শিরোনাম
ঢাকা, ২৬ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : জুলাই জাতীয় সনদের সাফল্য নির্ভর করছে এর বাস্তবায়নের ওপর বলে উল্লেখ করে সুজন সম্পাদক ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, সংস্কারের পক্ষে ব্যাপক জনমত রয়েছে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি নোট অব ডিসেন্টের বাইরে এসে সংস্কার বাস্তবায়নে আন্তরিক হয়, তবে তা গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করবে এবং জনগণের আস্থা অর্জিত হবে।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক আয়োজিত ‘প্রস্তাবিত জুলাই সনদ ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক নাগরিক সংলাপে তিনি এ সব কথা বলেন।
এতে সভাপতিত্ব করেন সুজন-এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিচারপতি এম এ মতিন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক মহাহিসাব নিরীক্ষক ও অর্থ সচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার, বিআইজিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. মির্জা হাসান, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আসিফ মোহাম্মদ সাহান।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজন-এর জাতীয় কমিটির সদস্য একরাম হোসেন।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকার, রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন কমিশনের ওপর বর্তায়। কেবল ভিন্নমত জানানো নয়, সংস্কার বাস্তবায়নেই প্রকৃত অঙ্গীকার প্রমাণিত হবে।
সাবেক মহাহিসাব নিরীক্ষক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী বলেন, জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সর্বোত্তম উপায় গণভোট। এ ছাড়া প্রোক্লোমেশন করে সংসদে পাশও করা যেতে পারে। তবে উচ্চকক্ষ গঠনের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
মনির হায়দার বলেন, সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব নিয়ে দলগুলোর অনীহা হতাশাজনক। কমিশন নারীদের এক-তৃতীয়াংশ আসনে মনোনয়নের প্রস্তাব দিলেও রাজনৈতিক দলগুলো সম্মত হয়নি। তবে তিনি মনে করেন, কমিশন ছয় মাসে যে অগ্রগতি অর্জন করেছে তা আশাব্যঞ্জক।
ড. আসিফ মোহাম্মদ সাহান বলেন, বিপুল নোট অব ডিসেন্ট থাকায় জুলাই সনদ গণভোটে কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
ড. মির্জা হাসান বলেন, নাগরিকরা দেশের মালিক হলেও বাস্তবে তা প্রয়োগ হয় না। একসঙ্গে এতগুলো সংস্কার গণভোটে দেওয়া অত্যন্ত জটিল হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
মূল প্রবন্ধে একরাম হোসেন বলেন, ২০১৩ সাল থেকে সুজন জাতীয় সনদ প্রণয়নে কাজ করছে। ১৫টি নাগরিক সংলাপ ও জনমত জরিপ শেষে খসড়া তৈরি করে ঐকমত্য কমিশনের কাছে পেশ করা হয়েছে।
তিনি জানান, ইতোমধ্যে ৮৪টি মৌলিক বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে। প্রস্তাবিত সংস্কারের মধ্যে রয়েছে- প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ১০ বছরে সীমিতকরণ, একাধিক পদে না থাকার বিধান, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, সংসদের উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, বিরোধী দল থেকে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি নিয়োগ, বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল এবং নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ।
তবে হতাশার বিষয় হলো- নারীর ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব, সাংবিধানিক কাউন্সিলের মাধ্যমে নিয়োগ, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে গোপন ভোট এবং স্থানীয় সরকারে নারীর জন্য ঘূর্ণায়মান আসন সংরক্ষণের প্রস্তাব বাস্তবায়িত হয়নি।
একরাম হোসেন বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে রাজনৈতিক দলের সংলাপের মধ্য দিয়ে প্রণীত জুলাই জাতীয় সনদ নিঃসন্দেহে ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে এর স্বার্থকর্তা নির্ভর করবে বাস্তবায়নের ওপর। কোন সংস্কার সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে, কোনগুলো প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে এবং কোনগুলো দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য-তা পৃথক করা জরুরি।’