বাসস
  ১৬ আগস্ট ২০২৫, ১৩:৪৬

সেতুর সংযোগ সড়ক ভেঙে যাওয়ায় জীবনের ঝুঁকিতে শিশু শিক্ষার্থীরা 

ছবি : বাসস

জীতেন বড়ুয়া

খাগড়াছড়ি, ১৬ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস): জেলা সদরের কমলছড়ি ঘাটপাড়া থেকে গুগুড়াছড়ি সড়কের একে পাড়া এলাকার একমাত্র সেতুর সংযোগ সড়কের ধারক দেয়াল ভেঙে গেছে। অতিবৃষ্টির কারণে মাটি সরে গিয়ে সেতুটিও ভেঙে যাওয়ার পথে। এ অবস্থায় সেতুটির সংযোগ সড়কে বাঁশ দিয়ে সাঁকো তৈরি করে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে শিশু শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দারা। বিপজ্জনক এই সংযোগ সড়ক নির্মাণে দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সত্তর দশকে গুগুড়াছড়ি থেকে খাগড়াছড়ি সদরের একে পাড়া এলাকার এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এই বর্ষায় টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে খাগড়াছড়ি সদরের কমলছড়ি ঘাট পাড়া থেকে গুগুড়াছড়ি সড়কের একে পাড়া এলাকার এই সেতুটির সংযোগ সড়কের ধারক দেয়াল ভেঙে মাটি সরে গেছে। এতে যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে এলাকার গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুটি। বর্তমানে সেতুটির সংযোগ সড়কে বাঁশের সাঁকো তৈরি করে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে একে পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় বাসিন্দারা। 

তারা জানান, সেতুটির সংযোগ সড়কের মাটি আগেও সরে গিয়েছিল। স্থানীয়রা সেখানে মাটি ভরাট করে কোনোমতে চলাচল করতো। কিন্তু এই বর্ষায় টানা বর্ষণের কারণে পাহাড়ি ঢলে সেতুটির সংযোগ সড়কের ধারক দেয়াল ভেঙ্গে গেছে। বর্তমানে এ সড়ক দিয়ে মালামাল আনা-নেয়াসহ চলাচল করে ৮টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ। এখন কোনোমতে বাঁশের সাঁকো তৈরি করে চলাচল করছে তারা। তবে তাদের ভয় হয় ছোট ছোট স্কুলগামী শিশুদের জন্য। যে কোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে দুঘর্টনা। তাই জনস্বার্থে এই সেতুর সংযোগ সড়কটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়েছে স্থানীয় বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। 

একে পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী নিশিতা চাকমা, কমল ত্রিপুরা, কালায়ন চাকমা ও সোমা চাকমা। তারা প্রতিদিন এই ব্রিজ দিয়ে স্কুলে যাতায়াত করেন। বাসসের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ায় আমাদের স্কুলে যেতে ভয় লাগে। অনেক সময় ছড়াতে পানি কম থাকলে আমরা ব্রিজের নীচ দিয়ে যাতায়াত করি। এতে আমাদের খুব কষ্ট হয় । ভয় লাগে। ছড়ায় যদি পানি বেশি থাকে তাহলে আমরা স্কুলে যেতে পারি না। অনেক সময় শিক্ষকরা আমাদের হাত ধরে ব্রিজ পার করে দেয়।

এলাকার বাসিন্দা অসিত বরণ চাকমা জানান, ব্রিজটি অনেক পুরোনো । আমরা গ্রামের মানুষ নিজেদের টাকায় দুই বার ব্রিজটির ধারক দেয়াল মেরামত করেছি । এবারের অতিবৃষ্টিতে ছড়ার পানি বেড়ে যাওয়ায় ব্রিজটি পারাপারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে ।

একে পাড়া এলাকার কৃষক শান্তি বিজয় চাকমা বলেন, এই ব্রিজ দিয়ে আরো প্রায় ৮ টি গ্রামের ২০ হাজার মানুষ  যাতায়াত করে। ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ায় এলাকার উৎপাদিত কৃষিপণ্যসমুহ বাজারজাত করতে আমাদের খুব কষ্ট হয়। তাছাড়া গ্রামবাসী ও স্কুল শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে । তাই অতিসত্বর ব্রিজটি পুনর্নির্মাণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

একে পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অপরিচিতা চাকমা বাসসকে বলেন, ভয় হয় ছোট ছোট স্কুলগামী শিশুদের জন্য। যে কোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে দুঘর্টনা। স্কুলের অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে সেতু পার হয়ে স্কুলে আসতে হয়। তাই তাদের জন্য সবসময় টেনশন হয়। শিশুদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই যত দ্রুত সম্ভব সংযোগ সড়কটি সংস্কার করার দাবি জানান তিনি। 

১ নং খাগড়াছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জ্ঞান দত্ত ত্রিপুরা বাসসকে বলেন, ‘ব্রিজটির বিষয়ে কয়েক মাস আগেই স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)কে অবগত করা হয়েছে। ব্রিজটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ । শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই এপথে চলাচল করছেন। জনস্বার্থে এটি দ্রুত সংস্কার করা জরুরি।’ 
এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী তৃপ্তি শংকর চাকমা বাসসকে বলেন, ‘গুগুড়াছড়ি থেকে সদরের  রাস্তার  ব্রিজটা অনেক আগে থেকে ভাঙা। ব্রিজটির অ্যাপ্রোচ- এর রিটার্নিং ওয়াল ভেঙে গিয়েছে। দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে টেন্ডার হবে বলে আশা করছি।’