শিরোনাম
রোস্তম আলী মন্ডল
দিনাজপুর, ৯ মে ২০২৫ (বাসস) : জেলার বিরল উপজেলার কৃষক এনতাজুল মাচায় উন্নত জাতের দেশি পটল চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
প্রথমবারেই দেশি জাতের পটল চাষে অধিক লাভবান হওয়ায় কৃষক এনতাজুলের মুখে হাসি ঝরছে। দেশি পটল চাষ করে যথেষ্ট সাড়া ফেলেছেন এই কৃষি উদ্যোক্তা। তার সফলতা দেখে উৎসাহিত হচ্ছেন অনেক কৃষক। এধরণের পটল চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করতে কাজ করছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
বিরল উপজেলার মোকলেছপুর গ্রামের ইব্রাহিম আলীর পুত্র এনতাজুল হক (৩২) গত বছর ২৫ শতাংশ জমিতে দেশি পটল চাষ করে প্রচুর লাভবান হয়েছেন। চলতি বছর তিনি গত বছরের তুলনায় তিনগুণ জমিতে পটল চাষ করেন। ৭৫ শতক জমিতে দেশি জাতের পটল চাষ করে গত বছরের চেয়ে এবারের ফলন আরও বেশি ভালো হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আয় করতে পারবেন বলে আশা করছেন এনতাজুল।
বিরল উপজেলা কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন জানান, গত বছর ২৫ শতাংশ জমিতে এনতাজুল মাচায় দেশি জাতের পটল চাষ করেন। অনুকূল আবহাওয়ায় দেশি পটলের ফলন ভালো হয়। গত বছর তিনি পটল চাষের খরচ বাদে প্রায় ৭০ হাজার টাকা লাভ করেন। এই অভিজ্ঞতা থেকে এনতাজুল এ বছর ৭৫ শতাংশ জমিতে উচ্চ ফলনশীল দেশি জাতের পটল মাচায় চাষ করেছেন। অন্য ফসলের চেয়ে পটলে বেশি লাভ হওয়ায় ভবিষ্যতে তিনি আরও বেশি জমিতে দেশি পটলের চাষ করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
পটল চাষি এনতাজুল বলেন, আমি বিরল উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় আধুনিক চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করে দেশি জাতের পটল চাষ করে আশাতীত ফল পেয়েছি। এরই মধ্যে সবজি ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করা শুরু করেছি। দেশি জাতের পটল খেতে খুব সুস্বাদু। পটলের চামড়া পাতলা, আকারে মাঝারি এবং ছোট সাইজের হয়। যে সব গ্রাহক একবার দেশি পটল খেয়েছেন, পরেরদিন আবার বাজারে এসে এই দেশি পটলের খোঁজ করছেন।
বিরল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সারোয়ার হোসেন জানান, বিগত প্রায় ১০/১২ বছর জেলার হাটবাজারগুলোতে হাইব্রিড পটলের ছড়া-ছড়ি লক্ষ্য করা গেছে। হাইব্রিড পটল সাইজে বড় ও খোসা মোটা হয়। কিন্তু খেতে খুব একটা সুস্বাদু নয়। হাইব্রিড পটল শুরু থেকেই ভিতরে বিচি বড় থাকে ও খাবার সময় খসখসা লাগে। বিষয়টি লক্ষ্য করে কৃষি বিভাগ নতুন করে গবেষণা করে দেশি পটল চাষে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেয়। ফলে গত দুই বছর ধরে উন্নত জাতের দেশি পটল চাষে কৃষি বিভাগ সফল হয়েছে। এখন এই জেলার সমগ্র হাটবাজারগুলোতে নতুন জাতের দেশি পটল গ্রাহকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
তিনি জানান, হাইব্রিড পটল যেখানে ৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, সেখানে দেশি পটল পাইকারি ৫০ টাকা এবং খুচরা ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গ্রাহকরা হাইব্রিড ৩০ টাকা কেজি পটল ক্রয় করতে আগ্রহী না হয়ে, বেশি দাম দিয়ে দেশি জাতের পটল কিনছেন।
কৃষি বিভাগের উদ্ভাবন করা উন্নত জাতের দেশি পটল চাষে কৃষকরা আগ্রহী উঠেছে। দেশি পটল চাষ করে অধিক মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছেন। এই দেশি জাতের পটল শুধু এই জেলাতে নয়, প্রতিদিন দিনাজপুরের বিভিন্ন উপজেলা থেকে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পাইকারেরা নিয়ে যাচ্ছে। এখন সারাদেশেই কৃষি বিভাগের উদ্ভাবন করা নতুন জাতের দেশি পটল গ্রাহকদের কাছে সুস্বাদু সবজি হিসেবে গ্রহণ যোগ্যতা পেয়েছে।
একই এলাকার তরুণ কৃষক রবিউল ইসলাম (৩০) বলেন, বাজারে দেশি পটলের চাহিদা অনেক বেশি। তাই আমি এ বছর ৩০ শতক জমিতে নতুন জাতের দেশি পটল আবাদ করেছি। গত ২০ দিনে আমার পটলের ক্ষেত থেকে ১৮ হাজার টাকার পটল পাইকারি বিক্রি করেছি। আমি আগামী মৌসুমে আরো বেশি জমিতে আধুনিক পদ্ধতিতে উন্নত জাতের দেশি পটলের আবাদ করব। এজন্য এখন থেকে আগাম প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি।
স্থানীয় তরুণ কৃষক আসাদ আলী (২৮) বলেন, আজ আমি এনতাজুল ভাইয়ের পটল চাষ পদ্ধতি দেখতে এসেছি। তার আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারে উন্নত জাতের দেশি পটল চাষ দেখে খুব ভালো লাগল। আমি আগামী বছর আমার জমিতে উন্নত জাতের দেশি পটল চাষ করব ইনশাআল্লাহ।
বিরল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোস্তফা হাসান ইমাম বলেন, রফতানিমুখী কৃষির কথা বিবেচনা করে, সম্পূর্ণ জৈবিক উপায়ে একটি প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের মাধ্যমে উন্নত জাতের দেশি পটলসহ নিরাপদ ও বিষমুক্ত সবজি আবাদ করা হচ্ছে। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল দেশের বিভিন্ন সুপারসপসহ বিদেশে রফতানি করতে পারেন। এর মধ্যে এই জেলার উৎপাদিত উন্নত জাতের দেশি পটল রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলার থাই ও চাইনিজ রেস্টুরেন্টে জনপ্রিয় সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে কৃষি অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে।