শিরোনাম
।। ফারাজী আহম্মদ রফিক বাবন।।
নাটোর, ৪ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : জুলাই গণঅভ্যুত্থানের দিনগুলোতে গত ৪ আগস্ট আবারো উত্তাল হয়ে উঠে নাটোরের রাজপথ। শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত জনপদে যেন বিদ্রোহ আর বিপ্লব চারিদিকে। হাসিনা সরকারের নির্দেশে পুলিশের শক্ত অবস্থানের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন ক্যাডার বাহিনীর অস্ত্রের মহড়ার ছিল ঝনঝনানি। এর বিপরীতে আন্দোলনকারীদের অবস্থান ছিলো স্টেডিয়াম এলাকায় সেচ ভবনের সামনে। সেদিন গুলির বিপরীতে গুলতি মেরে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন শিক্ষার্থীরা।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে চব্বিশের ১৮ জুলাই ছিলো রেড লেটার ডে। সেদিন নাটোর শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে সমাবেশের ডাক দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা। তাদের খণ্ড খণ্ড মিছিল আর প্রতিরোধে গুলি চালায় পুলিশ, টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। শরীরে চার শতাধিক স্পিøন্টার বিদ্ধ হয়ে রাজপথে অচেতন হয়ে পড়েন জুলাই যোদ্ধা আবু জাহিদ রাহী’র মত প্রায় অর্ধ শতাধিক শিক্ষার্থীসহ আন্দোলনকারীরা।
৪ আগস্ট আবারো শহরের স্বাধীনতা চত্বর থেকে স্টেডিয়াম পর্যন্ত এলাকা উত্তাল হয়ে পড়ে। সে সময় শিক্ষার্থীদের প্রতিপক্ষ পুলিশের সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল, তৎকালীন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান এবং তাদের ক্যাডার বাহিনী যোগ দেয়।
শফিকুল ইসলাম শিমুল পুরনো বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এবং শরিফুল ইসলাম রমজান মাদ্রাসা মোড় এলাকায় অবস্থান নেন। তাদের ক্যাডার বাহিনী শহরের প্রবেশপথগুলোতে অবস্থান নেয়। মোটরসাইকেলযোগে শহরময় চলতে থাকে মহড়া। শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন সেচ ভবন এলাকায়। সেচ ভবনের সামনে থাকা ইট সড়কে বিছিয়ে নাটোর-বগুড়া মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা।
‘খুনি হাসিনা’র গদিতে, আগুন জ্বালো একসাথে’, ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরো দেব রক্ত’, ‘রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়’-এসব ম্লোগানে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সেদিন অংশগ্রহণ করেন স্থানীয় বাসিন্দা আর ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা। বেলা একটার দিকে এই অবস্থান হয় আরো সুসংহত।
এদিকে দেশীয় অস্ত্র হাসুয়া, রামদা, লাঠিসোটা হাতে নিয়ে হাসিনা সরকারের ক্যাডার বাহিনী আতঙ্ক তৈরি করে। শিক্ষার্থীরা কৌশলী হয়ে বারবার পাশের গলি পথে নিরাপদে চলে গেছেন, আবার ফিরে এসেছেন। প্রতিপক্ষের সশস্ত্র অবস্থানের বিপরীতে শিক্ষার্থীদের অবলম্বন ছিলো রাস্তায় ছড়িয়ে থাকা ইটের টুকরো। এদিন তাদের হাতে হাতে দেখা যায় মুঠোমুঠো মার্বেল আর গুলতি। গুলতি দিয়ে ছোড়া গুলিতে আহত হন প্রতিপক্ষের অনেকেই।
সেচ ভবনের সামনে থেকে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ধরে নিয়ে নির্যাতন চালায় শিমুলের বাহিনী। গণমাধ্যম কর্মীদের ক্যামেরা সচল থাকায় প্রাণে রক্ষা পাই-বলে জানান নাটোর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ওয়াসিফ ফেরদৌস।
একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এইচএসসি পরীক্ষার্থী শহীদ মোহনের একমাত্র সন্তান জুলাই যোদ্ধা ফারহান ফুয়াদ বলেন, এদিনের আন্দোলনে পুলিশ এবং শিমুল ও রমজানের অস্ত্রের সামনে সাহসী ভূমিকায় ছিলেন আমাদের বড়ভাই শহীদ মেহেদী হাসান রবিন। শহীদ রবিন একবস্তা গুলিসহ গুলতি সরবরাহ করেছিলেন। আমাদের সকলের হাতে হাতে গুলি আর গুলতি ছিলো। আমরা প্রতিপক্ষকে নিশানা করে ব্যবহারও করেছি।
গণমাধ্যম কর্মী কামরুল ইসলাম বলেন, গুলতি ব্যবহার করে কাঁচের গুলি কপালে লেগে আহত হতে দেখেছি অনেককে। ঐদিনের আন্দোলনে অনেক শিক্ষার্থীকে ক্যাডাররা ধরে নিয়ে নির্যাতন করার সময় শিক্ষার্থীদের হাতে কাঁচের গুলির সন্ধান পায় তারা। সেদিনের আন্দোলনে গুলি আর গুলতি নতুন মাত্রা যোগ করে।