শিরোনাম
বিপুল ইসলাম
লালমনিরহাট, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস): আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসব ঘিরে লালমনিরহাটে বইছে উৎসবের আমেজ। জেলার পাঁচ উপজেলায় প্রতিমা তৈরিসহ নানা প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগর ও আয়োজকরা। দিন-রাত নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে তারা সাজাচ্ছেন পূজামণ্ডপ।
আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা।
পাঁচ দিনব্যাপী এই মহোৎসব শেষ হবে ২ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় মোট ৪৬৮টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে লালমনিরহাট সদরে ১৬২টি, আদিতমারীতে ১১৪টি, কালীগঞ্জে ৯১টি, হাতীবান্ধায় ৭২টি এবং পাটগ্রাম উপজেলায় ২৯টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গোৎসব উদযাপনের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন পূজা উদ্যাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে একাধিক মতবিনিময় সভা করছে। পাশাপাশি জেলা বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরাও মণ্ডপ পরিদর্শন করছেন এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রেখে উৎসব নির্বিঘ্ন করতে কাজ করছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার বেশির ভাগ মণ্ডপে প্রথম মাটির কাজ শেষে এখন দ্বিতীয় দফার কাজ চলছে। জেলা শহরের শ্রী গৌরিশংকর গোশালা সোসাইটি দুর্গা মন্দির, কালিবাড়ি সার্বজনীন দুর্গা মন্দির ও কাচারীবাড়ি সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরে প্রতিমা নির্মাণ ও সাজসজ্জার কাজ চলছে। এ ছাড়া বুড়িরদিঘী, কার্জীটারী, রাধাকৃষ্ণ সার্বজনীন মন্দির, বড়বাড়ী বাজার, বানিয়ার দিঘী, সাকোয়া মাসানকুড়া, ছড়ারপাড়, বনগ্রাম ও দুড়াকুটি দক্ষিণপাড়া সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরসহ গ্রামীণ পর্যায়ের বিভিন্ন মন্দিরে প্রতিমা নির্মাণ প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
একেকজন কারিগর ৫ থেকে ৬টি করে মন্দিরের প্রতিমা তৈরি করছেন। মন্দিরভেদে ৫০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা করে নিচ্ছেন তারা। প্রতিমা তৈরির অন্যান্য উপাদান, মাটি, বাঁশ কিংবা অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ করে মন্দির কর্তৃপক্ষ।
প্রতিমা শিল্পী সুনীল চন্দ্র জানান, মাটির কাজ অনেকটা শেষ হয়েছে এখন শুরু হবে রংতুলির আঁচড়।
প্রতিমাগুলো মনোমুগ্ধকর ও নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলতে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিয়ে কাজ করছেন। এ বছর ৫টি মণ্ডপের প্রতিমা তৈরি করছেন তিনি। নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ হবে বলে আশা তার।
বড়বাড়ী বাজার শিবকালী ও দুর্গা মন্দিরের সভাপতি নিমাই চন্দ্র পাল বলেন, প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় আমরা আনন্দঘন পরিবেশে দুর্গাপূজা উদযাপন করতে যাচ্ছি।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি হীরালাল রায় বলেন, প্রতিটি মণ্ডপে কাজ চলমান রয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের জেলা শাখার সভাপতি বাবু গুরুচরণ রায় বলেন, আশা করি প্রতি বছরের মতো এবারও শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে।
জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্র এ দেশে আর সফল হবে না। সনাতনী ভাইবোনেরা যেন নির্বিঘ্নে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন করতে পারেন, সে লক্ষ্যে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে। আমরা সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষ মিলে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলবো।
জেলা পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম জানান, শারদীয় দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি মণ্ডপে পুলিশের বিশেষ নজরদারি থাকবে এবং গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও সক্রিয়ভাবে কাজ করবেন।