বাসস
  ০৭ জুন ২০২৫, ১২:৪২

রাজধানীতে পশুর বর্জ্য অপসারণে প্রস্তুত ২০,২৬৭ পরিচ্ছন্ন কর্মী

ফাইল ছবি

ঢাকা, ৭ জুন, ২০২৩ (বাসস): কোরবানির পশুর বর্জ্য ১২ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। এজন্য প্রায় ২০ হাজার ২৬৭ পরিচ্ছন্ন কর্মী প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

দ্রুততম সময়ের মধ্যে কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে দুই সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মীদের ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। দ্রুত ও নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বর্জ্য অপসারণে হটলাইন খোলা থাকবে এবং এজন্য প্রায় ১৩ লাখ ৯০ হাজার প্লাস্টিক, পলিব্যাগ ও বায়ো-ডিগ্রেডেবল ব্যাগ সরবরাহ করেছে দুই সিটি কর্তৃপক্ষ।

সিটি কর্পোরেশন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ঈদের দিন বিকেল ৩টায় বর্জ্য অপসারণের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন দুই সিটির প্রশাসক। কোরবানির ঈদে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে প্রায় ৭ লাখ পশু কোরবানি হতে পারে। এসব পশু থেকে কমপক্ষে অর্ধ লাখ টন বর্জ্য সৃষ্টি হতে পারে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া বাসস’কে জানান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় কোরবানির পশুর হাটসমূহ এবং কোরবানি করা পশুর সৃষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কার্যক্রমসহ আনুষঙ্গিক বিষয়াগুলো সরেজমিনে তদারকির লক্ষ্যে ডিএসসিসির উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি তদারকি পরিষদ গঠন করা হয়েছে। ঈদুল আজহা উদযাপন উপলক্ষ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, পরিবহণ বিভাগ ও যান্ত্রিক বিভাগের সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

তিনি জানান, কোরবানির বর্জ্য ও সাধারণ বর্জ্য অপসারণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব ২০৭টি ডাম ট্রাক, ২০০টি মিনি ট্রাক, ৪৪টি কম্পেক্টর, ৩৯টি কনটেইনার ক্যারিয়ার, ১৬টি পে-লোডার, ৫টি টায়ার ডোজার, ৯টি পানির গাড়ি, ২টি বুলডোজার, ৪টি এক্সেভেটর, ৩টি গাড়িবাহী এয়ার কম্প্রেসার, ২টি ফর্ক লিফ্ট, ৩টি স্কিড লোডারসহ বিভিন্ন যানবাহন ও যন্ত্রপাতি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও পর্যাপ্ত হাতগাড়ি, বেলচা ও টুকরীসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় মালামাল ওয়ার্ড পর্যায়ে সরবরাহ করা হয়েছে।

প্রশাসক জানান, এই সিটির ৩০ হাজার টন কোরবানির বর্জ্য অপসারণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব জনবল ৫ হাজার ৯৫৩ জন, ৭৫টি ওয়ার্ডে নিয়োজিত প্রাথমিক বর্জ্য সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানের ৪ হাজার ৭০০ জন এবং পশুর হাটের জন্য ১ হাজার ৮০০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ সর্বমোট প্রায় ১০ হাজার ২৬৭ জন পরিচ্ছন্নকর্মী পরিচ্ছন্নতা কাজে নিয়োজিত থাকবে। পশুর হাটের বর্জ্য ও কোরবানি করা পশুর বর্জ্য অপসারণ এবং রাস্তা ধোয়ার জন্য ২২২ গ্যালন জীবাণুনাশক (স্যাভলন) ও ৪০ টন ব্লিচিং পাউডার বিতরণ করা হয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী আরো ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

সুষ্ঠু ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে কোরবানির বর্জ্য অপসারণের লক্ষ্যে কোরবানি দাতাদের মধ্যে বিনামূল্যে ১ লাখ ৪০ হাজার বায়ো-ডিগ্রেডেবল ব্যাগ বিতরণ করা হয়েছে। পশুদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণে অসুস্থ পশু নির্বাচন ও চিকিৎসা প্রদানে প্রতিটি পশুর হাটের জন্য একটি করে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে এবং মঙ্গলবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মেডিকেল টিমের কার্যক্রম শুরু হয়। কোরবানির পশু বর্জ্য অপসারণ এর তথ্য জানতে ও জানাতে হটলাইন নম্বর চালু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। নম্বরগুলো হল- ০১৭০৯-৯০০৮৮৮, ০২২২ ৩৩৮ ৬০১৪।

এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বাসস’কে জানান, কুরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে মাইকিং, প্রতিটি মসজিদের ইমামদের মাধ্যমে নামাজের পরে ও জুমা’র খুতবার সময় কোরবানি পশু জবাই ও বর্জ্য অপসারণ বিষয়ে মুসুল্লিদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে এবার ঈদে প্রায় ২০ হাজার টন বর্জ্য তৈরি হবে। এসব বর্জ্য দ্রুততার সাথে অপসারণের জন্য সিটি কর্পোরেশনের প্রায় ১০ হাজার কর্মী ৩ দিনব্যাপী নিয়োজিত থাকবে।

তিনি জানান, এবার ঈদে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজে ২২৪ টি ডাম্প ট্রাক, ৩৮১ টি পিকাপ ২৪ টি পে-লোডারসহ অন্যান্য যান-যন্ত্রপাতি সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবে।

বর্জ্য সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য ১২ লাখ ৫০ হাজার পলি ব্যাগ, আড়াই হাজার বস্তা ব্লিচিং, চার হাজার ক্যান স্যাভলন বিতরণ করা হয়েছে উল্লেখ করে মোহাম্মদ এজাজ জানান, আমিন বাজার ল্যান্ডফিলে কোরবানির বর্জ্য ডাম্পিংয়ের জন্য আলাদা প্লাটফর্ম রেডি রাখা হয়েছে এবং পরিবেশসম্মত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ২টি পরিখা খনন করা হয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য ডিএনসিসির কর্মকর্তা কর্মচারীদের সমন্বয়ে তদারকি টিম গঠন করা হয়েছে।

তিনি জানান, প্রথমে কোরবানির বর্জ্য সংগ্রহ করে এসটিএসে আনা হবে এবং এসটিএস থেকে বর্জ্য ডাম্পিং স্টেশনে (আমিন বাজার ল্যান্ডফিল) ডাম্প করা হবে।

ডিএনসিসির কর্মকর্তারা জানান, জবাইকৃত কোরবানির পশুর বর্জ্য তাৎক্ষণিকভাবে অপসারণ এবং কোরবানির পশুর হাটসমূহ দ্রুত পরিষ্কারের লক্ষ্যে ঈদের আগের দিন থেকে ঈদের পরবর্তী ২ দিন নিরবচ্ছিন্নভাবে বর্জ্য অপসারণের জন্য বর্জ্যবাহী ড্রাম্প ট্রাক বা খোলা ট্রাক, ভারী যান-যন্ত্রপাতি, পানির গাড়ি, বেসরকারি এবং ভাড়ার পিকআপ নিয়োজিত থাকবে।

কোরবানি পশুর বর্জ্য অপসারণে প্লট-২৩-২৬, সড়ক-৪৬, গুলশান-২, নগর ভবনে অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। কন্ট্রোল রুমের নম্বর : +৮৮০২৫৫০৫২০৮৪, ১৬১০৬।