বাসস
  ০৭ জুন ২০২৫, ১৭:৩৯

কিশোরগঞ্জে জমজমাট মৌসুমি কসাইয়ের হাট

ছবি : বাসস

এসকে রাসেল

কিশোরগঞ্জ, ৭ জুন, ২০২৫ (বাসস) : মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কিনে কোরবানি দেন। ঈদের জামাত শেষে তার এসব পশু কোরবানি দেন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। 

এই কোরবানিকে ঘিরেই সারা বছরের বড় আয় হয় কসাইদের। ঈদ উপলক্ষে তারা ঘুরে বেড়ান এক জেলা থেকে আরেক জেলায়। আগে থেকেই চলে দেন দরবার। তারপর কোরবানির পশুর দাম অনুযায়ী তারা পারিশ্রমিক নেন।  ঈদ উপলক্ষে নিয়মিত কসাইয়ের সাথে মৌসুমি কসাইও আসেন বাড়তি আয় করতে। 

আজ কোরবানির ঈদ উপলক্ষে সকাল থেকে কিশোরগঞ্জ শহরের শহিদি মসজিদের সামনে বসেছিল মৌসুমি কসাইয়ের হাট। নিয়মিত কাজ করেন এমন কসাইয়ের পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন এলাকার শতাধিক মৌসুমি বা ছুটা কসাইয়েরা ভিড় করেছিলো এ হাটে। সারাবছর অন্য কাজ করলেও কোরবানির ঈদে বাড়তি আয়ের আশায় একদিনের জন্য কসাই বনে যান তারা। প্রত্যেকের হাতে ব্যাগে রয়েছে পশু জবাইয়ে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি।

ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদে অনেক শ্রমিক, দিনমজুর ও রিকশাচালক নিজেদের দৈনন্দিন কাজ ছেড়ে ভিড় করেন কসাইয়ের হাটে। এ হাটে গরুর দাম-এর ওপর তাদের শ্রমের মূল্য নির্ধারণ হয়। তবে এক্ষেত্রে পেশাদার কসাইয়ের চেয়ে মৌসুমি কসাইয়ের মজুরি কিছুটা কম।

হাটে আগত মৌসুমি কসাইদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বছরের অন্যান্য দিনগুলোতে তারা নিজ নিজ পেশায় নিযুক্ত থাকেন। তখন তাদের কেউ নির্মাণ শ্রমিক, কাঠ মিস্ত্রি, রিকশা চালক, সবজি বিক্রেতা, ভ্যান চালক অথবা দিনমজুর। কিন্তু ঈদের এই দিনে তারা কসাইয়ের কাজ করেন বাড়তি ইনকামের আশায়। যারা কোরবানি দেবেন তারাও কিশোরগঞ্জ শহরের শহীদী মসজিদের সামনের এ হাটে আসেন কসাইদের খোঁজে। দরদাম করে তারা চুক্তি করেন কসাইদের সঙ্গে। জবাই ও মাংস কাটাকুটি থেকে শুরু করে বণ্টনের চুক্তিতে তারা কসাই ভাড়া করেন।

শহরের নগুয়া এলাকা থেকে কসাই হাটে এসেছেন রাজিব। তিনি জানান, বছরের অন্য দিনগুলোতে তিনি নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করেন। প্রতি বছর ঈদুল আজহায় তিনি মৌসুমি কসাইয়ের কাজ করে বাড়তি আয় করেন। গত বছরে ১ লাখ টাকার গরু কাটতে চারজনে ৪ হাজার টাকা নিয়েছিল। এবার ৬ বা ৫ হাজারে কাটবেন। দরদাম হচ্ছে। সঙ্গে কয়েক কেজি কোরবানির মাংস দিলে তারা অনেক খুশি হয়।

সদর উপজেলার বৌলাই এলাকা থেকে কোরবানির পশু কাটতে এসেছেন বাচ্চু মিয়া। তিনি বলেন, প্রায় ২০ বছর ধরে এই কাজ করি। আমরা ৫ জন। এ দিনে বাড়তি আয়ের পাশাপাশি যেটুকু মাংস পাই তা নিয়ে বাড়ি যাই। দরদাম হচ্ছে ৫ জনে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা পেলে কাজ করবো।

শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের বিকল্প ইমাম হয়বতনগর এ. ইউ. কামিল মাদ্রাসার প্রভাষক মাওলানা জুবায়ের ইবনে আব্দুল হাই বলেন, সমাজের পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠী ঈদের দিনের আনন্দকেও মাটি করে মানুষের সেবায় দিনটি বিলিয়ে দেন। তাদের শ্রমের যথাযথ মূল্য যাতে তারা পায় সেই দিকে আমাদের নজর রাখতে হবে। মজুরির সাথে সাথে তাদের কোরবানির গোশতের গরিবদের অংশ দিলেও তারা অনেক খুশি হবে। তবে মজুরির বদলে গোস্ত দেয়া চলবে না।