বাসস
  ১০ আগস্ট ২০২৫, ১০:১০

বিদ্যুৎ সরবরাহ স্থিতিশীল রাখা সরকারের অগ্রাধিকার : বিদ্যুৎ উপদেষ্টা

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। ফাইল ছবি

ঢাকা, ১০ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : দেশব্যাপী বিদ্যুতের ব্যবহার ক্রমাগত বৃদ্ধি সত্ত্বেও অন্তর্বর্তী সরকার বর্তমানে সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্থিতিশীল রাখার ব্যাপারে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সম্প্রতি বাসস’কে বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর সারাদেশে স্থিতিশীল বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতের ব্যাপারে অগ্রাধিকার দেয়ায় এখন বিদ্যুৎ সরবরাহ অনেকটাই স্থিতিশীল। এখন আমরা বিদ্যুতের সাশ্রয়ী মূল্য নিশ্চিতের ব্যাপারে কাজ করছি ।’ 

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সারাদেশের গ্রাহকদের স্বস্তি দিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে সাশ্রয়ী করার ব্যাপারে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতাভিত্তিক পেমেন্টের ধারা বাতিল করে স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের (আইপিপি) সঙ্গে চুক্তি পর্যালোচনা করেছে। আগে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ না করা সত্ত্বেও বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার জন্য অর্থ প্রদান করতে বাধ্য ছিল সরকার।

বিদ্যুৎ উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ বাতিল করেছে। এটি কুইক রেন্টাল আইন নামেও পরিচিত।’

তিনি আরো বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যয় কমাতে আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এখন বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনাকারীদের সঙ্গে শুল্ক কমানোর ব্যাপারে আলোচনা চলছে।’

বিদ্যুৎ উপদেষ্টা বলেন, ‘২০১০ সাল থেকে এ দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের কোনো অনুসন্ধান হয়নি। পতিত আওয়ামী লীগ সরকার গ্যাস অনুসন্ধান না করে আমদানিতে উৎসাহিত করেছিল।’

তবে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর স্বতন্ত্রভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী এবং যৌথ উদ্যোগে চলা বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে প্রদত্ত সক্ষমতাভিত্তিক পেমেন্ট পর্যালোচনার জন্য দুটি কমিটি গঠন করেছে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) জানিয়েছে, এনডব্লিউপিজিসিএল, এপিএসসিএল, ইজিসিবি, আরপিসিএল এবং বিআরপিএলের অধীনে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ২৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে তাদের চুক্তি পুনর্মূল্যায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এসব পদক্ষেপের ফলে সরকারের বার্ষিক ২,৬০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুসারে, এই সংস্কারগুলোর কারণে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।

দেশের জাতীয় বাজেট উপস্থাপনের সময় অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সামগ্রিক ব্যয় ১০ শতাংশ কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এতে ফলে ১১০ বিলিয়নেরও বেশি টাকা সাশ্রয় হবে।’

বর্তমানে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৩০ হাজার ৭৮৭ মেগাওয়াট। যেখানে দেশে  বিদ্যুতের চাহিদা আনুমানিক ১৮ হাজার মেগাওয়াট।

সরকারের ব্যয় হ্রাস প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) পুনর্বিবেচনার ক্ষেত্রে স্বতন্ত্রভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী ও যৌথ উদ্যোগের মধ্যে সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার রেজাউল করিম।

সরকার স্থানীয় গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি ‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (বাপেক্স)’ সক্ষমতা বৃদ্ধির ব্যাপারে জোর দিয়েছে। বাপেক্স-এর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

চলতি বছরের মধ্যে দেশীয় উৎস থেকে প্রতিদিন ৬৪৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ এবং ২০২৮ সালের মধ্যে কূপ থেকে আরো ১৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলনের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা আধুনিকীকরণের অংশ হিসেবে মহানগর এলাকায় ভূগর্ভস্থ সরবরাহ লাইন এবং সাবস্টেশন স্থাপনের কাজ চলছে, যা বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থাকে আরো স্থিতিশীল ও কার্যকর করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এছাড়া, বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে সাশ্রয়ী মূল্যে ৪০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানির জন্য গত বছরের ৩ অক্টোবর নেপালের সঙ্গে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার আওতায় একটি চুক্তি করা হয়।

সরকার আশা করছে, ২,৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু  জাতীয় গ্রিডে ১,২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে।