বাসস
  ০৫ আগস্ট ২০২৫, ১৭:৩৩

জয়পুরহাটে সেদিন বিক্ষোভ মিছিলে হামলায় একজন নিহত 

ফাইল ছবি

মাসুদ রানা

জয়পুরহাট, ৫ আগস্ট ২০২৫ (বাসস) : জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান চলাকালে আজকের দিন জয়পুরহাট ছাত্রজনতার দখলে ছিল। ৩৬ দিনের গণআন্দোলন সেদিন বিজয়ের মধ্য দিয়ে পূর্ণতা পায়। জেলার আপামর জনগণ সে বিজয়কে স্বাগত জানাতে সড়কে নেমে পড়ে। এরমধ্যেও হামলায় প্রাণ হারান একজন।

সেদিন ছিল সোমবার। সকাল থেকেই শহরের বিভিন্ন রাস্তায়, বিভিন্ন মোড়ে ছাত্র-জনতাকে কখনও একত্রিত আবার কখনও খণ্ড খণ্ড মিছিল করতে দেখা যায়। পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করলেও লাভ হয়নি। পুরো শহরে দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। 

দুপুরের দিকে যখন খবর পাওয়া গেল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবিতে তোপের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন। তখন শুরু হয়ে যায় আরেক দফা মিছিল। শহরে হাজার হাজার লোকজন ও ছাত্র-জনতা গ্রুপে গ্রুপে ভাগ হয়ে পড়ে। সড়কে এতো লোকের সমাগম আগে কখনো দেখেনি শহরবাসী। 

আন্দোলনকারীরা জয়পুরহাট সদর উপজেলা পরিষদে হামলা ও ভাঙচুর করে। জয়পুরহাট পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়। তবে তখন পর্যন্ত হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

বিকেলে ৩টার পর থেকে হাজার হাজার মানুষ জয়পুরহাট শহরের জিরো পয়েন্ট পাঁচুর মোড়ে জড়ো হতে থাকে। সেখানে লোকজন আনন্দ উল্লাস ও মিছিল করে। আন্দোলন ঘিরে পুরো জেলার মধ্যে ২ পৌরসভায় দিনে শিথিল ও রাতে কারফিউ থাকলেও তা অকার্যকর হয়ে পড়ে। বিকেলে হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ জনতা শহরের সরকারি কলেজের পাশে শান্তিনগর মহল্লায় যায়।  

সেখানে আওয়ামী লীগ সরকারের হুইপ, জয়পুরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের বাসায় হামলা চালায় ও অগ্নিসংযোগ করে। অপরদিকে জয়পুরহাট সদর থানা ঘেরাও করা হয়। থানার ভেতরে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে ছাত্র-জনতা। 

এ সময় থানা থেকে পুলিশ সদস্যরা জনতাকে লক্ষ করে টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ছুঁড়তে থাকে। পরে আন্দোলনকারীরা সদর থানার উত্তর পশ্চিম কোনে এবং পূর্ব দিকে থানার প্রাচীর ভাঙ্গতে থাকে এবং থানার ভেতরে বেশ কিছু মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধরা। 

খবর পেয়ে সেনা সদস্যরা আসে পুলিশ সদস্যদের উদ্ধারে। সেনা সদস্যদের গাড়িতে পুলিশ সদস্যরা থানা ত্যাগ করার সময় বিক্ষুব্ধ জনতা পুনরায় আক্রমণের চেষ্টা করলে সেখানে শহরের নতুনহাট এলাকার অটোচালক মেহেদী হাসান (২৯) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। 

এরপর কিছু সময় সেখানে স্তব্ধতা থাকলেও খানিক পরেই জয়পুরহাটের রাজপথ আবার উচ্ছল হয় ছাত্রজনতার বিজয় মিছিলে।