শিরোনাম
রুমানা জামান
ঢাকা, ৩০ মে, ২০২৫ (বাসস) : বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারুফ কামাল খান বলেন, শহীদ রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমান অতি অল্প সময়ে দেশ ও জাতির স্বার্থে যুগান্তকারী যেসব ভূমিকা পালন করেছেন তা সত্যিই বিস্ময়কর। সেই বিবেচনায় গত কয়েক দশকের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার চোখে পড়ার মতো তাঁর চেয়ে বড় কোনো নেতা নেই। একটি দুর্বল জাতির ভঙ্গুর রাষ্ট্রের নেতৃত্ব দিয়ে তিনি অনেক পরাক্রান্ত দেশের নেতাদের ছাপিয়ে নিজেকে অনেক উঁচুতে স্থাপন করতে পেরেছিলেন।
বাসসের সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান ব্যক্তিজীবনে সততা, সাহস, বীরত্ব, আড়ম্বরহীনতা, দেশপ্রেম, ঔদার্য, মহত্ব, সহিষ্ণুতা, সংযম ও দূরদর্শিতার প্রতীক ছিলেন। দৃঢ়তা ও কোমলতার মিশ্রণ তাঁর চরিত্রের এক অনিন্দ্যসুন্দর দিক। মাত্র সাড়ে ৪৫ বছরের সংক্ষিপ্ত জীবনে তিনি অসাধারণ যেসব কাজ করে গেছেন সেসবের যেকোনো একটির জন্যই তিনি ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকতে পারতেন।
পাকিস্তানি আমলে বাঙ্গালীদেরকে ভীরু ও কাপুরুষ হিসেবে চিত্রিত করে বলা হতো এরা নন-মার্শাল রেস বা অযোদ্ধা জাতি। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে খেমকারান সেক্টরে অসাধারণ বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ের মাধ্যমে জিয়া সেই প্রচলিত ধারণা পাল্টে দেন। এতে যে আত্মবিশ্বাস জন্ম নেয় সেই দৃঢ়তাই বাঙ্গালী সৈনিকদেরকে মুক্তিযুদ্ধের পথে উদ্বুদ্ধ করেছিল।
এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, ১৯৭১ সালে বিদ্রোহ করে তিনি বেতার তরঙ্গে স্বাধীনতার ঘোষণা ছড়িয়ে দিয়ে জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেন। বাঙ্গালীর বিদ্রোহ ও প্রতিরোধকে তিনি বৈধ বিপ্লবে ও মুক্তিযুদ্ধে উন্নীত করেন। ১৯৭৫ সালে সৈনিক-জনতার সংহতির মধ্য দিয়ে সংঘটিত বিপ্লব তাঁকে জাতীয় নেতৃত্বের আসনে স্থাপন করলে তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়। তিনি স্বাতন্ত্র্য ও মর্যাদামণ্ডিত জাতীয় পরিচিতি এনে দেন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদকে সংজ্ঞায়িত করার মাধ্যমে।
তিনি দেখিয়ে দেন, সৈনিক-জনতার মেলবন্ধনই বাংলাদেশের মতো ক্ষুদ্র ও দুর্বল রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার উপায়।
মারুফ কামাল বলেন, জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্রের রূপকার। গুপ্ত ও অনিয়মতান্ত্রিক তৎপরতা থেকে ডান ও বামপন্থী দলগুলোতে প্রকাশ্য ও নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনেন। রাজনীতিতে তিনি জনগণকে সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী করেন এবং যেকোনো মৌলিক বিষয়ে গণভোটের মাধ্যমে জনগণের মতামত ও অনুমোদন নেয়াকে বাধ্যতামূলক করেন। তিনি বাক-ব্যক্তি-সংবাদপত্র ও বিচারবিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান উৎপাদন ও উন্নয়নকে উৎসাহিত করাই রাজনীতির অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা করেন। হতাশা কাটিয়ে তিনি দেশজুড়ে কর্মযজ্ঞ ও কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি করেন। তিনি গার্মেন্টস শিল্পের এবং বিদেশে জনশক্তি রপ্তানির পাইওনিয়ার ছিলেন। তিনি সেচের ব্যবস্থা, খাল খনন, উচ্চ ফলনশীল শস্য চাষের মাধ্যমে কৃষিতে বিপ্লব আনেন। তিনি নারীদের সামনে নিয়ে এসে জাতীয় উন্নয়ন ও কর্মযজ্ঞে শামিল করেন। যুব সমাজ এবং শিশুদের কল্যাণ ও বিকাশে তিনি যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
মারুফ কামাল বলেন, জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে ধর্মবিদ্বেষের স্থলে ধর্মীয় মূল্যবোধকে গুরুত্ব দেন এবং সাম্প্রদায়িকতাকে নিরুৎসাহিত করেন। তিনি পার্বত্য অঞ্চলকে নিয়ে আসেন মূল স্রোতধারায়। ১৯ দফা কর্মসূচির ছোট ছোট ঘোষণা কার্যকর করে তিনি অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানসহ মৌলিক চাহিদাবলী পূরণ ও দেশকে স্বাবলম্বী করে তোলার পথ অনুসরণ করেন। আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি ও জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় তিনি সফল হন। সশস্ত্র বাহিনীকে শক্তিশালী করেন। তিনি বিকল্প প্রতিরক্ষা শক্তি হিসেবে আধা-সামরিক বাহিনী গড়ে তোলেন।
এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, জিয়াউর রহমান মুসলিম উম্মাহ’র ঐক্য ও সমঝোতা প্রতিষ্ঠায় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সমস্যা নিরসনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন।
তিনি পানিবন্টনসহ ভারতের সাথে বিভিন্ন সমস্যা নিরসনে দক্ষ কূটনৈতিক নেতৃত্বের প্রমাণ দেন। তিনি সার্কের স্বপ্নদ্রষ্টা ও উদ্যোক্তা ছিলেন। আধুনিক বাংলাদেশের তিনি রূপকার এবং এই রাষ্ট্রকে শক্তিশালী করতে প্রয়োজনীয় সব প্রথা ও প্রতিষ্ঠান তিনি গড়ে দিয়ে গেছেন। তাই জিয়া এখনও প্রাসঙ্গিক। তাঁর কালজয়ী আদর্শই বাংলাদেশের পথ। এই পথ হারানো চলবে না।