতি,আরাধনা থেকে শুরু করে সব কিছুই করছেন নারীরা। নারীরা যেমনি শাঁখ, কাঁসর, উলুধ্বনি বাজাচ্ছেন, একইভাবে প্রসাদ বিতরণ, অতিথি আপ্যায়নের কাজও করছেন তারা। নারীদের এমন উদ্যোগে খুশি এলাকাবাসী। এলাকার বাসিন্দারা নিশ্চিন্তে ও নিরাপদে পূজা উদ্যাপন করতে পেরে অনেক খুশি।