বাসস
  ১২ জুলাই ২০২৫, ১৪:২১

ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

আইনজীবী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা, ১২ জুলাই ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশের ইতিহাসের কিংবদন্তিতুল্য আইনজীবী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদের ২২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।

তিনি সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন। তাঁর বড় ছেলে ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ দেশের বর্তমান প্রধান বিচারপতি।

ব্যারিস্টার ইশতিয়াক ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঐতিহাসিক মাসদার হোসেন মামলা ও অষ্টম সংশোধনী মামলার (আনোয়ার হোসেন বনাম বাংলাদেশ) প্রধান আইনজীবী ও স্থপতি ছিলেন।

১৯৩২ সালের ১৮ জানুয়ারি অবিভক্ত ব্রিটিশ ভারতের যুক্ত প্রদেশের গাজীপুরে সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর পরিবারের সঙ্গে তিনি পূর্ব বাংলায় চলে আসেন। ১৯৪৮ সালে ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, ১৯৫০ সালে ঢাকা কলেজ থেকে আইএ এবং ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক (সম্মান) ও ১৯৫৪ সালে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যে যান এবং ১৯৫৮ সালে লিংকনস ইন থেকে বার-এট-ল এবং লন্ডন স্কুল অব ইকনমিকস থেকে অর্থনীতিতে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯৬০ সাল থেকে আমৃত্যু তিনি আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৬১ ও ৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন অধ্যাপক হিসেবে আইন শাস্ত্র পড়িয়েছেন। ১৯৭২ ও ১৯৯১ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন উপদেষ্টা ছিলেন। ১৯৭২ সালে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এবং ১৯৭৬ সালে অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিযুক্ত হন।

দু’বার তিনি সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং দু’বার বার কাউন্সিলের অর্থনৈতিক কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৭ সালে কোম্পানি আইন সংস্কার কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৮১ সালে ১৯১৩ সালের কোম্পানি আইনের সংস্কার প্রস্তাব করেন। তিনি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ল’ অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের (বিলিয়া) চেয়ারম্যান (১৯৯২-২০০৩) এবং বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) প্রতিষ্ঠাতা-চেয়ারম্যান ছিলেন।

তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে (১৯৭৮) বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নেন এবং শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও মালদ্বীপে আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

চার দশকের বেশি সময় ধরে আইন পেশায় তিনি সিভিল আইন ও সংবিধানিক আইন বিশেষজ্ঞ হিসেবে অনন্য খ্যাতি অর্জন করেন। সুপ্রিম কোর্ট তাকে ‘অ্যামিকাস কিউরি’ (আদালতের বন্ধু) হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল। 

সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় তিনি ১৯৯০ ও ৯৬ সালে সাপ্তাহিক যায় যায় দিন, সাপ্তাহিক রোববার, খবরের কাগজ ও দৈনিক মানবজমিনের প্রকাশ বন্ধের সরকারি নির্দেশের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে জয়লাভ করেন।

এরশাদের সামরিক শাসনের বিরোধিতায় তিনি ১৯৮৩ ও ১৯৮৭ সালে কারাবরণ করেন।

১৯৯১ সালে সংসদীয় শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রবর্তনে অবদান রাখেন। তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সাপ্তাহিক যায় যায় দিন ১৯৯৫ সালে তাকে ‘ডেমোক্রেসি অ্যাওয়ার্ড’ স্বর্ণপদক প্রদান করে।

১৯৫৫ সালের জুনে তিনি বিয়ে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক এবং বাংলাদেশের প্রথম নারী জাতীয় অধ্যাপক সুফিয়া আহমেদকে। এই দম্পতির দুই সন্তান, প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ এবং চিকিৎসক রাইনা আহমেদ।

২০০৩ সালের ১২ জুলাই, বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের অধিকারী ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।