বাসস
  ২০ জুলাই ২০২৫, ১২:১৫

ভোলার উপকূলীয় সমুদ্র তলদেশের ডুবোচর নদীতে মাছ প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করছে

ছবি: বাসস

\ আল-আমিন শাহরিয়ার \ 

ভোলা, ২০ জুলাই ২০২৫ (বাসস) : উপকূলীয় ভোলার মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীতে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে না বিভিন্ন প্রজাতির মাছসহ কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। বুক ভরা আশা নিয়ে নদীতে নেমেও হতাশ হয়ে ফিরছেন জেলেরা। ভরা মৌসুমে দীর্ঘদিন মাছ না পাওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটছে তাদের। নদীর পাড়ে নৌকা নোঙর করে অলস সময় পার করছেন তারা। নদীতে মাছ না থাকায় বাজারে পুকুর-বিলের মাছের দাম চড়া। ফলে এর প্রভাব পড়েছে স্থানীয় অর্থনীতিতেও। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভোলার উপকূলীয় সমুদ্র তলদেশে রয়েছে শত শত ডুবোচর। পানি প্রবাহ কম থাকলে এই চর নদীতে মাছ প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে।

জেলার মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সাগর ও নদীর মধ্যবর্তী স্থানে শতাধিক ডুবোচরে পানি প্রবাহে ব্লক সৃষ্টি হয়েছে। তাই ভরা মৌসুমেও নদীতে মাছ আসতে পারছে না। পানি আরো বাড়লে নদীতে মাছ আসতে শুরু করবে। 

ভোলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত একটি দ্বীপ জেলা। বঙ্গোপসাগর, মেঘনা ও তেতুলিয়া নদী বেষ্টিত এই দ্বীপের মোট আয়তন ৩,৪০৩.৪৮ বর্গকিলোমিটার।

জেলার ৭টি উপজেলা প্রায় ১৭,৭৬,৩১৮ জন মানুষের বাস। উপজেলাগুলো হলো; ভোলা সদর, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যাশন এবং মনপুরা। 

এই জেলার কয়েক লাখ মানুষ কোনো না কোনোভাবে সাগর ও নদীর মৎস্য আহরণের উপর নির্ভরশীল। ভরা মৌসুমে এ উপকূলের নদনদী থেকে মাছ ধরে স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়েও এখানকার মাছ অন্য দেশেও রপ্তানি হয়। তাছাড়া দেশের ইলিশের সিংহভাগ চাহিদা মেটাতে ভূমিকা রাখছে উপকূলীয় জেলা ভোলা। 

মাছের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকার মাছের প্রজনন মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকে। নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা বুকভরা আশা নিয়ে সাগর ও নদীতে গিয়ে জাল ফেলছেন। কিন্তু জালে কাঙ্ক্ষিত মাছ পাচ্ছেন না।  বরং নৌকার তেলের খরচটাও উঠছে না বেশিরভাগ জেলের। 

এদিকে মাছ ধরার সরঞ্জামাদি কিনতে ক্ষুদ্র ঋণ বা মহাজনের দাদন নিয়ে থাকেন এখানকার জেলেরা। এখন মাছ ধরতে না পেরে সমিতির কিস্তি, মহাজনের দাদনের চাপ, দোকানের দেনা, বাচ্চাদের পড়াশোনার খরচসহ পরিবার পরিজন নিয়ে চরম বিপাকে পরেছেন তারা। দায়-দেনার চাপে পাওনাদারদের কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অনেক জেলে।

জেলেদের অভিযোগ, সরকারিভাবে জেলেদের প্রণোদনার যে চাল আসে অধিকাংশ জেলেরা সেই চাল পায়না। এই চাল প্রভাবশালীরা অন্য পেশার নেতাকর্মীদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে দেন। এখানের জেলেরা অন্য কোন পেশার কাজও জানেন না। তাই সাগর নদীর উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল তারা। নদীতে মাছ না পেলে তাদের চরম বিপাকে পরতে হয়। 

তারা সরকারের কাছে মৎস্যজীবীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করে দেয়ার দাবি জানান। তারা বলেন, সরকার ঋণ দিলে মহাজন ও সমিতির দায়দেনা থেকে কিছুটা মুক্তি মিলবে। 

সরেজমিনে ভোলা সদরের মেঘনা পাড়ের তুলাতুলি মৎস্য ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, মাছের আশায় বসে আছেন জেলে রহমত মাঝি, সালাউদ্দিন, শহিদ মাঝি ও জলিল মাঝি।

তারা বলেন, অন্যান্য বছরগুলোতে ভরা মৌসুম আসলে এখানকার নদীগুলো মাছে ভরপুর থাকতো। আমরা ধারদেনা শোধ করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দুইবেলা খেতে পারতাম।

কিন্তু এবার ভরা মৌসুমে নদীতে মাছ নেই। আমাদের দুর্গতিরও শেষ নেই। তারা বলেন, আমাদের অভাব আর ক্ষুধার জ্বালা কেউ বুঝে না।  জেলার অন্যান্য মাছঘাট ও জেলে পল্লীতেও একই চিত্র দেখা যায়। 

ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বাসসকে বলেন, সাগর ও নদীর মধ্যবর্তী স্থানে শতাধিক ডুবোচর সৃষ্টি হওয়ায় পানি প্রবাহে ব্লক সৃষ্টি হয়েছে। যার কারণে সাগর থেকে ভোলার মেঘনা তেতুলিয়া, কালাবাদর, বেতুয়া ও ইলিশা নদীতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আসতে পারছে না। পানি আরো বাড়লে নদীতে মাছ আসতে শুরু করবে বলে আশা করছি। 

তিনি  জানান, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ভোলায় ইলিশের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লক্ষ ৮২ হাজার মেট্রিক টন। তথ্যমতে, উপকূলীয় ভোলায় সরকারের নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা রয়েছে ১ লক্ষ ৭১ হাজার জন। সরকারি তালিকা ছাড়াও আরো ৫০ হাজারের মতো জেলে রয়েছে বলে দাবি জেলে সমিতিগুলোর নেতাদের।