শিরোনাম
বেলাল রিজভী
মাদারীপুর, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : জেলার শিবচর উপজেলার ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের সন্যাসীরচরে মহাসড়কের কোল ঘেঁষেই নির্মান করা হয়েছে অত্যাধুনিক ট্রমা সেন্টার। ১২ কোটি টাকার ব্যয়ে নির্মিত হয়েছিল এ ট্রমা সেন্টারটি। ঝকঝকে একাধিক ভবন সম্বলিত এক্সপ্রেসওয়ে সংলগ্ন ট্রমা সেন্টারটি ২ বছরেরও বেশি সময় আগে উদ্বোধন করা হলেও চিকিৎসাসেবা চালু হয়নি এখনও।
কিন্তু এটি এখন মাদকের আস্তানায় পরিণত হয়েছে, প্রতিদিন চুরি হয়ে যাচ্ছে মূল্যবান জিনিসপত্র, দেখা শোনার যেন কেউ নেই।
এলাকার স্থানীয় এবং মহাসড়কে চলাচলকারী পরিবহন চালকেরা জানান, মহাসড়কের পাশে ট্রমা সেন্টার থাকা খুবই জরুরী। কিন্তু উদ্বোধনের পর আড়াই বছর পার হলেও চিকিৎসাসেবা চালু হবার সম্ভবনা দেখছেন না তারা!
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের বিষয়টি রীতিমতো মহামারি রূপ নিয়েছে। দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের দ্রুত সময়ের মধ্যে উদ্ধার করা গেলে প্রাণহানি অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই নির্মিত হয়েছিল মাদারীপুর জেলার শিবচরে ট্রমা সেন্টারটি। তবে সেবা না থাকায় কোনো কাজেই আসছে না ১২ কোটি টাকা খরচ করে নির্মিত এ প্রতিষ্ঠানটি। পড়ে আছে বছরের পর বছর। রাষ্ট্রীয় সম্পদ তো অপচয় হচ্ছেই, জনগণও বঞ্চিত হচ্ছে এ সেবা থেকে।
জানা যায়, বিগত আওয়ামী সরকারের সময় শিবচর উপজেলার সন্যাসীরচর ইউনিয়নের ঢাকা-ভাঙ্গা মহাসড়কের কোল ঘেঁষেই নির্মান করা হয়েছিল ট্রমা সেন্টারটি। ট্রমা সেন্টারের নামকরণ করা হয় সাবেক চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরীর পিতা সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরীর নামে। ২০২২ সালের নভেম্বরে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ট্রমা সেন্টারের উদ্বোধন করেন। তবে নামে মাত্র তড়িঘড়ি করে উদ্বোধন হলেও ট্রমা সেন্টারের কার্যক্রম আজও চালু হয়নি। ট্রমা সেন্টারটি চালুর জন্য যে জনবলের প্রয়োজন, তার পদ সৃজন আদৌ করা হয়নি। যার ফলে অবকাঠামোগত নির্মান সম্পন্ন হলেও চিকিৎসাসেবা চালু করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে ট্রমা সেন্টারটি চালু হবার সম্ভবনাও ফিকে হয়ে আসছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্মানকাজ শেষে ২০২২ সালের নভেম্বরে হওয়া ট্রমা সেন্টারটির নির্মান ব্যয় হয়েছিল প্রায় ১২ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের পদ সৃজনের কোন অনুমোদন না থাকায় নির্মান শেষেও চালু করা সম্ভব হয়নি ট্রমা সেন্টারটিরটি।
সংশ্লিসূত্রে জানা যায়, প্রতিটি ট্রমা সেন্টারে সাতজন পরামর্শক চিকিৎসক (কনসালট্যান্ট), তিনজন অর্থোপেডিকস সার্জন, দুজন অ্যানেসথেটিস্ট, দুজন আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তাসহ মোট ১৪ জন চিকিৎসক, ১০ জন নার্স এবং ফার্মাসিস্ট, রেডিওগ্রাফার, টেকনিশিয়ানসহ ৩৪টি পদ সৃজনের প্রস্তাব করা হয়েছিল। তবে তা আর আলোর মুখ দেখেনি আজও।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাস্তার পাশের ট্রমা সেন্টারের মূল ফটক খোলা। ভবনের ভেতরেও প্রবেশ করা যাচ্ছে অনায়াসে। সম্প্রতি কয়েক দফায় চুরি গেছে এসি, ফ্রিজ টেলিভিশন, সেনেটারী মালামাল, পানির মটরসহ দামী জিনিসপত্র। সন্ধ্যা নামলে মহাসড়কের পাশে ভুতুরে পরিবেশ এখন ট্রমা সেন্টারটি। দলবেঁধে মাদকসেবীসহ অপরাধীরা নিরাপদে এ স্থানে আড্ডায় বসেন।
স্থানীয়রা জানান, নির্মানকাজ শেষে একবার উদ্বোধন হলো, তখন সাজানো-গোছানো ছিল। এরপর আর কেউ আসেনি। অনেক আগে হঠাৎ হঠাৎ কর্মকর্তাদের আসতে দেখতাম। এরপর থেকে জনশূন্য ট্রমা সেন্টার। এখন মাদকসেবীদের আড্ডা বসে এখানে। রাতে পুরো ট্রমা সেন্টার অরক্ষিত থাকে। কোটি কোটি টাকা খরচ করে তৈরি করা এই হাসপাতাল আলোর মুখ দেখবে বলে আর আমাদের মনে হয় না।
স্থানীয় আব্দুল আল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি বলেন, হাসপাতালটি উদ্বোধন হয়েছে আড়াই বছর হলো। এখনো ট্রমা সেন্টারটি চালু হয়নি। সেন্টারটিতে এখন রক্ষনাবেক্ষণের লোকজন নেই। মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি হচ্ছে প্রতিদিন। আমরা দ্রুত হাসপাতাল চালুর দাবি জানাই।
গাড়ি চালক আবুল খায়ের বলেন, ঢাকা-ভাঙ্গা মহাসড়কে ট্রমা সেন্টার থাকা অত্যাবশ্যক বলে মনে করি। কারণ রাস্তায় যখন-তখন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সেক্ষেত্রে ট্রমা সেন্টার থাকলে অনেক প্রাণ বাঁচানো সম্ভব বলে মনে করি।
এক্সপ্রেসওয়েতে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যাও কম নয়। দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসার লক্ষ্যে ট্রমা সেন্টারটি মহাসড়কের পাশেই নির্মান করা হয়। তবে চিকিৎসাসেবা চালু না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন এই রুটে চলাচলরত পরিবহন চালক ও যাত্রীরা।
হাইওয়ে পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দুর্ঘটনায় ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়েতে ২২৩ টি দুর্ঘটনায় ২০৯ জন নিহত হয়েছেন।
মাদারীপুর সিভিল সার্জন ডা.শরীফুল আবেদীন কমল বলেন, শিবচরের ট্রমা সেন্টারটি এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি। আমি শুনেছি ওখানকার কিছু জিনিসপত্র চুরি হয়েছে।
ট্রমা সেন্টারটি চালু না হবার পেছনে রয়েছে জনবল সংকট। আমরা হাসপাতালটির হস্তান্তর পেয়েছি। কিন্তু এটি পরিচালনা করতে যে জনবল প্রয়োজন তা পাইনি। তবে আমরা কর্তৃপক্ষকে চাহিদা দিয়ে রেখেছি। আশা করছি শীঘ্রই জনবল পাওয়ার মাধ্যমে আমরা এ সংকট কাটিয়ে উঠতে পারব।