বাসস
  ১০ আগস্ট ২০২৫, ০৯:৫৯
আপডেট : ১০ আগস্ট ২০২৫, ১৬:২৪

অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাফল্য

ঢাকা, ১০ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী বিশ্ববরেণ্য অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর নেতৃত্বে বাংলাদেশে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান দায়িত্ব গ্রহণের পর তার মন্ত্রণালয়ে উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম সফলভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।

বিগত এক বছরে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম নিয়ে তিনি জাতীয় বার্তা সংস্থা বাসসকে জানান, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অর্জনগুলো হলো- ১১ দশমিক ৮০ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ, ১০৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার বাঁধ পুনর্নির্মাণ, ২৫০ কিলোমিটার নিষ্কাশন খাল পুনঃখনন, ২২ টি পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো নির্মাণ ও ৩৩ টি পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো পুনঃনির্মাণ এবং মেরামত এবং ১২৩ কিলোমিটার তীর সংরক্ষণ।

এছাড়া ১৩৬ কিলোমিটার সেচ খাল পুনঃখনন এবং ১১৪ টি সেচ অবকাঠামো নির্মাণ এবং পুনর্নির্মাণ।

উপকূলীয় বাঁধ মেরামত ৩৩ দশমিক ৫৫ কিলোমিটার বাঁধ মেরামত ও উঁচুকরণ এবং বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ ৬৬০ কিলোমিটার। বাস্তবায়নাধীন উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে ৫ টি মধ্যবর্তী মূল্যায়ন, ভৌত বা গাণিতিক মডেলের মাধ্যমে সমীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। ২ টি ভৌত বা গাণিতিক মডেলের মাধ্যমে সমীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা, বিভিন্ন সংস্থা থেকে পাওয়া প্রস্তাবের শতভাগ প্রকল্পের পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা বা ওয়াটার রিসোর্সেস প্ল্যানিং অর্গানাইজেশনের (ওয়ারপো) ক্লিয়ারেন্স প্রদান।

বিগত এক বছরে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উল্লেখযোগ্য সাফল্য :

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দেশের ৮ বিভাগ এবং উল্লেখযোগ্য জেলাসমূহের নদ-নদী দূষণ ও দখলমুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ফেনী জেলাকে বন্যা মুক্ত এবং নদী ভাঙন হতে রক্ষাকল্পে একটি বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন। তিস্তা নদীর অতি ভাঙন কবলিত ২০ কিলোমিটার এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে মেরামত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশের নদ-নদীর প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশ করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, যশোরের ভবদহ এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে আমডাঙ্গা খাল খননের উদ্যোগসহ জরুরি ভিত্তিতে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং সিটি কর্পোরেশনগুলোর সমন্বয়ে ঢাকা শহরের অভ্যন্তরে ১৯ টি খাল খনন ও দূষণ মুক্তকরণের কার্যক্রম চলমান। বিভিন্ন বৈদেশিক দাতা সংস্থার সঙ্গে ঢাকার চারপাশের ৪ টি নদী দখল এবং দূষণমুক্ত করণের কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। গণশুনানির মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতিটি বিভাগে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) এবং পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থাকে (ওয়ারপো) অধিদপ্তরে রূপান্তরিত করার কাজ চলমান।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর গত এক বছরের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৯৯ টি প্রকল্পের আওতায় নদী তীর সংরক্ষণ, বাঁধ নির্মাণ ও পুনরাকৃতিকরণ, নিষ্কাশন খাল খনন ও পুনঃখনন, পানি নিয়ন্ত্রণ কাঠামো নির্মাণ, পুনর্নির্মাণ, সেচ খাল খনন ও পুনঃখনন, সেচ অবকাঠামো নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ ইত্যাদি কাজ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বন্যা, জলাবদ্ধতা ও নদী ভাঙন হতে জনগণের জানমাল রক্ষাসহ কৃষিকাজে সেচ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে।

সূত্র আরো জানায়, গত একবছরে উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমে বিবরণে জানা যায়, ঢাকা বিভাগ ছাড়া অন্যান্য সাতটি বিভাগের ৮ টি নদীর দূষণ, দখল ও পুনরুজ্জীবিতকরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ। ঢাকার চারপাশের নদ-নদী দূষণমুক্তকরণ, প্রতিবেশ পুনরুদ্ধারকরণ ও ব্লু নেটওয়ার্ক স্থাপন, গোরান চট বাড়ি ও তুরাগ সুরক্ষা, সংরক্ষণ, পানির গুণগত মানোন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধন। মূসাপুর রেগুলেটর পুনর্নির্মাণ প্রক্রিয়া চলমান এবং ফেনী জেলার বন্যা ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা। সারা দেশের খালের তালিকা নির্ধারণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ, খরাপ্রবণ উত্তর ও উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের ভূপরিস্থ পানি ব্যবহারের মাধ্যমে সেচ সম্প্রসারণ, দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে একটি করে নদী দূষণমুক্তকরণ, বুড়িগঙ্গা রিভার রিস্ট্রোরেশন, ঢাকা বিভাগ ছাড়া সাত বিভাগের ৮ টি নদীর দূষণ, দখল ও পুনরুজ্জীবিতকরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয় প্রকল্পের নাম ও সময় নির্ধারণে যশোর জেলার ভবদহ এলাকার নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নতি এবং বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শিবসা ও পশুর নদীর অববাহিকার পলি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রণয়ন করার জন্য (২০২৫-২২৬) সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের আওতায় ইতঃপূর্বে স্থাপিত ‘হাইড্রোমিটিরিওলজিক্যাল’ গেজসমূহ সচল রাখার লক্ষ্যে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাৎসরিক রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি সম্পাদন। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ বিষয়ক পূর্বের ওয়েবসাইট (www.ffwc.gov.bd)

আপগ্রেডেশনের মাধ্যমে বন্যা পূর্বাভাস বার্তার প্রচার ব্যবস্থা আধুনিকায়ন করা হয়েছে। নতুন ওয়েবসাইটে জিআইএস বেজড ম্যাপ, কালার বেজড ফ্লাড অ্যালার্ট ম্যাপ, ফ্লোপাথ ইত্যাদি নতুন ফিচার সংযোজন করা হয়েছে।

আঞ্চলিক সংস্থা ‘আরইএমইএস’ এর কারিগরি সহযোগিতায় দেশের প্রধান আকস্মিক বন্যা ঝুঁকিপ্রবণ নদীসমূহের জন্য প্রান্তিক বৃষ্টিপাত (রেইনফল থ্রেচহোল্ড) ভিত্তিক আকস্মিক বন্যা পূর্বাভাস ব্যবস্থা প্রস্তুতকরণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ মডেলটি আকস্মিক বন্যা পূর্বাভাস ব্যবস্থায় নতুন সংযোজন যা, চলতি বছরে কার্যকর হয়েছে। বন্যা উপদ্রুত এলাকার জনগণকে পূর্বাভাস ও সতর্কতা বিষয়ক টোল ফ্রি এস এম এস প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর (ডিডিএম) এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বিডব্লিউডিবি) সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নেপালে অবস্থিত আন্তর্জাতিক সংস্থা দি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেইন ডেভেলপমেন্ট (আইসিআইএমওডি) এর আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় নেচার-বেসড সলিউশন এবং কমিউনিটি বেসড ফ্লাড আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম বাস্তবায়নের পাইলট কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। আইসিআইএমওডি এর কারিগরি সহযোগিতায় ব্রহ্মপুত্র নদ নিয়ে ব্রহ্মপুত্র রিভার বেসিন নেটওয়ার্কসহ নানা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।