শিরোনাম
দিনাজপুর, ৩১ মে, ২০২৫ (বাসস): উচ্চ ফলনশীল ও জিংক সমৃদ্ধ নতুন জাতের বোরো ধান ব্রি-১০২ চাষে সফল হয়েছে জেলার কৃষক। এ বছর জেলায় পরীক্ষামূলকভাবে এ ধানের চাষ করা হয়। এই ধানের চাষ কৃষিতে বিপ্লব ঘটাবে বলে আশা করছেন কৃষিবিদ ও ধান গবেষকরা।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (গবেষণা ও প্রশিক্ষণ) মো. আনিসুজ্জামান বাসসকে বলেন, কৃষি অধিদপ্তর জেলায় এ বছর পরীক্ষামূলকভাবে ২২০ হেক্টর জমিতে কৃষি বিভাগের উদ্ভাবিত ব্রি-১০২- জাতের বোরো ধান চাষ করেছে। জেলার কয়েকজন কৃষককে এই ধান চাষে উদ্বুদ্ধ করে পরীক্ষামূলকভাবে ধানের আবাদ করা হয়।
পিকেএসএফ কৃষি ইউনিটের অর্থায়নে ও কারিগরি সহযোগিতায় দিনাজপুর মহিলা বহুমুখী শিক্ষা কেন্দ্র (এমবিএসকে) এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে। জেলার সদর, বিরল, চিরির বন্দর, খানসামা, কাহারোল ও ফুলবাড়ীসহ ছয়টি উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে ব্রি-১০২ জাতের ধান চাষ করা হয়। নতুন উদ্ভাবন করা ব্রি-১০২ জাতের ধান চাষে কৃষকদের ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সদর উপজেলার ১০নং কমলপুর ইউনিয়নের দানিহারী গ্রামের একটি প্রদর্শনী প্লটে ৫০ শতক জমিতে এই জাতের ধান আবাদ করেছেন কৃষক মো. গোলাম মোস্তফা। এক শতাংশ জমিতে ধানের ফলন হয়েছে এক মণের বেশি।
কৃষি বিভাগ জানায়, এখন পর্যন্ত চিকন ধানের জাতের মধ্যে এই জাতই সর্বোচ্চ ফলন দিয়েছে। এছাড়াও নতুন এই জাতের ধানে প্রচলিত অন্যান্য জাতের ধানের মতো রোগ-বালাই নেই। লম্বা শিষ ও চিকন জাতের এই ধানের ভাত ঝরঝরে এবং খেতে সুস্বাদু। উচ্চ ফলনশীল এই ধান চাষ করে কৃষক লাভবান হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।
বেসরকারি সাহায্য সংস্থা এমবিএসকে-এর সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা হোসাইন মো. আবু সুফিয়ান জানান, পিকেএসএফ কৃষি ইউনিটের বীজ সহযোগিতায় ও এমবিএসকে এর বাস্তবায়নে সদর উপজেলায় এই প্রথম উচ্চ ফলনশীল ও জিংক সমৃদ্ধ বোরো মৌসুমের নতুন জাত ব্রি-১০২ আবাদ করেছেন কয়েক জন কৃষক। এই ধানের শিষগুলো খুবই পরিপুষ্ট এবং ওজনে অনেক বেশি। এই জাতের ধান আবাদে খরচ কম। রোগবালাইও তুলনামুলকভাবে অনেক কম। ব্রি ধান-২৯ বা চিকন জাতের বিকল্প হিসেবে এই ধানের আবাদ করা যায়।
তিনি বলেন, ফলন বেশি হওয়ায় এই নতুন জাতের ধান আবাদে আশপাশের অনেক কৃষক অনুপ্রাণিত হয়েছেন। এবার কয়েকজন কৃষক তাদের জমিতে এই উচ্চ ফলনশীল চিকন ধান আবাদ করেছেন। এই নতুন জাতের ধানের উচ্চ ফলন দেখে আগামীতে অনেক কৃষক অধিক জমিতে এই ধান চাষ করবেন বলে আশা করছি।
সদর উপজেলার কমলপুর ইউনিয়নের দানিহারী গ্রামের কৃষক মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, আমি এবারে দেড় বিঘা অর্থাৎ ৫০ শতক জমিতে এই নতুন জাত ব্রি-১০২ ধান আবাদ করেছি। লম্বা ও চিকন জাতের এই ধান আমার প্রদর্শনী প্লটে সবচেয়ে বেশি ফলন দিয়েছে। চিকন ধানের এত বেশি ফলন এর আগে আমার জীবনে কখনও দেখতে পাইনি। এই ধান চাষে রোগ-বালাই নেই বললেই চলে। আগামী বছর ৩ বিঘা জমিতে এই নতুন জাতের ধান আবাদ করবো।
তিনি বলেন, এই নতুন জাতের চিকন ধানের উচ্চ ফলন দেখে, আগামী বছর চাষাবাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন অনেক কৃষক। অনেক কৃষক আমার কাছে এই ধানের বীজ চেয়েছেন।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, উচ্চ ফলনশীল ও জিংক সমৃদ্ধ নতুন জাতের ধান ব্রি-১০২ আবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে পরীক্ষামূলক ভাবে চাষ করা হয়েছিল। জেলায় এ বছর ২২০ হেক্টর জমিতে এ ধানের আবাদ করা হয়। পরীক্ষামূলক এই ধান চাষে উচ্চ ফলন দেখে কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হবেন বলে আশা করি। আগামী বছর এই নতুন জাতের চিকন ধানের আবাদও বাড়বে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০২২ সালের ১৮ জানুয়ারি বোরো মৌসুমের জন্য জিংক সমৃদ্ধ উচ্চ ফলনশীল ব্রি -১০২ জাতের ধান চাষের জন্য অবমুক্ত করে। এরপর থেকে এই চিকন ধানের উৎপাদন বাড়াতে সারা দেশব্যাপী পরীক্ষামূলক চাষাবাদ শুরু করা হয়। এ পর্যন্ত সব জেলাতে ব্রি-১০২ জাতের ধান চাষে কৃষকরা উচ্চ ফলন পেয়েছে। আগামী বোরো মৌসুমে ব্রি-১০২ জাতের ধানের বীজ কৃষি বিভাগের বিআরডিসি বীজ বিভাগ থেকে কৃষকদের চাষাবাদের জন্য বিক্রয় করা হবে।