শিরোনাম
ঢাকা, ৬ মে, ২০২৫(বাসস) : দীর্ঘ ১৭ বছর পর শাশুড়ি বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেশে ফিরেছেন ডা. জোবাইদা রহমান।
বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়িবহর গুলশানের বাসভবন ফিরোজার উদ্দেশ্যে ১১ টা ২০ মিনিটে রওয়ানা করে। তার সঙ্গে রয়েছেন দুই পুত্রবধূ জুবাইদা রহমান ও শামিলা রহমান।
আবেগাপ্লুত নেতা-কর্মীদের সামাল দিতে বেগ পেতে হচ্ছে নিরাপত্তায় নিয়োজিতদের। এর আগে বেগম খালেদা জিয়াকে বহনকারী কাতারের রাজপরিবারের বিশেষ বিমান (এয়ার অ্যাম্বুলেন্স) সকাল সাড়ে ১০টা ৪৩ মিনিটের দিকে রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
ডা. জোবাইদা রহমান
ডা. জোবাইদা রহমান ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর স্বামী তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনের উদ্দেশে বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন। এরপর একে একে ১৭টি বছর কেটে গেলেও দেশে ফিরতে পারেননি তিনি। স্বামী তারেক রহমান ও একমাত্র সন্তান জায়মা রহমানকে নিয়ে লন্ডনে বসবাস করছিলেন। লন্ডনে চিকিৎসা শেষে বাংলাদেশ সময় সোমবার (৫ মে) রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে বহনকারী কাতারের রাজকীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকার উদ্দেশে উড়াল দেয়।
২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অভিযোগে তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান এবং শাশুড়ি ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ মামলায় ২০২৩ সালের এক রায়ে ঢাকার একটি আদালত জোবাইদা রহমানকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও ৩৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেন। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের। পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা।
জোবাইদা রহমানসহ অন্যদের আদালতের দেওয়া ওই সাজা স্থগিত হয়।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির জানান, জোবাইদা রহমান এখন শাশুড়ি বেগম খালেদা জিয়ার সাথে ফিরোজায় উঠছেন। এরপর রাজধানীর ধানমন্ডিতে তার বাবার বাসায় উঠবেন। ‘মাহবুব ভবন’ নামে পরিচিত বাড়িটি তার প্রয়াত বাবা সাবেক নৌবাহিনীর প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খানের। পৈতৃক বাড়িতে জোবাইদাকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতিও চলছে। দেশে ফিরে তিনি নিজের অসুস্থ মায়ের সঙ্গে থাকবেন।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুম্মান বলেন, বাসভবনটির নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রস্তুতি ও সংস্কার কাজ সম্পন্ন। বাসার চারপাশে দেয়ালের ওপরে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। নিরাপত্তাব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্য ছাড়াও এসময় বিএনপির চেয়ারপার্সনের সিকিউরিটি ফোর্সের (সিএসএফ) সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করবেন।
তিনি বলেন, বাড়িটি আগে থেকেই ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে। তবে, ডা. জোবাইদা রহমানের ফিরে আসার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে আমরা বাড়তি ব্যবস্থা নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সুনির্দিষ্টভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন, কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা যেন প্রতিবেশীদের অসুবিধার কারণ না হয়। আমাদের স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, আশপাশের বাসিন্দাদের যেন কোনো অশান্তি না হয়। চেয়ারম্যান চান সবকিছু সতর্কতা ও সম্মানের সঙ্গে হোক।
রুম্মান বলেন, মাহবুব ভবনের সামনের দিকে একটি ফুলের বাগান এবং নিরাপত্তা কর্মীদের জন্য একটি নির্দিষ্ট গার্ড রুম রয়েছে। সশস্ত্র নিরাপত্তা, বাসভবনে পুলিশের উপস্থিতি এবং জোবাইদা রহমানের সম্ভাব্য নিরাপত্তা হুমকির কথা উল্লেখ করে আর্চওয়ে স্ক্যানার স্থাপনের জন্য গত ৩০ এপ্রিল পুলিশের মহাপরিদর্শকের কাছে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার।
তিনি বলেন, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে বাড়িটি পরিদর্শন করেছেন এবং তার নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার রূপরেখা দিয়েছেন।
জোবাইদা রহমান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে সাফল্যের সাথে এমবিবিএস পাস করেন। পরে লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে মেডিসিনে এমএসসি করেন। তিনি চিকিৎসকদের সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষায় প্রথম হয়ে ১৯৯৫ সালে চিকিৎসক হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। তবে ২০০৮ সালে শিক্ষা ছুটি নিয়ে লন্ডনে যাওয়ার পর দ্বিতীয় মেয়াদে ছুটি বাড়ানোর পরেও ফেরত এসে চাকরিতে যোগ না দেওয়ায় তাকে বরখাস্ত করেছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
জোবাইদা রহমানের জন্ম বাংলাদেশের সিলেট জেলায়। তিনি প্রয়াত রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলীর মেয়ে। মাহবুব আলী সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বাংলাদেশের নৌবাহিনীর প্রধান ছিলেন। তিনি যোগাযোগ ও কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানী জোবাইদা রহমানের চাচা। ১৯৯৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তারেক রহমানের সঙ্গে জোবাইদা রহমানের বিয়ে হয়। ১৯৯৫ সালে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে যোগ দেন তিনি। ২০০৮ সালে শিক্ষা ছুটি নিয়ে তিনি স্বামী তারেক রহমানের চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান। সে থেকে লন্ডনে কেটে যায় তার জীবনের ১৭ বছর।
এ সময়ে জোবাইদা রহমান জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে নানা মানবিক ও জনস্বার্থমূলক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত থেকে ভূমিকা রেখে চলেছেন।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের পাশাপাশি ডা. জোবাইদা রহমানও শাসকগোষ্ঠীর রোষানলের শিকার হন।