বাসস
  ০৭ আগস্ট ২০২৫, ২০:১৭

দুবাই থেকে তথ্য আসে হোয়াটসঅ্যাপে, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে নামার পর সর্বস্ব লুট করে চক্র

ছবি : বাসস

চট্টগ্রাম, ৭ আগস্ট ২০২৫ (বাসস) : কোন প্রবাসী শিগগিরই দেশে ফিরবেন, বাড়ি কোথায়, ছবি, কবে ফিরবেন এবং ফ্লাইট কখন- হোয়াটসঅ্যাপে এসব গোপন তথ্য চট্টগ্রামের একটি চক্রের কাছে পাঠান দুবাইয়ে থাকা আরেক সদস্য। 

চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে নামতেই শুরু হয় অনুসরণ। সুযোগ বুঝে নির্জন জায়গায় পৌঁছাতেই লুটে নেওয়া হয় ওই প্রবাসীর কাছে থাকা মূল্যবান মালামাল। ওইসব মালামাল তারা বিক্রি করতো একটি দোকানে। সেই অর্থ ভাগাভাগি করে নিতো চক্রের সদস্যরা। 

সম্প্রতি এই চক্রের শিকার হন মোহাম্মদ সামসু উদ্দিন নামে এক দুবাই প্রবাসী। তার করা মামলায় নড়েচড়ে বসে নগর পুলিশ। অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় চক্রের ৭ সদস্যকে। উদ্ধার করা হয় লুট করা মালামালও। 

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রামের দামপাড়া পুলিশ লাইনসের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) পশ্চিম বিভাগের উপ-কমিশনার হোসাইন মোহাম্মদ কবির ভূঁইয়া।

গ্রেপ্তাররা হলেন, মো. মনির উদ্দিন (৩৩), সৈয়দ মজিবুল হক (৪৭), মো. আলীম হাওলাদার জাবেদ (৩২), মো. হাসান (৩০), মো. রুবেল (২৭), মো. সুমন (২৬) ও মো. ইমরান মাহামুদুল প্রকাশ ইমন (২৫)।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মোহাম্মদ সামসু উদ্দিন গত ২১ জুলাই দুবাই থেকে চট্টগ্রামের শাহ-আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে ফিরে একটি সিএনজি ভাড়া করেন। হালিশহর থানার সাগরপাড় লিংক রোড বারুনীঘাটস্থ ডগিরখাল ব্রিজের কাছে পৌঁছালে একটি কালো রংয়ের মাইক্রোবাস সিএনজির পথ রোধ করে থামিয়ে দেয়। মাইক্রোবাস থেকে নেমে আসা ৩ জন ডাকাত বিদেশ থেকে নিয়ে আসা তার স্বর্ণালংকার, মোবাইল, নগদ টাকা ও অন্যান্য মালামাল জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়। যেসব মালামালের মূল্য আনুমানিক ১৯ লাখ ৮২ হাজার টাকা। পরে ২৩ জুলাই হালিশহর থানায় ভুক্তভোগী একটি মামলা করেন।

উপ-কমিশনার হোসাইন মোহাম্মদ কবির ভূঁইয়া জানান, প্রথমেই মাইক্রোবাসের নম্বর দিয়ে মালিকানা যাচাই করে গাড়িটি নগরের পাঁচলাইশ থানা এলাকা থেকে জব্দ করা হয়। এরপর গত ২৩ জুলাই নগর ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

গ্রেপ্তার সৈয়দ মজিবুল হকের বরাত দিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা আরো জানান, মজিবুল দুবাই প্রবাসী ফয়সালের কাছ থেকে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের আগমনের তারিখ, যাত্রীদের ছবিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে। এরপর পরিকল্পনা করে আসামি মনির অন্য আসামিদেরকে নিয়ে দেশে আসা যাত্রীদের মালামাল ডাকাতি করে। লুটের মালামালের একটি অংশ তারা মজিবুলকে দেয়। 

‘আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে লুণ্ঠিত মালামালের বিষয়ে একে অন্যের ওপর দোষ চাপিয়ে দিচ্ছিল’ উল্লেখ করে ডিসি কবির জানান, গত ৫ আগস্ট আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তারা জানায়, মামলার ঘটনার পর আসামি আলীম হাওলাদার জাবেদ, মো. হাসান ও পলাতক আসামি সাদ্দাম ও রাসেল চান্দগাঁও থানাধীন পাঠানিয়া গোদা এলাকার একটি দোকানে ছিনতাইকৃত স্বর্ণালংকার বিক্রি করে। পরে টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। সেই তথ্যের ভিত্তিতে ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫ ভরি ১১ আনা স্বর্ণ এবং দুটি দামি মোবাইল উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও পলাতক আসামি ইমন ও সুমনকে সেসময় গ্রেপ্তার করা হয়। 

তিনি আরো বলেন, ‘আসামি সৈয়দ মজিবুল হক, মো. হাসান, মো. রুবেলের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার, অস্ত্র এবং নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের একটি করে মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’