বাসস
  ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২:৪২

চট্টগ্রামে জশনে জুলুসে জনস্রোত, উৎসবমূখর নগরী

ছবি : বাসস

চট্টগ্রাম, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হলো বিশ্বের বৃহত্তম মিলাদ শোভাযাত্রা ‘জশনে জুলুস’। 

আজ শনিবার সকাল থেকে হামদ, নাত, তাকবির, দরুদ শরিফ ও জিকিরে উৎসব মুখর ছিলো নগর। লাখো মানুষ নগরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুরাদপুর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে সমবেত হন।

এর মধ্যেই আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নগরের ষোলশহরে জড়ো হতে থাকেন নানা বয়সী মানুষ। বেলা বাড়তেই মানুষের উপস্থিতি প্রায় লাখ ছাড়িয়ে যায়। এরপর সকাল ৯টায় মাদ্রাসা সংলগ্ন আলমগীর খানকাহ থেকে যাত্রা শুরু করে জুলুসটি নগরের বিবিরহাট, মুরাদপুর, ষোলোশহর দুই নম্বর গেট, জিইসি মোড় এলাকা প্রদক্ষিণ করে একই পথে মাদরাসা মাঠে ফিরে আসে। সেখানে মাহফিল, জোহর নামাজ এবং দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি কামনায় বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।

শোভাযাত্রা চলাকালে ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর’, ‘নারায়ে রেসালত ইয়া রাসুলাল্লাহ (সা.)’সহ নানা স্লোগান, হামদ, নাতে রাসূল ও দরুদ পাঠে প্রকম্পিত হয় নগরীর আকাশ-বাতাস।

১৯৭৪ সাল থেকে প্রতিবছর ১২ রবিউল আউয়াল আনজুমান-এ-রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় চট্টগ্রাম নগরে এ জশনে জুলুস অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এবার ছিল ৫৪তম জশনে জুলুস।

৫৪তম এই জুলুসে নেতৃত্ব দেন সৈয়দ মুহাম্মদ সাবের শাহ। অতিথি ছিলেন শাহজাদা সৈয়দ মুহাম্মদ কাসেম শাহ ও সৈয়দ মুহাম্মদ মেহমুদ আহমদ শাহ। 

আয়োজক সংগঠন জানান, ১৯৭৪ সালে আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ (রহ.) এ জশনে জুলুসের প্রবর্তন করেন। এর পর থেকে প্রতি বছর আনজুমান-এ-রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় এ জুলুস আয়োজন করা হয়।

জশনে জুলুসে অংশ নিতে ভোর থেকে নগর ও জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লোকজন জামেয়া মাদ্রাসা মাঠে জড়ো হতে শুরু করেন। কেউ হেঁটে, আবার কেউ ট্রাক কিংবা পিকআপের ওপর চেপে জুলুসে অংশ নিয়েছেন। এ সময় সড়কের বিভিন্ন মোড়ে বিশুদ্ধ পানি, শরবত ও শুকনা খাবার বিতরণ করতে দেখা যায়। এ ছাড়া পতাকা, ব্যানার ও ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয়েছে সড়কগুলো।

জুলুস ঘিরে নগরে নিরাপত্তা জোরদার করে নগর পুলিশ। পাশাপাশি জুলুসের স্থানে গোয়েন্দা পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সংখ্যা বাড়ানো হয়। 

পুলিশ জানিয়েছে, জুলুস চলাকালে বিকল্প সড়কে যান চলাচলে নির্দেশনা দেওয়া ছিল। তা ছাড়া ছুটির দিন হওয়ার যানজট স্বাভাবিক ছিল। এ বছর নিরাপত্তার স্বার্থে জুলুসের পরিসর ছোট করা হয়েছে।

প্রতিবছর ষোলশহর জামেয়া মাদ্রাসা মাঠ থেকে শুরু হয়ে বিবিরহাট, মুরাদপুর, কাতালগঞ্জ, চকবাজার, জামালখান, কাজীর দেউড়ি, ওয়াসা, জিইসি, ২ নম্বর গেট ঘুরে দুপুরে জামেয়া মাদ্রাসা মাঠে শেষ হতো জুলুস। এবার ষোলশহর থেকে মুরাদপুর, ২ নম্বর গেট ও জিইসি মোড় ঘুরে একই পথে ফিরে যায় জুলুস।

আনজুমান-এ-রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের মুখপাত্র এডভোকেট মোছাহেব উদ্দিন বখতেয়ার বলেন, ‘পরিস্থিতি বিবেচনায় এবার জুলুসের রুট ছোট করা হয়েছে। প্রশাসন আমাদের অনুরোধ করেছেন জিইসি মোড় পর্যন্ত জুলুস করতে। আমরা তাদের অনুরোধে রুট ছোট করেছি, তবে এতে জুলুসের আবহ কমেনি।’

আনজুমান ট্রাস্টের সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, রাসুলের (সা.) আগমনের পনেরশ’ বছর পূর্তি এ বছর। একই সঙ্গে আনজুমান ট্রাস্ট শতবর্ষে পদার্পণ করেছে। বিশ্বের বৃহত্তম মিলাদ শোভাযাত্রা হিসেবে খ্যাত এ জুলুস এখন চট্টগ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ।