শিরোনাম
ঢাকা, ১৯ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহণ উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, শ্রমিকরা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি। তাদের সকল যৌক্তিক দাবি ও চাহিদাসমূহ পূরণের জন্য সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। শ্রমিকদের সকল যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়া হবে।
'জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালা-২০২৫' উদযাপন উপলক্ষে ঢাকার সাভারে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে আয়োজিত এক শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় উপদেষ্টা আজ এ কথা বলেন।
শ্রম উপদেষ্টা বলেন, 'শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী শ্রমিকদের অসন্তোষ দূর করতে আমরা কাজ করছি। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় শ্রমিক ও মালিক উভয় পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করছে। অনেক মালিক ভালো কাজ করলেও কিছু অসাধু মালিক নতুন সমস্যা সৃষ্টি করছে, যা সমাধানে আমরা সচেষ্ট।'
তিনি আরও বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার, নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শ্রম আইন সংশোধন, ন্যায্য মজুরি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করা হচ্ছে। জেনেভায় আইএলও সম্মেলনে শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য বাংলাদেশের পক্ষে জোড়ালো আবেদন করা হয়েছে।
শ্রমিকদের সংগঠন করার সুযোগ বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'যেকোনো প্রতিষ্ঠানে ৫ জন শ্রমিক থাকলে ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান ট্রেড ইউনিয়নকে কালো তালিকাভুক্ত করতে পারবে না। এ জন্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হবে। সামাজিক ক্লাবগুলোও শ্রম আইনের আওতায় আসবে।'
শ্রমিকদের অবদানের কথা তুলে ধরে শ্রম উপদেষ্টা বলেন, 'কৃষি, শিল্প, গার্মেন্টস ও রপ্তানি খাতে শ্রমিকদের পরিশ্রম দেশের অর্থনীতিকে সচল রেখেছে। বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের রেমিট্যান্স অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে।'
শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ, ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, শ্রমিকরাই এই দেশের মূল চালিকাশক্তি। আপনাদের পরিশ্রমেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আপনারাই ডলার উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম। দেশের অর্থনীতিকে আপনারাই সচল রেখেছেন। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি প্রদানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শ্রম আইনে শ্রমিকদের যে সকল অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে, সরকার তা বাস্তবায়নের নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
শহীদ পরিবার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার পরিবর্তনের ফলে শহীদ পরিবার কিছুটা আশার আলো দেখলেও তাদের হৃদয়ের কান্না এখনো থামেনি। এই পরিবারগুলোর পাশে থেকে তাদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতাকালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মর্মবাণী ছিল-বৈষম্যের বিরোধিতা। বর্তমান সরকার শ্রমিকদের বৈষম্য নিরসনে সচেষ্ট। বৈষম্যমুক্ত সমাজ ও দেশ প্রতিষ্ঠা না করা পর্যন্ত জুলাই আন্দোলনের যে স্পিরিট সেটা বহাল থাকবে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ জুলাই ছাত্র জনতার আন্দোলনে নিহত শ্রমিকদের শ্রদ্ধা জানিয়ে শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের ভারসাম্য ও ট্রেড ইউনিয়নের দায়িত্বশীলতার ওপর জোর দিয়ে বলেছেন, শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ ও সম্মানজনক কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, পাশাপাশি মালিকপক্ষকেও অবশ্যই কার্যকর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা এমন ট্রেড ইউনিয়ন চাই, যা রাজনৈতিক হাতিয়ার নয়, বরং শিল্পের কণ্ঠস্বর। ইউনিয়নগুলো যেন ন্যায্যতা ও শিল্পের স্থিতিশীলতার জন্য কাজ করে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ বলেন, শ্রমিকরা দেশকে ভালোবাসে। আমরা দেখেছি স্বৈরাচার পতনের পর ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে সাভার ও নারায়নগঞ্জের শ্রমিকরা কলকারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানকে সচল রেখেছে। দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে শ্রমিকরা সহযোগিতা করেছে।
অনুষ্ঠানে ১৭ জন শ্রমিক ও তাদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। এছাড়া, জুলাই ছাত্র-জনতা আন্দোলনে নিহত ও আহত শ্রমিকদের পরিবারকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে।