বাসস
  ০২ জুন ২০২৫, ১৩:৩৭

নওগাঁয় পশুর বাজারে আলোচনার শীর্ষে ‘টাইগার বিষু’ ও ‘নবাব’

ছবি : বাসস

বাবুল আখতার রানা

নওগাঁ, ২ জুন, ২০২৫ (বাসস) : ঈদুল আযহার আর কদিন বাকি। ঘরে ঘরে চলছে ঈদের প্রস্তুতি। চলছে কোরবানির পশু কেনা-বেচা। ঈদুল আযহায় জেলার মান্দায় জমে উঠেছে পশুর হাট। পাশাপাশি খামারগুলোতেও চলছে কেনা-বেচা। হাট ছাড়াও ক্রেতারা খামার থেকে সরাসরি পশু কিনে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। 

তবে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে কোরবানির আকর্ষণ হয়ে উঠছে বিশেষ শ্রেণি ও নামের পশু। তেমনি দুই ষাঁড় ‘টাইগার বিশু’ ও ‘নবাব’ এলাকায় পশু ক্রেতাদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। অবস্থাপন্ন গৃহস্থ অথবা পশু ব্যবসায়ীরা কিনে নেবেন তাদের। খামারিদের প্রত্যাশা উপযুক্ত দামেই পশু দুটি বিক্রি করতে পারবেন।   

কোরবানি উপলক্ষে এ বছর নওগাঁ জেলার বিশেষ আকর্ষণ মান্দা উপজেলার  ছোট বেলালদহ গ্রামের ‘টাইগার বিষু’ এবং এনায়েতপুর মঞ্জিলতলা গ্রামের ‘নবাব’। তাদের ঘিরে খামার দুটিতে চলেছে ঈদের উৎসব। পশু ক্রেতা ও কৌতূহলী জনতা সবাই ‘টাইগার বিষু’ এবং ‘নবাব’কে এক নজর দেখার জন্য খামারে ভিড় করছেন। ষাঁড় দুটি শুধু গ্রামের নয়, আশপাশের অনেক এলাকার মানুষের কৌতূহলের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

মান্দা উপজেলার ছোট বেলালদহ গ্রামের খামারি আবু ইউসুফ হেলালের খামারে লালনপালন করে বড় করে তুলেছেন  ক্রস ফ্রিজিয়ান জাতের ৩০ মণ ওজনের ষাঁড়। খাওয়াদাওয়া, চলন এবং ওজন সব মিলিয়েই তার ষাঁড়ের নাম দিয়েছেন ‘টাইগার বিষু’। প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি সুষম খাদ্য এবং পরিচর্যার মাধ্যমেই টাইগার বিষুকে বড় করা হয়েছে বলে খামারির দাবি।  

একই উপজেলার এনায়েতপুর মঞ্জিলতলা গ্রামের আফজাল হোসেনের খামারে বড় করে তুলেছেন নবাবকে। এর ওজন ৩৫ মণ। মাত্র সাড়ে তিন বছর বয়সেই তার এমন ওজন হয়েছে। 

খামারি আফজাল হোসেন বাসসকে বলেন, ৩৫ মণ ওজনের নবাবকে প্রতিদিন তিনবেলা গোসল করানো হয়। পরিচর্যায় নেওয়া হয় সর্বোচ্চ সতর্কতা। তার খাবারের তালিকায় প্রতিদিন থাকে ৫ কেজি ময়দা ও ভুসি, ৩ কেজি দানাগুড়, পাশাপাশি গম, কালাই, বিভিন্ন দানাশস্য ও অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান। 

তিনি বলেন, শুধু নবাব নয়, আমার খামারে রয়েছে আরও তিনটি বিশাল ষাঁড়। এদের নাম দেওয়া হয়েছে ‘সাদা মানিক’, ‘কালো মানিক’ এবং ‘বাদশা’। প্রতিটি ষাঁড়ই আকৃতির দিক থেকে চমকপ্রদ এবং একইভাবে পরিচর্যা করা হয়েছে। এরই মধ্যে নবাবের দাম ৭ লাখ টাকা হাঁকানো হয়েছে।

টাইগার বিশুর মালিক খামারি আবু ইউসুফ হেলাল বলেন, শখের বশে ফ্রিজিয়ান জাতের গরুটি লালন পালন করেছি। শুরুতেই এ গরুটি নিয়ে আমার চরম কৌতূহল ছিল। মাত্র তিন বছরেই এর ওজন হয়েছে ৩০ মণ। এখন পর্যন্ত দাম বলা হয়েছে সাড়ে ৬ লাখ। প্রতিদিন অন্তত ৩০ কেজি সুষম খাবার খাওয়াতে হয়েছে। এই বিশাল ষাঁড়ের খ্যাতি এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন এলাকায়। 

তিনি জানান, ঈদুল আজহা সামনে রেখে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ খামার দুটিতে ভিড় করছেন। অনেকেই ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করছেন। এতে ষাঁড়গুলোর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। সব মিলিয়ে খামার দুটিতে এখন এক উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, যারা গরু কিনবেন তারা যেমন খামারে ভিড় করছেন। তেমনি ভিড় করছেন কৌতূহলী মানুষ। গরুগুলো দেখতে আসা কয়েকজন দর্শনার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, এ ধরনের বড় ষাঁড় কোরবানির ঈদের বাজারে ভালো দামে বিক্রির সম্ভাবনা থাকে। শুধু লাভ নয়, পশুদের প্রতি ভালোবাসা ও যত্নই তাদের এই খাতে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করে। এগুলো গরু তো নয়, যেন এক একটি হাতি।

মান্দা উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুজ্জামান শিপন বলেন,  কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে খামার দুটিতে ষাঁড় হৃষ্টপুষ্ট করা হয়েছে। উপজেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তরের সার্বক্ষণিক তদারকি ছিল। প্রাকৃতিক ও পুষ্টিকর খাবার খাইয়ে এদের লালনপালন করা হয়েছে। খামার দুটি এখন শুধুই একটি পশু খামার নয় বরং এটি হয়ে উঠেছে পশুপ্রেম, পরিশ্রম ও সফলতার এক অনন্য উদাহরণ।