শিরোনাম
।। মহিউদ্দিন সুমন ।।
টাঙ্গাইল, ২ জুন, ২০২৫ (বাসস) : কোরবানির ঈদ এলেই দেখা মেলে বাহারি নাম ও বিশাল আকৃতির গরুর। এ বারও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। এ বছর জেলার কোরবানির হাটে দামে ও খ্যাতিতে এগিয়ে আছে দেশীয় ষাঁড় ‘কালা বাবু’।
তিন বছরে বেড়ে ওঠা চার দাঁতের জেলার নাগরপুর উপজেলার দেশীয় ষাঁড় কালাবাবু। সাড়ে ৪ ফিট উচ্চতায় ১৪ মণ ওজনের কালা বাবু প্রতিদিন ১০ কেজি তরল ও দানাদার খাবার খায়। বর্তমানে ষাঁড়টির দাম ধরা হয়েছে ৫ লাখ টাকা।
টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার কোনরা গ্রামের কীটনাশক ব্যবসায়ী মোহাম্মদ পরাণ মিয়া 'কালা বাবু’ কে আসন্ন কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছেন।
সরেজমিনে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার কোনরা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কালো রঙের গরুটি দেখতে খুবই শান্ত প্রকৃতির মনে হলেও সে খুবই রাগী। পুরো শরীরটাই কালো আর বিশাল দেহ হওয়ায় গরুটির নাম রাখা হয়েছে ‘কালা বাবু’। কালা বাবুকে এক নজর দেখতে গ্রামের বাড়িতে ছুটে আসেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ। কেউ ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন। ফেসবুকে শেয়ার করছেন। এসব দেখে মানুষ ভিড় করছে কালা বাবুর খামারে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, নাগরপুর উপজেলার কীটনাশক ব্যবসায়ী পরাণ মিয়ার দেশীয় ষাঁড় কালা বাবু জেলার নাগরপুর ও দেলদুয়ার উপজেলার সবচেয়ে বড় গরু।
কালা বাবুকে দেখতে আসা করিম মিয়া জানান, এখন পর্যন্ত নাগরপুরে পরাণ মিয়ার দেশীয় ষাঁড় ‘কালা বাবু’ সবচেয়ে বড় গরু। কোরবানির পশুর হাটে এটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় হবে। গরুর মালিক ভালো দামে বিক্রি করতে পারবে বলে আশা রাখি।
কালা মানিকের মালিক পরাণ মিয়া বাসসকে বলেন, গ্রামের হাট থেকে দেশীয় জাতের গাভি কিনেছিলাম। সে গাভি থেকে কালো রঙের একটি ষাঁড় বাছুর জন্ম নেয়। সেই ষাঁড় বাছুরকে আমি নিজের সন্তানের মত তিন বছর ধরে লালন পালন করে বড় গরুতে পরিণত করেছি। গরুটি দেখতে খুব শান্ত স্বভাবের হলেও খুব রাগী এবং চঞ্চল। শখ করে তার নাম রেখেছি ‘কালা বাবু'।
তিনি জানান, ষাঁড়টিকে বড় করতে কোনো ধরনের মোটাতাজাকরণ ওষুধ ব্যবহার করা হয়নি। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রয়েছে কাঁচা ঘাস, ভুসি, চালের কুড়া, ভুট্টা, অ্যাংকর, খৈল, প্রাকৃতিক খাদ্য ও বিচি কলা। তার পেছনে প্রতিদিন খরচ হচ্ছে ৫শ টাকা। পাইপ দিয়ে প্রতিদিন ২ বার গোসল করাতে হয়। গরমে আরামের জন্য ফ্যান ও মশা তাড়াতে দৈনিক ৪টি করে কয়েল জ্বালাতে হচ্ছে।
পরান মিয়া আরো জানান, এবারের কোরবানির ঈদে কালা বাবু বিক্রি করে দেব। কেমন দাম চান? জানতে চাইলে তিনি বলেন, দাম ৫ লাখ টাকা। কালা বাবুকে কিনতে চাইলে ক্রেতারা দেখে শুনে দাম করে নিতে পারবেন।
তিনি আরো জানান, আমার ইচ্ছে বাড়ি থেকে এই কালা বাবুকে বিক্রি করার। যদি না বিক্রি করতে পারি তাহলে মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই গরুর হাটে উঠানোর ইচ্ছা আছে কালা বাবুকে।
পরাণ মিয়ার স্ত্রী মমতা বেগম জানান, আমার আপন সন্তানকে যেভাবে লালন পালন করেছি, ঠিক সেভাবে আমি কালা বাবুকে বড় করেছি। স্বামীর বয়স হয়েছে গরুটিকে দেখাশোনা করার জন্য কোনো লোক নেই। সে কারণে বিক্রি করতে ইচ্ছে। খুবই মায়া হচ্ছে। তবুও বিক্রি করতে হবে।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. শহীদুল আলম বাসসকে বলেন, আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে জেলায় এ বছর ২ লাখ ১১ হাজার ৯৭৪ টি কোরবানির পশুর চাহিদার বিপরীতে ইতোমধ্যে কোরবানিযোগ্য ২ লাখ ৩৬ হাজার ৯৭০টি পশু প্রস্তত করা হয়েছে। কালা বাবুর মত অসংখ্য নামে বড় বড় গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন খামারিরা। আশা করছি, জেলার ছোট-বড় সব খামারিরা গবাদিপশু ভালো দামে বিক্রির মাধ্যমে লাভবান হবেন।
তিনি আরো জানান, জেলার কোরবানির পশুর হাটগুলোতে মোট ৪৬ ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম কাজ করছে। হাটে কোন পশু অসুস্থ বা রোগ দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে মেডিকেল টিম চিকিৎসা সেবা প্রদান করবে। এ ছাড়াও প্রতিটি হাটে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।