বাসস
  ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৯:৩২

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদকে কৃষিখাত থেকে আলাদা করে সুবিধাবঞ্চিত করা হয়েছে : ফরিদা আখতার 

ছবি: পিআইডি

চট্টগ্রাম, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদকে কৃষিখাত থেকে আলাদা করে সুবিধাবঞ্চিত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের বিদ্যুৎবিল বেশি হওয়ায় এই খাতের উদ্যোক্তা ও খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। 

তিনি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর সৃষ্ট একটি সরকারের মাধ্যমে আমরা বৈষম্য টিকিয়ে রাখতে পারিনা। এটা আমাদের জন্য একটা চরম বৈষম্য। এই খাতের বিদ্যুৎ বিল কমাতে আমরা কাজ করছি।’

আজ বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের এক যুগপূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী ‘সিভাসু ফিশ ফেস্টিভ্যাল-২০২৫’ এর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সিভাসু অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত ফেস্টিভ্যালের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিভাসু’র উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান এবং সভাপতিত্ব করেন মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. শেখ আহমাদ আল নাহিদ।

সিভাসু কর্তৃপক্ষকে ফিশিং কমিউনিটির সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘মৎস্যখাতে মুখ্য অবদান রাখছেন আমাদের মৎস্যজীবীরা। মৎস্যজীবীরা না থাকলে নদী আর সমুদ্রভর্তি মাছ থাকলেও আমাদের কোনো লাভ হতো না। ফিশারিজ কমিউনিটির সামাজিক অবস্থা যদি উন্নত করা না যায়, তাহলে নতুন প্রজন্ম এই পেশায় থাকবে না।

তিনি বলেন, ‘মৎস্যখাতের উন্নয়নে ইন্ডাস্ট্রির ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। এই ইন্ডাস্ট্রিকে আরো সম্প্রসারণ করতে হবে। কারণ সরকার একা অনেক কিছুই করতে পারবে না। আমরা যদি ইন্ডাস্ট্রিকে পাশে পাই, আমাদের মৎস্যজীবীদেরকে যদি আমরা রক্ষা করতে পারি, তাহলে মৎস্যখাতে বাংলাদেশ সারাবিশ্বে আরো ভালো অবস্থানে থাকতে পারবে।’

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস তো সবসময় বলেন যে তোমরা উদ্যোক্তা হও। উদ্যোক্তা হওয়ার অনেক সুযোগ মৎস্য খাতে আছে। সেখানে মন্ত্রণালয়ের দিক থেকে যে কাজটি করতে হবে, সেটা হলো সুযোগগুলোকে তৈরি করে দেয়া। তাদেরকে উপকরণ ও পরিবেশগত সহায়তা দেয়া। সেটা যদি দেয়, তাহলে নিশ্চয়ই তারা করতে পারবে।

তিনি বলেন, এখন বাংলাদেশের যে ডেমোগ্রাফি তাতে দেখেন আমাদের ৩০ বছরের নিচের জনসংখ্যাটা কিন্তু মোট ৫০ শতাংশের ওপরে। এই জনগোষ্ঠীর বৃহদাংশ যাতে মৎস্য খাতে নানাভাবে আসে সে দিকে নজর দিতে হবে। যে যেভাবে পারুক, সে শিক্ষায় আসুক কিংবা উদ্যোক্তা হিসেবে আসুক। 

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আতিয়ার রহমান, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড. মো. আবদুর রউফ, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. অনুরাধা ভদ্র, কক্সবাজার-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও নিরিবিলি গ্রুপের চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান কাজল এবং এসিআই এগ্রোলিংক লিমিটেডের বিজনেস ডিরেক্টর সৈয়দ এম ইসতিয়াক।

দুইদিনের ফিশ ফেস্টিভ্যালের সেরা স্টল, সেরা গবেষণা প্রবন্ধ ও পোস্টার উপস্থাপকদেরকে সার্টিফিকেট ও ক্রেস্ট দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়। 

এসময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার ফেস্টিভ্যালের স্টল, বিশ্ববিদ্যালয়ের এনাটমি ও ফিশারিজ মিউজিয়াম পরিদর্শন করেন। 

উল্লেখ্য দুই দিনব্যাপী ফেস্টিভ্যালে ২৬টি বিশ্ববিদ্যালয়সহ মৎস্য সেক্টরের সঙ্গে জড়িত ৯৫টি প্রতিষ্ঠানের ৫৫০ জন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, গবেষক, উদ্যোক্তা, ভোক্তা এবং প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। 

বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে দেশবিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান হতে একঝাঁক বিজ্ঞানী ৩৫০টি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।

বাংলাদেশ শ্রিম্প অ্যান্ড ফিশ ফাউন্ডেশনের (বিএসএফএফ) সহযোগিতায় সিভাসু’র মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ এই ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করে।