বাসস
  ০৭ জুলাই ২০২৫, ১৬:১২

সাইফ পাওয়ারটেকের বিদায়, এনসিটির নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রাম ড্রাইডক

চট্টগ্রাম বন্দর। ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম, ৭ জুলাই ২০২৫ (বাসস): বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিচালিত চিটাগাং ড্রাই ডক লিমিটেডের (সিডিডিএল) অধীনে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) যাত্রা শুরু হয়েছে। 

এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ দেড় যুগ পর বিদায় নিল সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড। গতকাল রোববার (৬ জুলাই) ছিল সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের সঙ্গে বন্দরের সবশেষ চুক্তির শেষ দিন। ফলে প্রায় দেড় যুগ ধরে এনসিটিতে একচেটিয়া প্রভাব বিস্তারকারী প্রতিষ্ঠানের অধ্যায় এখানেই শেষ হলো।

আজ সোমবার (৭ জুলাই) থেকে বন্দর ও ড্রাইডক কর্তৃপক্ষ এনসিটির দায়িত্ব বুঝে নিয়েছে। রোববার (৬ জুলাই) রাত ১২টা ১ মিনিটে এনসিটি’র নতুন পরিচালনার নিয়ন্ত্রণ বুঝে নেন ড্রাইডক কর্তৃপক্ষ।

সরকারি উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নতুন করে আর সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করেনি। 

এর মধ্য দিয়ে শুরু হলো বন্দরের এই গুরুত্বপূর্ণ টার্মিনালে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে পরিচালনার নতুন অধ্যায়।

সিডিডিএল-এর তত্ত্বাবধানে এনসিটি’র পরিচালনা শুরুর বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, চট্টগ্রাম ড্রাইডকের সঙ্গে ছয় মাসের জন্য চুক্তি অনুমোদন করেছে বন্দরের বোর্ড। আজ সোমবার থেকে সেটি কার্যকর হয়েছে। একইসঙ্গে সাইফ পাওয়ারটেক আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছে।

তিনি বলেন, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছিল ডাইরেক্ট প্রকিউরমেন্ট মেথডে (ডিপিএম) এনসিটি পরিচালনা করবে চিটাগাং ড্রাইডক লিমিটেড। 

এরপর বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিচালিত ড্রাইডক কর্তৃপক্ষ এনসিটি’র দায়িত্ব বুঝে নেওয়া শুরু করেছিল। ফাইনালি রোববার মধ্যরাত থেকে এনসিটি ড্রাইডকের অধীনে পরিচালনা শুরু হয়েছে। এই টার্মিনালে জেটি আছে পাঁচটি। এই পাঁচ জেটিতে চারটি সমুদ্রগ্রামী জাহাজ ও অভ্যন্তরীণ নৌপথে চলাচলকারী একটি জাহাজ ভিড়তে পারে।

বন্দর সচিব ওমর ফারুক বলেন, বন্দরের অপারেশনাল সব পয়েন্টে ড্রাইডক ও বন্দরের লোকজন দায়িত্ব পালন করছেন। স্মুথলি কনটেইনার লোড, আনলোড ও ডেলিভারি হচ্ছে।

সূত্র জানায়, শুরুতে পরিকল্পনা ছিল, বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজেরাই টার্মিনালটি পরিচালনা করবে। তবে পরে সরকারের আগ্রহে নৌবাহিনীর অধীনস্থ কোনো সংস্থার হাতে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আইনি জটিলতার কারণে সরাসরি নৌবাহিনী নয়, বরং তাদের নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেডকে এনসিটি’র দায়িত্ব দেওয়া হয়।

বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, তারা চাইছেন দ্রুততম সময়ে বন্দরে লোড, আনলোড ও ডেলিভারি হোক এবং খরচ কম হোক। বন্দরে আধুনিক হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ এনসিটিতে প্রতি ঘণ্টায় ৩০টির বেশি কনটেইনার জাহাজ থেকে ওঠানামা করানোর সক্ষমতা রয়েছে। অন্যান্য বার্থ এবং টার্মিনালে যা প্রতি ঘণ্টায় মাত্র ১৭ থেকে ১৮টি। বছরে এখন ১২-১৩ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং হচ্ছে এনসিটিতে।

চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার টার্মিনালগুলো হলো- চিটাগং কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি), নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি), জেনারেল কার্গো বার্থ (জিসিবি) ও পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি)।

বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই রদবদল বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিং নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, নৌবাহিনী ও ড্রাইডকের অভিজ্ঞতায় পরিচালিত এনসিটি কীভাবে নতুন মানদণ্ড স্থাপন করে।

উল্লেখ্য, সাইফ পাওয়ারটেক ২০০৫ সালে বন্দরের যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণের কাজ দিয়ে কার্যক্রম শুরু করে। তবে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রতিষ্ঠানটি রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতার সুবিধা নিয়ে বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিংসহ বিভিন্ন খাতে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে।

টেন্ডার ছাড়াই বছরের পর বছর চুক্তি নবায়ন এবং টেন্ডার পদ্ধতিতে একচেটিয়া সুবিধা পাওয়ার মাধ্যমে তারা বন্দরে এক ধরনের ‘ছায়া শাসন’ কায়েম করে।

প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার রুহুল আমিনের সঙ্গে সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, সংসদ সদস্য এম এ লতিফ, নূর-ই-আলম চৌধুরী, সামশুল হক চৌধুরী ও চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ. জ. ম. নাছির উদ্দীনের ঘনিষ্ঠতা সেই আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় বড় ভূমিকা রেখেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।