বাসস
  ০৪ আগস্ট ২০২৫, ১৫:২৮

নওগাঁর রাজপথে নেমেছিল মানুষের ঢল

নওগাঁ শহরে রাজপথে নেমেছিল মানুষের ঢল। ছবি : বাসস

 বাবুল আখতার রানা

নওগাঁ, ৪ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : চব্বিশে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে সারাদেশে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ কর্মসূচির প্রেক্ষিতে গত ৪ আগস্ট সকালে নওগাঁ শহরের কাজীর মোড় থেকে এটিম মাঠ পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করা হয়। 

পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির ব্যাপক প্রভাব সকাল ১০টার পর থেকে পড়তে দেখা গেছে নওগাঁয়। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা জেলা প্রশাসকের পদত্যাগও দাবি করেন। দিনব্যাপী জেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, সমাবেশ আর আন্দোলন চলছিল। এতে যোগ দেন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার হাজার হাজার মানুষ। এতে আরো উজ্জীবিত হন আন্দোলনকারীরা। 

সারাদেশে শিক্ষার্থীদের হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা সড়ক অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। সেখান থেকে ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’, ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার’, ‘দফা এক দাবি এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ’, ‘এক দুই তিন চার, খুনি হাসিনা গদি ছাড়’, ‘আমার ভাই মরলো কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত’, ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘এই মুহূর্তে দরকার, সেনাবাহিনীর সরকার’ সহ বিভিন্ন সরকারবিরোধী স্লোগান দিতে দেখা যায়। 

এরপর শিক্ষার্থীরা সড়কে বের হলে তা গণমিছিলে রূপ নেয়।  ঠিক তখনই পুলিশের সামনে শিক্ষার্থীদের সেখান থেকে ঘরে ফিরে যেতে বলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এতে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেন শিক্ষার্থীরা। তখন তাদের কণ্ঠে স্লোগানের আগুন ঝরে।

চব্বিশের আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী ইফতেখার রহমান ও তানভীর শিহাব বলেন, নওগাঁয় আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে। তখন আমরা প্রতিজ্ঞা করেছিলাম ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতন আমরা ঘটিয়েই ছাড়ব। আমরা সরকারের কাছে যৌক্তিক দাবি উত্থাপন করেছিলাম অথচ সেই দাবি আদায় করতে গিয়ে শত শত ভাই-বোনদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। কয়েক হাজার শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নওগাঁয় নেতৃত্ব দেওয়া ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আরমান হোসেন বলেন, সে সময় সারা রাত ফেসবুকে গুজব ছড়িয়েও বিক্ষোভে শিক্ষার্থীদের ঢল আটকাতে পারেনি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা। আমাদের আন্দোলনে সাধারন মানুষ অংশগ্রহণ করেছিলেন। কারন আমাদের দাবি ছিল ন্যায্য।

তিনি আরো বলেন, অনেক ত্যাগ, শ্রম, ঘাম ঝড়ানো ও রক্তের বিনিময়ে আমরা একটি ফ্যাসিবাদ মুক্ত দেশ পেয়েছি। সেই দিনগুলোর কথা মনে হলে এখনো গা শিউরে ওঠে। শুধু রাস্তায় দাঁড়ানো নয়, এটা ছিল বুকের ভেতর থেকে আসা প্রতিবাদ। ফ্যাসিস্টরা আমাদের দমিয়ে রাখতে চেয়েছিল কিন্তু নওগাঁর মানুষরা সব সসময় জেগে ছিল। কেউ পিছু হটেনি। তাই আমাদের আন্দোলন সফল হয়েছে।

চব্বিশের আন্দোলনে নওগাঁয় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছেন রিজভী আহম্মেদ। তিনি বলেন, আমরা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন (নওগাঁ ব্লাড সার্কেল) পোস্টার ছাপিয়েছি, পত্রিকা বিলিয়েছি, রাতে নিঃশব্দে শহরে লিফলেট ছড়িয়েছি। কেউ নাম জানে না, কেউ চেনে না, তবু আমরা ছিলাম, আছি। আন্দোলন শুধু মিছিল নয়, আন্দোলন একটা মনোভাব। সেটা নওগাঁর প্রতিটি গলিতেই ছড়িয়ে গিয়েছিল। এছাড়াও আমাদের সঙ্গে নওগাঁর বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন যুক্ত হয়ে এক যোগে কাজ করেছি। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নওগাঁয় নেতৃত্ব দেয়া আরেক সংগঠক ফজলে রাব্বি বলেন, আমাদের সঙ্গে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা অংশ নিয়েছিলেন। আমরা একটি পরিপাটি ও সুন্দর বাংলাদেশ প্রত্যাশা করেছিলাম। যে বাংলাদেশ হবে শোষণমুক্ত, বঞ্চনা, দুর্নীতিমুক্ত উন্নত বাংলাদেশ। 

তিনি বলেন, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় এমনও রাত গেছে বাড়ি ছেড়ে জঙ্গল, ধানক্ষেতসহ নানা স্থানে পালিয়ে থেকেছি। আমাকে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। সব হুমকি ও ভয়ভীতি মাথায় নিয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রতিটি কর্মসূচির সঙ্গে সব সময় যুক্তছিলাম।