বাসস
  ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৯:২৬

গরু মোটাতাজাকরণ উদ্যোগ রাজশাহীর গ্রামবাসীদের ভাগ্য উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে 

গরু মোটাতাজাকরণ উদ্যোগ রাজশাহীর গ্রামবাসীদের ভাগ্য উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। ছবি: বাসস

// মো. আয়নাল হক //

রাজশাহী, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস): আসন্ন ঈদ-উল-আযহাকে সামনে রেখে গ্রামবাসীরা কাঙ্ক্ষিত লাভ অর্জন করায়, বিগত বছরের মতো এবারও এই অঞ্চলে গরু মোটাতাজাকরণ কার্যক্রম প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে।

গত কয়েক দশক ধরে পশুসম্পদ সমৃদ্ধ করার মাধ্যমে, গ্রামবাসীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার ক্ষেত্রে ঘরে ঘরে এই ধরনের গরু মোটাতাজাকরণ কার্যক্রম ব্যাপক অবদান রাখছে।

স্থানীয় চাহিদা পূরণের পর এই ব্যবসা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গরু সরবরাহের সম্ভাবনা উজ্জ্বল করেছে। তাছাড়া, দেশীয় গবাদি পশুর উৎপাদন বৃদ্ধি এই অঞ্চলকে গবাদি পশু উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলেছে।

গত কয়েক বছর ধরে, বেশিরভাগ পশুর হাটে ক্রেতাদের দেশীয় পশু কিনতে দেখা গেছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক ড. আনন্দ কুমার অধিকারী বাসস-কে বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্থানীয় পশুপালন খাতে এক বৈপ্লবিক অগ্রগতি লক্ষ্য করা গেছে, যা এই অঞ্চলের শত শত মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন করেছে।

তিনি আরো বলেন, গ্রামীণ পরিবারগুলোর অনেকেই এখন বাণিজ্যিকভাবে ষাঁড় পালন ও মোটাতাজাকরণ করে প্রতি বছর বিপুল মুনাফা অর্জন করছে। নারীসহ কিছু দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষ এই খাতে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্থানীয় পশুপালন খাতে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জনের পর বর্তমানে, গরুর বাজারে রেকর্ড পরিমাণ গৃহপালিত পশুর সরবরাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

এদিকে, গত কয়েক বছর ধরে, অনেক গ্রামবাসীকে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে তাদের ষাঁড় মোটাতাজাকরণ করতে দেখা গেছে।

তারা স্টেরয়েড ট্যাবলেট বা ইনজেকশনের পরিবর্তে এখন খড়, গুড়, খইল, ছোলা, কালো ছোলা, সবুজ ঘাস ও গমের ভুসি ব্যবহার করে।

রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার হালিদাগাছি গ্রামে তার আধা-পাকা বাড়িতে ৪৫ বছর বয়সী মাবিয়া খাতুন বলেন, ‘আমি নিজে নিজে খড়, ঘাস ও অন্যান্য গরুর খাবার তৈরি করি।’

তার প্রতিবেশী আবদুস সাত্তার (৫৩) তার ব্যবসার সাফল্যের গল্প বর্ণনা করেন।

তিনি জানান, এলাকার কমপক্ষে ৪৩টি পরিবার লাভজনক কোরবানির গরুর বাজার ধরার জন্য ষাঁড়সহ গরু মোটাতাজা করছে।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ষাঁড় মোটাতাজা করার জন্য গ্রামে একটি উপার্জনশীল পরিবেশ দেখতে পাচ্ছি।’

ইতোমধ্যেই তারা তাদের ঐতিহ্যবাহী গার্হস্থ্য গরু পালন প্রক্রিয়াকে আধুনিক ও বাণিজ্যিক পদ্ধতিতে প্রতিস্থাপন করেছে।

তারা এখন বিভিন্ন অর্থ লেনদেনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। যার মধ্যে রয়েছে ষাঁড় কেনার জন্য বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া ও যথাসময়ে তা পরিশোধ করা।

জেলার দুর্গাপুর ও পুঠিয়া উপজেলায় ২৫০টিরও বেশি গরু মোটাতাজাকরণ খামার রয়েছে। এই খামারগুলোতে কৃষকরা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে প্রায় ১০ হাজার ষাঁড় মোটাতাজাকরণ করছেন।

এর পাশাপাশি, গ্রামবাসীরা স্বাস্থ্যকর পদ্ধতিতে ২৫ হাজারেরও বেশি ছাগল পালন করছেন।

ডা. আনন্দ অধিকারী এই পদ্ধতিকে জনস্বাস্থ্যের জন্য ইতিবাচক লক্ষণ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, প্রাণিসম্পদ বিভাগ এই ক্ষেত্রে কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করে আসছে।

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা কোরবানিতে (ঈদ-উল-আযহা) তাৎক্ষণিক লাভের জন্য হরমোন ও স্টেরয়েডসহ ক্ষতিকারক ওষুধ ব্যবহার করে অল্প সময়ের মধ্যে গরু মোটাতাজাকরণ করে বিক্রি করতে ব্যবসায়ী ও খামারিদের নিরুৎসাহিত করছি।’

নন্দীগ্রামে ষাঁড় মোটাতাজাকরণ খামারের মালিক তোজাম্মেল হক বলেন, কৃষকরা ষাঁড় পালন ও মোটাতাজাকরণে নতুন, উন্নত পদ্ধতি ও প্রযুক্তি গ্রহণ করেছেন- যা উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখছে।

বৃহৎ ও ক্ষুদ্র বেসরকারি কোম্পানিগুলোর ক্রমবর্ধমান সক্রিয় ভূমিকার কারণে বাজারের আকার সম্প্রসারিত হয়েছে।

সম্প্রসারণ পরিষেবায় তাদের পরিপূরক ভূমিকা পালনের মাধ্যমে, লাইন এজেন্সিগুলো বাজারের অংশীদারদের, বিশেষ করে স্থানীয় পরিষেবা প্রদানকারীদের (এলএসপিএস) সহায়তা করার জন্য সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

বাস্তবে, এলএসপিএস উৎপাদকদের প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও ইনপুট প্রদান করে এবং গড়ে প্রতি মাসে ৪ হাজার ৫০০ টাকা আয় করে। নিয়মিতভাবে, তারা এলাকায় প্রদর্শনী স্থাপনের মাধ্যমে উৎপাদকদের কাছে বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তি পৌঁছে দেয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুচিকিৎসা ও প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জালাল উদ্দিন সরদার বলেন, রাজশাহীতে গরু মোটাতাজাকরণের উদ্যোগ সফল প্রমাণিত হয়েছে- যা গ্রামীণ জীবিকা ও স্থানীয় অর্থনীতিতে উন্নতি সাধন করেছে।

প্রান্তিক পুরুষ ও নারীসহ অনেক কৃষক এটিকে একটি লাভজনক ও টেকসই আয়ের উৎসে পরিণত করেছে।

প্রাণিসম্পদ বিভাগের মতো সংস্থাগুলোর কাছ থেকে আধুনিক প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ ও সহায়তার মাধ্যমে এটি সহজতর হয়েছে।