বাসস
  ১৬ আগস্ট ২০২৫, ১৬:৩৯

অফ সিজনের তরমুজ চাষে লাভবান সাতক্ষীরার কৃষক 

ছবি : বাসস

মো. আসাদুজ্জামান

সাতক্ষীরা, ১৬ আগস্ট ২০২৫ (বাসস) : কম খরচে দাম বেশি পাওয়ায় অফ সিজনের তরমুজ চাষে আগ্রহ বাড়ছে জেলার কৃষকদের। মৎস্য ঘেরের জমিতে মাচা পদ্ধতিতে ও কৃষি জমিতে সবজি চাষের পাশাপাশি তরমুজ চাষ করে ব্যাপক ফলন হওয়ায় সাতক্ষীরায় তরমুজ চাষে সম্ভাবনার নবদিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। এতে একই জমির বহু ব্যবহারে কৃষকের আয় যেমন কয়েক গুণ বাড়ছে, তেমনি দেশে তরমুজের চাহিদা মেটাতেও রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। 

তরমুজের বাইরের খোসা হলুদ বা কালো যেমনই হোক না কেন ভিতরে টকটকে লাল। সুস্বাদু ও মিষ্টি এই তরমুজ ঝুলছে মৎস্য ঘেরের মাচায় ও কৃষি জমিতে। তবে, অসময়ের এই দৃষ্টিনন্দন তরমুজের দাম একটু বেশি। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় চাষ হচ্ছে এই অসময়ের তরমুজ। কম খরচে  বেশি লাভবান হওয়ায় এবং প্রচুর ফলন হওয়ায় এ অঞ্চলের অনেক কৃষক এই তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। 

জেলা কৃষি-সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় এবছর ৭৬ হেক্টর জমিতে অসময়ের এই তরমুজ চাষ হয়েছে । বাংলাদেশে সাধারণত ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত আবহাওয়া তরমুজ চাষের উপযোগী। বীজ বোনার জন্য ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম পক্ষ সর্বোত্তম। সেই বিবেচনায় এখন তরমুজ চাষের জন্য অফ সিজন। তবে এই বিশেষ জাতের তরমুজের বীজ জুলাই মাসে বপন করতে হয়। এক মাসের মধ্যেই ফলন পাওয়া যায়। তরমুজ চাষিরা একবার বীজ বুনে দুই থেকে তিনবার ফল তুলতে পারেন। 

দেবহাটা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এই উপজেলায় এবছর ৫০ জন কৃষককে অসময়ের এই তরমুজের বীজ প্রদান করা হয়। যার মধ্যে উন্নত জাতের সুপ্রিম হানি (হলুদ), তৃপ্তি (হলুদ), ব্লাক বেবি (কালো), সুগারকুইন ও বাংলা লিংক তরমুজ রয়েছে। এই তরমুজ চাষের জন্য আলাদা জমির প্রয়োজন হয় না। মৎস্য ঘেরের বেড়িতে খুব সহজে এটা চাষ করা যায়। অল্প দিনে লাভের মুখ দেখায় প্রতিবছর চাষের পরিমাণ বাড়ছে।  

চলতি বছর এ উপজেলার ৩টি প্রদর্শনী খামারে ইতোমধ্যে ব্যাপক ফলন এসেছে। প্রতি বিঘা জমিতে ১০০ গ্রাম থেকে ১২০ গ্রাম বীজ রোপণ করা যায়। অসময়ের তরমুজ বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হচ্ছে। মৎস্যচাষিরা মাছের পাশাপাশি তাদের ঘেরের  বেড়িতে এই তরমুজ চাষ করছেন।

উপজেলার টিকেট গ্রামের তরমুজ চাষি বিশ্বনাথ টাপালী জানান, তিনি তার ৫ বিঘা জমির মৎস্য ঘেরের  বেড়িতে এবছর প্রথম হলুদ রঙের তরমুজ চাষ করেছেন। কৃষি অফিস থেকে বীজ, সার ও কীটনাশক দেয়া হয়েছে। এছাড়া মাচা তৈরির জন্য নগদ টাকাও দেওয়া হয়েছে। তার সর্বোচ্চ খরচ হয়েছে ১০  থেকে ১২ হাজার টাকা। এরই মধ্যে এক লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি হয়েছে।  আরো দুইবার ফলন তোলা যাবে। 

তিনি বলেন, আমি মোট ৬ বিঘা জমির বেড়িতে তরমুজ লাগিয়েছি। আশা করি তরমুজ বিক্রি করে সারা বছরের জমির খরচের টাকা উঠে আসবে।

শশাডাঙ্গা গ্রামের যুবক কৃষক আবুল কাশেম (৩৫) জানান, তিনি ৪০ বিঘা জমির মৎস্য ঘেরের  বেড়িতে অসময়ের এই তরমুজ চাষ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে মোট ৫৭ হাজার টাকা। ইতিমধ্যে তিনি বিক্রি করেছেন দেড় লাখ টাকার তরমুজ। তিনি সেখান থেকে আরো দেড় থেকে দুই লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করবেন বলে আশাবাদী। তিনি আরো জানান, এই তরমুজ দেখতে যেমন চমৎকার, খেতেও অনেক মিষ্টি। বাজারে এর অনেক চাহিদা রয়েছে।

দেবহাটা উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা মোস্তাক আহম্মেদ জানান, প্রথম দিকে মাঠ পর্যায়ে অসময়ের এই তরমুজ চাষে আগ্রহ না থাকলেও এখন চাষিদের মাঝে সাড়া ফেলেছে। অল্প খরচে অধিক লাভবান হওয়ায় চাষিরা এর প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। কৃষি অফিসের সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় মৎস্য ঘেরের বেড়ি ও পতিত জমি কৃষির আওতায় আনার প্রাণপণ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। 

তিনি আরো জানান, হলুদ তরমুজ চাষে কৃষক আগ্রহী হওয়ার প্রধান কারণ মাত্র দুই মাসে এই তরমুজ বিক্রয় উপযোগী হয়। সাতক্ষীরার মাটি তরমুজ চাষের জন্য বেশ উপযোগী। দেশের উর্বর মাটিকে ব্যবহার করে কৃষকরা ফসল ফলিয়ে সচল রেখেছে দেশের গ্রামীণ অর্থনীতি। ফলে চাকরির পেছনে বৃথা সময় ব্যয় না করে যদি কৃষিকাজে শিক্ষিত তরুণরা এগিয়ে আসেন তাহলে নিজে স্বাবলম্বী হবে এবং দেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদা মিটাতে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।

দেবহাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শওকত ওসমান বাসসকে বলেন, বিগত দিনে মাছের ঘেরের বেড়ি চাষের আওতায় ছিল না। কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ওই জমিগুলো চাষের উপযোগী করা হয়েছে।

বিশেষ করে সবজি ও অসময়ের তরমুজ চাষে কৃষকরা অধিক লাভবান হচ্ছেন। আর এই চাষের জন্য কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে বীজ, সার সরবরাহ ও নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। কোন জমি যাতে অনাবাদি না থাকে সে জন্য কৃষি দপ্তর থেকে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।  

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সাইফুল ইসলাম বাসসের সাথে আলাপকালে  বলেন, জেলার ৭টি উপজেলার ৭৬ হেক্টর জমিতে অসময়ের (অফ-সিজনের) এই তরমুজের আবাদ হয়েছে। যা গতবারের তুলনায় ২৪ হেক্টর বেশি। এটি একটি লাভজনক ফসল। প্রতিবিঘা সমতল জমিতে এই তরমুজ চাষে খরচ হয় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। যা বিক্রি হয় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত।