বাসস
  ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৫২
আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩:১৯

শেরপুর-ময়মনসিংহ রুটে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে মিনিবাস চালুর দাবি

শেরপুর-ময়মনসিংহ রুটে সড়ক দুর্ঘটনা। ফাইল ছবি

।। জাহিদুল খান সৌরভ।।

শেরপুর, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : শেরপুর-ময়মনসিংহ রুটে প্রতিদিনের সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে মিনিবাস চালুর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদের দাবি সড়কের প্রস্থ না বাড়লেও বেড়েছে অটোরিকশাসহ যানবাহন। কম দূরত্বের কারণে ঢাকাগামী কোনো বাসেও তাদের তোলা হয়না। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অটোরিকশাতেই যাতায়াত করতে হয় শেরপুর জেলার বাসিন্দাদের। 

শেরপুর-ময়মনসিংহ রুটে সিএনজিচালিত অটোরিকশার বেপরোয়া গতিতে প্রায়ই সড়কে ঘটছে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি। সড়কে নিয়ম না মানা, চালকদের অসতর্কতা আর অদক্ষতা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন যাত্রীরা। তাই সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি রোধে শেরপুর-ময়মনসিংহ রুটে মিনিবাস চালুর দাবি জানিয়েছেন তারা। 

গেল বছরের ১৩ নভেম্বর শেরপুরের নকলায় পাইস্কা বাইপাস মোড়ে সিএনজি চালিত অটোরিকশার সঙ্গে পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে প্রাণ হারায় অটোরিকশার চার যাত্রী। এ ঘটনার একমাস পর শেরপুরের ভাতশালায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে ঢাকাগামী বাসের সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ছয় জন। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটি)-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত এক বছরে শেরপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছে। এছাড়াও প্রতিদিন ছোটখাট দুর্ঘটনা লেগেই আছে। 

শেরপুর থেকে ময়মনসিংহের দূরত্ব প্রায় ৬৮ কিলোমিটার। কম দূরত্বের অজুহাতে ঢাকাগামী কোনো বাস ময়মনসিংহগামী যাত্রীদের নিতে চায় না। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই সিএনজি অটোরিকশা দিয়ে নকলা, ফুলপুর-ময়মনসিংহে যাতায়াত করতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। এতে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা।

যাত্রীরা বলছেন, ফিটনেসবিহীন যান, চালকদের অদক্ষতা ও ট্র্যাফিক আইন না মেনে সিএনজি ও অটোরিকশা চালানোই দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ। 

তবে সিএনজি চালকরা বলেন, বড় গাড়িগুলো সাইড না দেয়াতেই ঘটছে দুর্ঘটনা। এছাড়া ইচ্ছে করেই অনেক গাড়ি চাপা দেয় বলে অভিযোগ তাদের।

এই পথে নিয়মিত যাতায়াত করেন শ্যামল আহম্মেদ (৩২)। তিনি বাসসকে বলেন, ‘আমাদের চলাচলের জন্য সিএনজি ছাড়া কোনো উপায় নেই। কারণ স্বল্প দূরত্বের জন্য বাস আমাদের নিতে চায় না। আমাদের রাস্তাগুলো আগের রাস্তাই আছে। কিন্তু গাড়িতো অনেক বেড়েছে। সিএনজি চালকদের প্রশিক্ষণ দেয়া দরকার। পাশাপাশি মিনিবাস চালুর ব্যবস্থা করতে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।’

একই পথের নিয়মিত যাত্রী জাকির হোসেন (৩৪) বলেন, আমরা প্রায়ই ব্যক্তিগত এবং ব্যবসার কাজে ময়মনসিংহ যাই। অনেকে আবার জরুরি চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেলে যায়। কিন্তু শেরপুর থেকে ঢাকাগামী কোন বাস ময়মনসিংহের জন্য যাত্রী ওঠায় না। তখন বাধ্য হয়ে সিএনজি চালিত অটোরিকশা দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। এই মহাসড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা যে বেপরোয়াভাবে চলাচল করে তার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। দেখারও কেউ নেই। 

তিনি বলেন, শেরপুর-ময়মনসিংহ রুটের নিয়মিত যাত্রীদের সমস্যা ও নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে যথাযথ কর্তৃপক্ষ যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে মিনিবাস চালুর ব্যবস্থা করে এটাই আমাদের দাবি। না হলে প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিলে যুক্ত হবে আরো মানুষ। 

সিএনজি চালক হাশেম আলী (৩৫) বলেন, মহাসড়কে বড়বড় গাড়িগুলো আমাদের সিএনজি চালিত অটোরিকশাকে গাড়ি মনে করে না। যার জন্য বড় গাড়িগুলো একটু সুযোগ পেলেই মাথা ঠুকে দিয়ে চাপ দিয়ে চলে যায়। এতেই বড়বড় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে আমাদের কোন দোষ না থাকলেও আমাদের ঘাড়েই দায় এসে পড়ছে। 

শেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান ভূঁঞা বাসসকে বলেন, শেরপুর মহাসড়কে যেন অনিবন্ধিত গাড়িগুলো না চলে সেদিকে পুলিশের সার্বক্ষণিক নজরদারি আছে । বিভিন্ন সময় আমরা সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালকদের মহাসড়কে না ওঠার জন্য নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করে আসছি। এছাড়া মামলা এবং জরিমানা করে তাদের মিনিমাইজ করারও চেষ্টা করছি।

বিআরটি-এর শেরপুর জেলা শাখার সহকারী পরিচালক জি এম নাদির হোসেন বাসসকে বলেন, সিএনজি চালিত অটোরিকশা হাইওয়েতে চলা নিষেধ। সারাদেশে যে নিয়ম এখানেও একই নিয়ম। তারপরও কিছু কিছু জায়গায় দেখা যায় সিএনজি চলছে। তবুও আইন না মেনে যারা গাড়ি চালাচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে আমরা পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে মাঝে মাঝে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছি।