বাসস
  ০৪ আগস্ট ২০২৫, ১৬:৩৪

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ মাথাচাড়া দিলে ছাত্রজনতা বিভেদ ভুলে তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নেবে: মুখলেসুর রহমান সুইট 

মুখলেসুর রহমান সুইট। ছবি: বাসস

আবু উবায়দা

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া, ৪ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস): জুলাই ছাত্রজনতার আন্দোলনের অন্যতম সম্মুখযোদ্ধা মুখলেসুর রহমান সুইট বলেছেন, শিক্ষার্থী ও জনগণের যৌক্তিক দাবিতে আমরা এখনও মাঠে আছি। এছাড়া যখনই আওয়ামী লীগ মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে, ছাত্রজনতা সকল বিভেদ ভুলে আবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে। এ থেকেই বোঝা যায় আমাদের মাঝে সাময়িক কিছু মতপার্থক্য দেখা দিলেও যৌক্তিক অধিকার আদায়ে বা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমরা এখনও ঐক্যবদ্ধ।

২০২৪ এর জুলাইয়ে সারাদেশের মতো কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও বৈষম্যের বিরুদ্ধে জ্বলে উঠেছিল দীপ্ত মশাল। কোটা সংস্কারের দাবিতে উত্তাল হয় বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’ এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে শিক্ষার্থীরা গর্জে উঠেছিল, আর সেই আন্দোলনের অন্যতম সম্মুখযোদ্ধা ছিলেন এস এম সুইট।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মুখলেসুর রহমান সুইট (এস এম সুইট) ছাত্রজীবনের শুরু থেকেই যুক্ত ছিলেন নানা আন্দোলন ও সংগ্রামে। সুইটের কণ্ঠে ছিল সাহস, নেতৃত্বে ছিল আগুন, আর চোখে ছিল পরিবর্তনের স্বপ্ন।

সম্প্রতি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)- এর ‘জুলাই জাগরণ’ শীর্ষক ধারাবাহিক সাক্ষাৎকারে এস এম সুইট তুলে ধরেন আন্দোলনের পেছনের গল্প, মাঠের অভিজ্ঞতা এবং ভবিষ্যৎ স্বপ্নের কথা। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আবু উবায়দা।

বাসস: আন্দোলনে সমন্বয়ক হিসেবে আপনার যাত্রা কীভাবে শুরু হয়? কেন্দ্রের সাথে কীভাবে যোগাযোগ করেন?

এস এম সুইট: যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমি সবসময় সোচ্চার ছিলাম। আমার অনেক বন্ধুই মনে করতো এইসব আন্দোলন করে কিছু হবে না। তবে আমার মনে হতো, কাজ হোক বা না হোক, আমি আমার চেষ্টা করে যাবো। সেই চিন্তা থেকেই আমি ’১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছি। একই ধারাবাহিকতায় ’২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনেও আমি চেয়েছিলাম কিছুটা হলেও অবদান রাখতে। সেই ভাবনা থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন বন্ধুর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের সাথে যোগাযোগ করি। শুরুর দিকে আমাদের একটি জুম মিটিং হয়, যেখানে নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদসহ আরও অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। আন্দোলন কীভাবে সংগঠিত করা যায়, সে বিষয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করি। পরবর্তীতে ঢাকার সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ ও আরিফ সোহেলের সাথে আমার যোগাযোগ হতো। বিশেষ করে হান্নান ভাই মেসেঞ্জারে আমাকে প্রোগ্রামের আপডেট দিতেন।

এরপর ৭ই জুলাই ৬৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক কমিটি প্রকাশিত হয়। সেখানে আমাকে কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক হিসেবে যুক্ত করা হয়। আমি তাদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করতাম। ক্যাম্পাসে যখন আন্দোলন চলতো, তখনও আমি কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ রাখতাম, আপডেট দিতাম এবং পরামর্শ নিতাম।

বাসস: শুরুর দিকে কি আপনি এই আন্দোলনকে শুধুই কোটা সংস্কার আন্দোলন হিসেবে ভেবেছিলেন?

