বাসস
  ১৩ মে ২০২৫, ১৮:৫৭

কালুরঘাট সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর আগামীকাল, পরদিন আনন্দ মিছিল

ছবি : বাসস

চট্টগ্রাম, ১৩ মে, ২০২৫ (বাসস): দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটছে চট্টগ্রামবাসীর বহুল প্রতীক্ষিত কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাটে রেল ও সড়ক সেতু নির্মাণ প্রকল্পে। এবার স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে বোয়ালখালী, পটিয়াসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসীর। আগামীকাল বুধবার (১৪ মে) এই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন চট্টগ্রামের সন্তান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর নিজ জেলায় বহুল প্রতীক্ষিত এ সফর একটি ভিন্ন মাত্রা বহন করছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম সমাবর্তনে যোগদান পর্যন্ত দিনব্যাপী ব্যস্ততম এ সফরে থাকছে ভিন্নধর্মী ও গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু কর্মসূচি।

কালুরঘাট দ্বিতীয় সেতু নির্মাণের দাবিতে দীর্ঘ আন্দোলনের ‘ফসল’ পেয়ে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পরদিন আয়োজন করা হয়েছে ‘আনন্দ মিছিল’। এর মধ্য দিয়ে বোয়ালখালী ও পটিয়া উপজেলাসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের অন্তত এক কোটি মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হতে যাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সকাল ৯টায় বোয়ালখালীর সর্বস্তরের নাগরিক সমাজ ও বোয়ালখালী কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের যৌথ উদ্যোগে আনন্দ মিছিল বের হবে। মিছিলটি কালুরঘাট সেতুর পশ্চিম প্রান্ত থেকে শুরু হয়ে পূর্ব প্রান্তে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন বোয়ালখালী-কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মুস্তফা নঈম।

তিনি আরও জানান, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কর্তৃক কালুরঘাট সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে শুকরিয়া আদায় এবং সেতুর নির্মাণকাজ সুন্দর ও সূচারুরূপে যাতে দ্রুত সম্পন্ন হয়, শুক্রবার (১৬ মে) বোয়ালখালীর সকল মসজিদে জুমার নামাজের পর দোয়া ও বিশেষ মোনাজাত করার জন্য সকল মসজিদের খতিবদের প্রতি বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে বোয়ালখালী-কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের পক্ষ থেকে। একইভাবে বোয়ালখালীর অপরাপর ধর্মালম্বীদের প্রতিও বিশেষ অনুরোধ জানানো হয়, তারা যেন সেতু নির্মাণকাজ সুসম্পন্ন হওয়ার বিষয়টি প্রার্থনায় রাখেন।

আনন্দ মিছিলে যোগ দিতে বোয়ালখালীর সর্বস্তরের নাগরিক সমাজের পক্ষে সৈয়দ জাকির হোসাইন ও সাংবাদিক মনজুর মোরশেদ এবং বোয়ালখালী-কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের পক্ষে আহ্বায়ক আবদুল মোমিন ও যুগ্ম আহ্বায়ক সাংবাদিক মুস্তফা নঈম বোয়ালখালীর সর্বসাধারণের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

১৪ মে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম সফর করবেন। মূলত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম সমাবর্তনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টার চট্টগ্রাম সফর উপলক্ষ্যে কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর রেল ও সড়ক সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ওইদিন প্রধান উপদেষ্টার ব্যস্ত সূচির কারণে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে বেলা ১১টা ৪৫ মিনিট থেকে ১টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত একটি সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সুবক্তগীন বলেন, প্রধান উপদেষ্টার অনুরোধেই ভিত্তিপ্রস্তর ফলকটিতে উদ্বোধনকারীর নাম যুক্ত না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে এটি দেশের উন্নয়ন প্রকল্পে এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত হয়ে উঠছে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালে একনেকে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পটির পরামর্শক নিয়োগে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এতে আটটি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়ার পর এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট (ইওআই) ডাকা হয়েছে। দু’ধাপে এ নিয়োগ সম্পন্ন করতে প্রায় ছয় মাস সময় লাগবে। এরপর জমি অধিগ্রহণ ও প্রকল্পের ডিটেইল ডিজাইন চূড়ান্ত করে ২০২৬ সালের মাঝামাঝিতে ভৌতকাজ শুরু করবে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। ৭শ’ মিটার দৈর্ঘ্যের (মূল সেতু) সেতুটি ২০৩০ সালের মধ্যে নির্মাণ শেষ করতে চাইছে রেলওয়ে।

আরও জানা গেছে, সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য হবে ১১ কিলোমিটার ও প্রস্থ ১০০ ফুট। তবে নদীর ওপর মূল সেতুর দৈর্ঘ্য হবে মাত্র ৭০০ মিটার। উভয় পাশে সাড়ে চার কিলোমিটার করে ভায়াডাক্ট নির্মাণ হবে।

এক্সট্রা ডোজ টাইপ সেতুটির একপাশে দুটি ডুয়াল গেজ রেলপথ ছাড়াও অন্য পাশে স্ট্যান্ডার্ড মানের দুই লেনের (প্রতিটি লেন ১৮ ফুট) সড়ক ছাড়াও উভয় পাশে সার্ভিস লেনসহ (পাঁচ ফুট করে) পথচারী পারাপারের সুব্যবস্থা রাখা হবে। সেতুটির নদীর অভ্যন্তরে পাঁচটিসহ মোট সাতটি স্প্যান থাকবে।