শিরোনাম
কুমিল্লা, ২১ জুলাই, ২০২৫ (বাসস): মুক্তিযোদ্ধাদের দাবির প্রেক্ষিতে কুমিল্লায় বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের ম্যুরাল পুনঃস্থাপন করেছে জেলা প্রশাসন।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রূপকার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের স্মরণে কুমিল্লা কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশে নির্মিত ম্যুরালটি গত ২৫ জুন দুর্বৃত্তরা ভাঙচুর করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ম্যুরাল ভাঙার ছবি ছড়িয়ে পড়লে মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন মহল ক্ষোভ প্রকাশ করে।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার ম্যুরালটি পুনঃস্থাপনের উদ্যোগ নেন।
নগরের রাজবাড়ি এলাকায় কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশে বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের পরিবারের উদ্যোগে ও জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে একটি শহিদ মিনার এবং ম্যুরাল স্থাপন করা হয়।
২০১৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এটি উদ্বোধন করেন কুমিল্লার সেসময়কার জেলা প্রশাসক হাসানুজ্জামান কল্লোল ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের স্ত্রী বুলি ইসলাম।
ম্যুরালের পাশেই রফিকুল ইসলামের পৈত্রিক বাড়ি। গত ২৫ জুন রাতে কে বা কারা বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের ম্যুরালটি ভাঙচুর করে।
ভাঙচুরের পর বিষয়টি কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার এর নজরে আসা মাত্রই তিনি তাৎক্ষণিক সংস্কারের নির্দেশ দেন। তার উদ্যোগে এবং জেলা পরিষদের অর্থায়নে শহিদ মিনার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের ম্যুরালটি সংস্কার করা হয়েছে।
জানা যায়, ১৯৯৮ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি রফিকুল ইসলাম জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব কফি আনানের কাছে একটি চিঠি লেখেন। চিঠিতে তিনি ১৯৫২ সালে ভাষা শহিদদের অবদানের কথা উল্লেখ করে ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতির প্রস্তাব করেন।
পরবর্তীতে রফিকুল ইসলাম তার সহযোদ্ধা আবদুস সালামকে সঙ্গে নিয়ে ‘মাদার ল্যাংগুয়েজ লাভার্স অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ নামের একটি সংগঠন গড়ে তোলেন । সংগঠনটির পক্ষে অন্য সদস্য রাষ্ট্রের সমর্থন আদায়ে কাজ শুরু করেন তিনি।
এরই প্রেক্ষিতে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেসকো জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে জাতিসংঘের সদস্য দেশসমূহে যথাযথ মর্যাদায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়ে আসছে।
গৌরবময় এই অবদানের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম ২০০১ সালে ‘মাদার ল্যাংগুয়েজ লাভার্স অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ একুশে পদক লাভ করেন। তিনি দীর্ঘদিন ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে ২০১৩ সালের ২১ নভেম্বর কানাডার একটি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
জেলা প্রশাসক আমিরুল কায়সার বলেন, বেশ কয়েক মাস ধরেই স্থাপনা দুটি ভাঙা অবস্থায় ছিল এবং এলাকাবাসীর ধারণা, মাদকাসক্ত ছিন্নমূল ব্যক্তিরা লোহার স্তম্ভগুলো ভেঙে নিয়ে গিয়েছিল। এ ঘটনায় মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থাপনার এমন দুরবস্থা দেখে অনেকেই হতাশা ব্যক্ত করেছিলেন। আমাদের নজরে আসা মাত্রই দ্রুততম সময়ে তা পুনঃস্থাপন করা হয়েছে।