এস এম সুইট: মূলত ২০১৮ সালে ‘কোটা বাতিল’ নামক এক প্রহসনের শিকার হয়েছিলাম আমরা। পরে, ২০২৪ সালে এসে হাইকোর্ট কোটা বহালের পক্ষে রায় দিলে ছাত্রসমাজ তা মেনে নেয়নি। সেই স্পিরিট ধারণ করে আমিও আমার অবস্থান থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলন হিসেবেই সক্রিয় হই। তবে ধীরে ধীরে তৎকালীন আওয়ামী সরকারের দমন পীড়ন ও নির্যাতন আমাকে ভাবতে বাধ্য করে এই আন্দোলন হয়তো আর শুধু কোটা সংস্কারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। ১৫ জুলাই ঢাবি প্রাঙ্গণসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শেখ হাসিনার অনুগত ছাত্রলীগ বাহিনী প্রায় চার শতাধিক শিক্ষার্থীর ওপর হামলা চালায়। তখনই আমি বুঝে যাই শুধু কোটা সংস্কার করে এই আন্দোলন থামানো যাবে না এবং আমরাও বিচার না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বো না। এরপর আবু সাঈদের বুকে গুলি করে শেখ হাসিনা কার্যত নিজের রাজনৈতিক পতনের সূচনা করেন। সেই মুহূর্ত থেকে আমি আর এটাকে কেবল কোটা সংস্কার আন্দোলন হিসেবে দেখিনি। এই আন্দোলন রূপ নেয় এক স্বৈরশাসকের অন্যায়ের বিরুদ্ধে জনতার প্রতিরোধে।

বাসস: ক্যাম্পাসে মোট কতদিন আন্দোলন হয়েছিল?

এস এম সুইট: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে মূলত ২ জুলাই থেকে আন্দোলন শুরু হয়। ধীরে ধীরে তা বেগবান হয়ে ওঠে। আমরা ১৪ জুলাই কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করি। ওইদিন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে চৌড়হাস মোড় থেকে শুরু করে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ এক পদযাত্রা করি। পরবর্তীতে আন্দোলন ক্যাম্পাসেই চলতে থাকে। ১৭ ও ১৮ জুলাই ক্যাম্পাসে ব্যাপকসংখ্যক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ইন্টারনেট শাটডাউনের কারণে আন্দোলনের গতি কিছুটা স্থবির হয়ে পড়ে। তবে ২১ জুলাই আবারও আমরা শিক্ষার্থীদের মাঝে আন্দোলনের বার্তা পৌঁছে দিই এবং ক্যাম্পাসে কর্মসূচি পালন করি। এর মধ্যে কয়েকবার কুষ্টিয়া শহরের সঙ্গে সমন্বয় করে যৌথ আন্দোলনের পরিকল্পনা থাকলেও, দূরত্ব ও প্রশাসনিক নজরদারির কারণে তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। পরে ১ আগস্ট থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আন্দোলন নতুন করে শুরু হয় এবং তা শেষ হয় শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মাধ্যমে।

বাসস: আন্দোলনের শুরুর দিনগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান কেমন ছিল?

এস এম সুইট: যেদিন আমরা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন শুরু করি, সেদিন মূলত ছাত্র ইউনিয়নের কয়েকজন মিলে শুরু করি। অল্প কিছু সাধারণ শিক্ষার্থী ছিল আমাদের সাথে। পরবর্তী দিনগুলোতে ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বাড়তে থাকে। 

ফ্যাসিবাদ বিরোধী অবস্থানে থাকা সব ছাত্রসংগঠনই তাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে ভূমিকা পালন করেছে। ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়নসহ অন্য কিছু সংগঠনের ক্যাম্পাসে যেহেতু নেতাকর্মী কম ছিল, তারা তাদের পুরো সামর্থ্য দিয়ে চেষ্টা করেছে। অন্যদিকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে থেকেই ছাত্রশিবিরের জনবল বেশি ছিল। আন্দোলনে তাদের সব জনবলই অংশ নেয়। ১৭ জুলাই হল বন্ধের পর সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমে যেতে থাকলে আন্দোলন চালিয়ে নিতে ছাত্রশিবির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বাসস: আন্দোলনের কোন সময়টা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ও কঠিন ছিল?

এস এম সুইট: আন্দোলনের টার্নিং পয়েন্ট ছিল হল বন্ধ করে দেওয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে আমরা যতটুকু নিরাপদ ছিলাম, বাইরে তার এক চুল পরিমাণও নিরাপদ ছিলাম না। দেশের পরিস্থিতি তখন ভয়াবহ, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী অস্ত্র হাতে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে হামলা করছে। এমন সময় ক্যাম্পাস ত্যাগ করে আশপাশের ছাত্রাবাসে অবস্থান নেওয়া আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল। ইতোমধ্যে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ঘোষণা দিয়ে আমাকে খোঁজাখুঁজি শুরু করেছিল। তারা আমাকে একা পেলে মেরে ফেলতে দ্বিধাবোধ করত না। তবুও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করেছি এবং আন্দোলনের অংশীদার হয়েছি। পরবর্তীতে দেশে কারফিউ জারি করা হলো। সারাদেশে সকল সশস্ত্র বাহিনীকে ডেপ্লয় করা হলো। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রচুর সংখ্যক আর্মি, বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। আমি এই সময়টাতে আমার সহযোদ্ধাদের নিয়ে খুব চিন্তিত থাকতাম। প্রশাসন আমাদের উপর আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিলে হয়তো ইবির বুকে লাশের বন্যা বয়ে যেত।

বাসস: সমন্বয়ক হিসেবে কার্যক্রম নিয়ে আপনার পরিবারের অবস্থান কেমন ছিল?

এস এম সুইট: আপনারা হয়তো জেনে থাকবেন, আমি ছাত্রজীবনের শুরু থেকেই সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে এসেছি। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী শাসনামলেও আমি ছাত্রলীগের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছি। সে কারণে আমার বাড়ির লোকজন মোটামুটি জানতো আমি ১৮-এর আন্দোলনে অ্যাকটিভ ছিলাম এবং ২৪-এর আন্দোলনেও অংশ নেবো, সেটা তাদের কাছে সহজেই অনুমেয় ছিল। তবে সমন্বয়ক হিসেবে নাম আসার পর আমার বাড়ির লোকজন একটু ভয় পেয়ে যায়। পরবর্তীতে আন্দোলনের মোড় ঘুরতে থাকলে স্থানীয় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের লোকজন আমার পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে হুমকি দিতে থাকে। গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন আমার পরিবারকে মানসিকভাবে নানা ধরনের চাপ প্রয়োগ করে। এ সময় তারা আমাকে নিয়ে ভীষণ চিন্তিত ছিলেন। তবে যেহেতু এই আন্দোলন আর কোটা সংস্কারে সীমাবদ্ধ ছিল না, হাজার হাজার লাশের ওপর দিয়ে হাসিনা রাজনীতি করে যাচ্ছিলেন, তাই বাড়ির লোকজনও পরবর্তীতে আমার আন্দোলনে থাকা নিয়ে কোনো আপত্তি জানায়নি।

বাসস: আন্দোলনে হামলা বা হুমকির শিকার হয়েছিলেন কিনা?

এস এম সুইট: জুলাই অভ্যুত্থানে যারাই অংশ নিয়েছিল তারা সবাই কোনো না কোনোভাবে হামলা অথবা হুমকির শিকার হয়েছিল। আমাকে বেশ ক’বার এমন অবস্থায় পড়তে হয়েছে। ঢাকার সাথে সমন্বয় করে যখন আমাদের ক্যাম্পাসে আন্দোলন চলছিলো, সেসময় একদিন ছাত্রলীগের একটি মিছিল সাদ্দাম হোসেন হলের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। আমি পাশেই বসে দুপুরের খাবার খাচ্ছিলাম। সেসময় ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় আমাকে অকথ্য ভাষায় জীবননাশের হুমকি দেয়। পরবর্তীতে আমি জানতে পারি সেদিন আমার উপর আক্রমণের পরিকল্পনা ছিল তাদের, তবে সেখানে গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত থাকায় তারা তা করতে পারেনি। এর পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় আমাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। তৎকালীন সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত, সহ-সভাপতি মাসুদ রানা, সাংগঠনিক সম্পাদক মেজবাহ আমাকে বারংবার প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে। তারা আমার পাশাপাশি আন্দোলনকারীদের নানাভাবে হুমকি দিয়েছিলো। শহীদ জিয়াউর রহমান হলে অবস্থানরত একজন আন্দোলনকারীকে তারা মারধরও করেছিলো। এছাড়া ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা সেসময় সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের বুলিং করেছে এবং মিথ্যা তথ্য প্রচারের মাধ্যমে তাদের চরিত্রহননেরও চেষ্টা করেছে।

বাসস: আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগ ও আওয়ামীপন্থী শিক্ষক কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ড কেমন ছিল?

এস এম সুইট: কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরুর দিকে আমরা বেশ কিছু ছাত্রলীগ কর্মীকে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে দেখেছি। তবে শেখ হাসিনা কর্তৃক ছাত্রদের রাজাকার ট্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে আমরা যখন ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’ স্লোগান দেই, তারপর থেকেই ছাত্রলীগ আমাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। তারা আন্দোলনকারীদের দমন করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছিল। তাদের কাছে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র মজুদ ছিল, যা আমরা ৫ আগস্টের পর তাদের রুম তল্লাশি করে উদ্ধার করি। তবে ১৭ তারিখ শিক্ষার্থীদের বিপুলসংখ্যক উপস্থিতি আঁচ করে তারা দুপুরের মধ্যে ক্যাম্পাস ছেড়ে পালিয়ে যায়। সেদিনই মূলত ইবি ছাত্রলীগ মুক্ত হয়। এছাড়া, আপনারা জানলে অবাক হবেন, যেখানে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে মাঠে নেমেছিলেন, আমাদের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী প্রায় শতাধিক শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী ৪ আগস্ট শাপলা ফোরামের ব্যানারে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নিয়ে মিছিল করেন। সাবেক প্রক্টর ড. মাহবুবের নেতৃত্বে ‘আর নয় হেলাফেলা, এবার হবে ফাইনাল খেলা’ এমন উগ্র স্লোগান দিয়ে তারা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সরাসরি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। পরে শিক্ষার্থীদের বিশাল উপস্থিতি টের পেয়ে তারা সেখান থেকে পালিয়ে যান।

বাসস: শিক্ষার্থীদের কীভাবে আন্দোলনে আসার জন্য অনুপ্রাণিত করতেন?

এস এম সুইট: এটা ছিল একটি যৌক্তিক এবং প্রাসঙ্গিক আন্দোলন। আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা এবং তার গুরুত্ব তুলে ধরেই মূলত শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতাম। এ সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছিল প্রচারের প্রধান মাধ্যম। আমরা ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে বিভিন্ন বিভাগ ও সামাজিক সংগঠনের গ্রুপগুলোতে প্রচার করতাম এবং সবাইকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করতাম। কোটা প্রথার মাধ্যমে কীভাবে সকল স্তরে কৃত্রিম বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছিল, তা শিক্ষার্থীদের মাঝে তুলে ধরতাম।

বাসস: আন্দোলনে নারী শিক্ষার্থী ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের অবস্থান কেমন ছিল?

এস এম সুইট: আন্দোলনে নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিল অভাবনীয়। শুরুর দিকে নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম হলেও দ্রুতই তা বাড়তে থাকে। আমরা সবসময় তাদেরকে বলিষ্ঠ অবস্থায় দেখেছি। সারাদেশের ন্যায় ইবিতেও তারা মিছিলের সামনের সারিতে থাকতো। আশ্চর্যজনকভাবে হল বন্ধ করে দেয়ার পরও নারী শিক্ষার্থীদের অনেকেই বাসায় না গিয়ে আশেপাশের মেসে অবস্থান করে আন্দোলনে অংশ নেয়। অনেকে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ শহর থেকে বাসে করে এসে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল। এছাড়া ক্যাম্পাসের সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও তাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা যার যার অবস্থান থেকে এই আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিতে থাকে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি ও জামায়াতপন্থী শিক্ষকরা প্রথম দিকে মাঠে না এলেও কুষ্টিয়া শহরে গ্রেপ্তার হওয়া ৩০ জন শিক্ষার্থীকে ছাড়িয়ে নিতে তারা কাজ করেছেন। শিক্ষক-কর্মকর্তাদের অনেকে আমাদের মানসিকভাবে শক্তি যুগিয়েছেন। ৩ আগস্ট বিএনপি ও জামায়াতপন্থী শিক্ষকরা আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করে ছাত্রদের সাথে একই কাতারে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে। আমরা সেই শিক্ষকদের কাছে কৃতজ্ঞ। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষরাও আন্দোলনে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। তারা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে খাওয়া দাওয়া সমস্ত বিষয়ে আমাদের খুব সাহায্য করেছে। ছোট বাচ্চা, নারী, বৃদ্ধ সকলে একসাথে আন্দোলনে শরিক হয়েছিলো। সবাই নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে দেশ থেকে স্বৈরাচারমুক্ত করতে কাজ করেছে।

বাসস: ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের সময় ও কারফিউয়ের দিনগুলোতে কীভাবে সমন্বয় করতেন? হল বন্ধ হওয়ার পর আন্দোলন কীভাবে চালিয়েছিলেন?

এস এম সুইট: আপনারা জানেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭ই জুলাই মাত্র এক ঘণ্টার নোটিশে হল বন্ধ করে দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা সবাই যার যার মতো বাসায় চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। তবে অনেকেই আন্দোলনের গুরুত্ব বুঝে আশেপাশের ছাত্রাবাসে অবস্থান নিয়েছিলেন। তাদের নিয়েই আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছিলাম। যেহেতু পরবর্তীতে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়, আমরা আর সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আন্দোলনের বার্তা পৌঁছাতে পারছিলাম না। তাই মুঠোফোনে যাদের কাছে পারতাম আন্দোলনের ম্যাসেজ দিয়ে দিতাম। তারা বাকি শিক্ষার্থীদের কাছে সেই ম্যাসেজ পৌঁছে দিতো। 

ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের সময় নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার ঢাকার বিভিন্ন মিডিয়া হাউজের ১৬ জনের নাম ও মোবাইল নম্বর আমাকে দিয়েছিলেন। ব্ল্যাকআউটের সময় তাদের টেক্সট পাঠাতাম। এছাড়াও মুঠোফোনের মাধ্যমে প্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ করে সমন্বয় করতাম। কিন্তু এর পর শুরু হয় আরেকটি নির্যাতন। আশেপাশের ছাত্রাবাসগুলোতে পুলিশ অভিযান শুরু করে। আন্দোলনকারী সন্দেহে শিক্ষার্থীদের হেনস্তা এবং গ্রেফতার শুরু করে তারা। এর মধ্যেও আমরা কেউ এলাকা ছাড়িনি। যতটুকু পারতাম সেফ থেকে আবার আন্দোলনের ডাক দিতাম।

বাসস: আন্দোলনের সময় জীবনের ঝুঁকি ও রাতে পুলিশি অভিযান থেকে কীভাবে নিজেকে রক্ষা করেছেন?

এস এম সুইট: আমাকে বারবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আন্দোলন থামানোর জন্য চাপ দিয়ে আসছিল। ঢাকার কয়েকজন সমন্বয়ক যখন গ্রেফতার হন, তখন ধীরে ধীরে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে ওঠে। নিরাপত্তাজনিত কারণে আমি কোন বাসায় থাকি তা গোপন রাখা হতো, এবং পুলিশ যেন লোকেশন বের করতে না পারে সেজন্য ফোনে নতুন নতুন সিম ব্যবহার করতাম। আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকায় আমাকে প্রশাসনের লোকজন খুঁজতে থাকে। তবে ঝুঁকি নিয়েও প্রতিদিনের কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছি। একটা ব্যাগে কিছু কাপড় ও প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে কয়েকদিনে কয়েক জায়গায় লোকেশন বদলিয়েছি। তাছাড়া আন্দোলনের শেষ সময় পর্যন্ত আমার খোঁজ খবর নিতেন তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সভাপতি আবু মুসা ভাই।

বাসস: আন্দোলন দমনে প্রশাসনের ভূমিকা কেমন ছিল?

এস এম সুইট: আন্দোলন দমনে প্রশাসন নগ্ন ভূমিকা পালন করেছিল। কিছুতেই আন্দোলন দমাতে না পেরে তারা কিছু শিক্ষার্থীকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে ফাঁদে ফেলে এবং আন্দোলন প্রত্যাহারের নাটক সাজায়। পরবর্তীতে পুনরায় আমি আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিই এবং শিক্ষার্থীরা তাতে পূর্ণ সমর্থন জানায়।

বাসস: ৫ আগস্টের পর আন্দোলন দমনে ভূমিকা রাখা শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি?

এস এম সুইট: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে ৪ আগস্ট একটি কলঙ্কময় অধ্যায়। আমাদের পিতৃতুল্য শিক্ষকরা আমাদের ওপর ঘটে যাওয়া এই পাশবিক নির্যাতনের বিরোধিতা করেনি; বরং আমাদের বিরুদ্ধে তারা সরাসরি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য স্লোগান দিয়ে মিছিল করেছিল। সেই মিছিলে উপস্থিত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নামসহ দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার শেষ পাতায় গত ৪ নভেম্বর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিল। এছাড়া তাদের মিছিলের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতেও রয়েছে। এরপরও বর্তমান প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বারবার বললেও তারা এই বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে না। পাশাপাশি আমি মনে করি বিএনপি ও জামায়াতপন্থী শিক্ষক-কর্মকর্তারাও এর দায় এড়াতে পারবেন না। তারা যদি শক্ত অবস্থানে থাকতেন, এই সমস্ত শিক্ষক-কর্মকর্তারা বুক ফুলিয়ে ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াতে পারতেন না, আর শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার স্বপ্নও তারা দেখতো না। আশা করছি দ্রুত সকলে মিলে একসাথে সেই চিহ্নিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাসস: সারাদেশে ফ্যাসিবাদীরা শিক্ষার্থীদের উপর আক্রমণ করলেও ইবিতে কেন করতে পারেনি বা করেনি?

এস এম সুইট: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা খুব পরিকল্পনা মাফিক আন্দোলন করতাম। সার্বক্ষণিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরবর্তী পরিকল্পনা সম্পর্কে ধারণা রাখার চেষ্টা করতাম। শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত ও ব্যাপক অংশগ্রহণের কারণে ছাত্রলীগ আক্রমণের সাহস করেনি। ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিএনপি-জামায়াতের শক্ত অবস্থানও তাদের ভয়ের কারণ ছিল। এছাড়া ১৭ জুলাই হল বন্ধ হওয়ার দিন ক্যাম্পাসে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। প্রায় দেড় হাজারের মতো শিক্ষার্থী অংশ নেয় বিক্ষোভে। ঘটনা আঁচ করতে পেরে ক্যাম্পাসে থাকা গুটিকয়েক ছাত্রলীগের নেতাকর্মী দুপুরের আগেই ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যায়। বিক্ষোভে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি দেখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও ভয় পেয়ে যায়। এরপর থেকে পরবর্তী সময়গুলোতে পরিস্থিতি আন্দোলনকারীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। রাজনৈতিক কোনো বাধা আসেনি। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ইবি প্রেসক্লাবের সভাপতি মুনজুরুল ইসলাম নাহিদ, সাংবাদিক সমিতির তৎকালীন সেক্রেটারি তাজমুল জায়িমসহ অন্য সাংবাদিকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফলে সারাদেশে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা হলেও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে তা ঘটেনি।

বাসস: ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে আপনার অভিমত কী? ইকসু গঠনে আপনাদের অবস্থান কী?

এস এম সুইট: রাজনীতির প্রতি শিক্ষার্থীদের বিরূপ ধারণার কারণ হলো আমাদের দেশের সকল রাজনৈতিক দলই শুধু দলীয় পারপাস সার্ভ করার জন্য রাজনীতি করে, শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের বিষয়টি এখানে ততটা গুরুত্ব পায় না। তাই চব্বিশের আন্দোলনের অন্যতম চাওয়া ছিল ক্যাম্পাসগুলোতে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হোক। তবে তার প্রতিফলন আমরা এক বছরেও দেখতে পাইনি। আমি মনে করি ক্যাম্পাসে সকল ধরনের লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা উচিত। আইনের দোহাই না দিয়ে প্রশাসনের উচিত দ্রুততম সময়ে ইকসু গঠন করা। এটা আগেও চেয়েছি, এখনো চাই। তবে খুব শীঘ্রই ইকসু গঠনের জোর দাবিতে আমরা রাজপথে নামবো ইনশাআল্লাহ।

বাসস: ৫ আগস্টের পূর্বের সেই স্পিরিট কি এখনও বিদ্যমান? ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবান্ধব দাবিগুলো আদায়ে আপনাদের আন্দোলন সংগ্রাম কি আগের মতোই হয়?

এস এম সুইট: আমরা একতাবদ্ধ ছিলাম বলেই আন্দোলনটা সফল হয়েছিলো। তবে ৫ আগস্টের পূর্বের স্পিরিট এখন পুরোপুরি না থাকলেও যথেষ্ট বিদ্যমান। শিক্ষার্থী ও জনগণের যৌক্তিক দাবিতে আমরা এখনও মাঠে আছি। এছাড়া আপনারা খেয়াল করে দেখবেন যখনই আওয়ামী লীগ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, ছাত্রজনতা সকল বিভেদ ভুলে আবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। এ থেকেই বোঝা যায় আমাদের মাঝে সাময়িক কিছু মতপার্থক্য দেখা দিলেও যৌক্তিক অধিকার আদায়ে বা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমরা এখনও ঐক্যবদ্ধ। এছাড়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা দাবিতেও আমরা একতাবদ্ধভাবেই কাজ করে যাচ্ছি। এখানে ছাত্রদল, শিবিরসহ সকল ছাত্রসংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থী সবাই যৌক্তিক দাবিগুলো আদায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বারবারই চাপ প্রয়োগ করে আসছি। তবে চাপ প্রয়োগে কাজ না হলে আমরা একসাথে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে পিছপা হবো না।

বাসস: আন্দোলন পরবর্তী প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে কিনা? কেমন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেন?
এস এম সুইট: আন্দোলন পরবর্তী প্রত্যাশা এখনও অনেকটাই পূরণ হয়নি। আমাদের প্রথম চাওয়া ছিল ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশ গড়া। কিন্তু ফ্যাসিবাদের জননী দেশ ছাড়লেও তার সন্তানরা এখনও দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসে রয়েছে। তাদের অপসারণ না করে এই আন্দোলনের প্রত্যাশা পূরণ সম্ভব না। এছাড়া আমরা চেয়েছিলাম নিরাপদ একটি বাংলাদেশ। আমি চাই আর কখনও যেন ফ্যাসিবাদ এদেশে মাথাচাড়া না দেয়। ১৯৪৭ এর দেশ ভাগ, ১৯৭১ স্বাধীনতা সংগ্রাম, এবং ১৯৯০ এর গণ-অভ্যুত্থানের সাম্য ও মানবিক মর্যাদা এবং সমঅধিকারের প্রত্যাশা এখনো পূরণ হয়নি। জনতাকে সবসময় সব রাজনৈতিক দলের স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে। আমি চাই এই দেয়াল ভেঙে যাক এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিরা দেশ এবং জনগণের বন্ধু হয়ে উঠুক। তরুণরা যেন ভীতি, লোভ লালসার ঊর্ধ্বে উঠে দেশ গঠনে অংশ নেয়। নতুন বাংলাদেশে যেন কেউ আর ‘শেখ হাসিনা’ হয়ে উঠতে না পারে। যদি কেউ ফ্যাসিস্ট আচরণ করে, তাহলে আমরা তরুণ সমাজ তাদের প্রতিহত করবো। আমরা চাই, বিগত ৫০-৫৫ বছরে যা হয়নি, সেটা যেন নতুন বাংলাদেশে শুরু হয়। সত্যিকারের গণতন্ত্র, মানবিকতা ও জবাবদিহিতার ভিত্তিতে গড়ে উঠুক নতুন প্রজন্মের স্বপ্নের দেশ।