শিরোনাম
ঝালকাঠি, ৩ আগস্ট ২০২৫ (বাসস) : ২০২৪ এর ৩ আগস্ট ছিল শনিবার, বাংলা ১৯ শ্রাবণ ১৪৩১, আর হিজরি ১৪৪৬ সনের ২৭ মহররম। বিকাল চারটায় ঝালকাঠি প্রেসক্লাবের সামনে বৃষ্টি উপেক্ষা করে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গণহত্যার প্রতিবাদসহ শেখ হাসিনার পতনের ১ দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রছাত্রীরা ঝালকাঠিতে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে। ১ দফা দাবিতে প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করে শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিক্ষোভ মিছিলসহ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে নানা স্লোগান দেয় আন্দোলনকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্রছাত্রীরা।
ওই দিন বিক্ষোভ সমাবেশের নেতৃত্ব দেন, নথুল্লাবাদ ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহসভাপতি আবির হোসেন লস্কর, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আব্দুর রহমান, ফারদিন হাসান প্রান্ত, সাইদুর রহমান তম্ময়, তারেক রহমান, নাঈম, তন্নী, লিমা ও মুয়াবিয়া মাখনুন, এদের পেছনে থেকে নেতৃত্ব ও সাহস দেন বিএনপি নেতা কেএম জুয়েল। আর এ সমাবেশে বক্তব্য দেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আবির হোসেন লস্কর, লামিয়া আক্তার ও ফারদিন হাসান প্রান্ত। মিছিলে অংশ নেয়ায় আবির লস্করকে পায়ের রগ কেটে দেয়াড় হুমকি দেয়, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আবদুল্লাহ মাসুদ মধু।
এ আন্দোলনে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। শান্তিপূর্ণ ভাবে বিক্ষোভ সমাবেশ পালন করে বিক্ষোভে অংশ গ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা। এসময় বক্তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, গুলি করে নিরীহ ছাত্র এবং সাধারণ মানুষকে হত্যার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে ১ দফা মেনে নিয়ে সরকারের পদত্যাগের দাবি জানান।
২০২৪ এর ৩ আগস্ট বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃত্ব দেয়া নথুল্লাবাদ ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহসভাপতি আবির হোসেন লস্কর বাসসকে বলেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমুর এলাকা হওয়ায় ঝালকাঠি শহরে ২৪ এর জুলাইয়ে তেমন কোন কর্মসূচি পালন করা সম্ভব হয়নি। আমুর চার খলিফারা ঝালকাঠি সরকারি কলেজের ছাত্রদের মিছিল মিটিং করতে বাধা দিয়ে বলে, এটা আমু ভাইর শহর, এখানে কোন প্রোগ্রাম করা যাবে না, তোমরা প্রয়োজনে বরিশাল গিয়ে প্রোগ্রাম করো আশা যাওয়ার খরচ আমরা দেব।
তিনি আরো বলেন, সারা দেশে আন্দোলন হচ্ছে অথচ আমরা কিছু করতে পারছি না, এই মনোকষ্টে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ৩ আগস্ট বিকালে সবাইকে ঝালকাঠি প্রেসক্লাবের সামনে একত্রিত হতে বলি। ভয়-ভীতি কাটিয়ে আমরা ৩০/৪০ জন সমাবেশ করে নিরাপদে চলে যাই। এরপর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মাসুদ মধুর পক্ষে এক ছাত্রলীগ নেতা বিক্ষোভ মিছিল করার অপরাধে আমার পায়ের রগ কেটে দেয়ার হুমকি দেয়।
অপরদিকে, একই দিন মানবাধিকার, ন্যায় বিচার ও সুশাসন নিশ্চিতে রাষ্ট্রকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগে ঝালকাঠি শহরে মানববন্ধন ও মৌন মিছিল করে টিআইবির সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)। সকাল ১১টায় শহরের ফায়ার সার্ভিস সড়কে এ মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশ নেন।
এ কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন, ঝালকাঠির সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি সত্যবান সেন গুপ্ত, সহসভাপতি রাবেয়া কবীর, সদস্য নজরুল ইসলাম, ছালেক আজাদ খান সোহাগ, হামিদা খানম, সবুর খান সবুজ, ইয়েস দলনেতা রিমন মাহমুদ, রাইহানা দিনা, লামিয়া আক্তার জিদনী, এসিজি সদস্য মো. সাব্বির হোসেন রানা এবং সাদিয়া হোসেন।
এতে সনাকের পক্ষে ১১ দফা সুপারিশ তুলে ধরেন, সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সহযোগী অ্যাক্টিভ সিটিজেন্স গ্রুপ (এসিজি) ও ইয়ুথ এনগেজমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট (ইয়েস) গ্রুপের সদস্যরা।
বক্তারা বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। যার দায় মূলত আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতার অপব্যবহারসহ সার্বিক সুশাসনের ঘাটতি এবং একচ্ছত্র ক্ষমতার দম্ভে অন্ধ, জনস্বার্থ বিচ্ছিন্ন, অবারিত স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বিবর্জিত, সীমাহীন দুর্নীতিগ্রস্ত শাসনব্যবস্থার দায় তাদের ওপরই বর্তায়।
৩ আগস্ট রাত ১১ টায় ঝালকাঠি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ৪ আগস্ট ঝালকাঠি শহরে যাতে সরকার বিরোধী কোন কর্মসূচি পালন না হয়, বা হলেও তা প্রতিরোধ করার জন্য এক জরুরি আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম ও পুলিশ সুপার আফরজুল হক টুটুল উপস্থিত ছিলেন। সভায় প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ, জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পক্ষে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ায় ডিসি, এসপির সামনে ঝালকাঠি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আককাস সিকদার ও সহসভাপতি আল-আমিন তালুকদারকে পোস্ট ডিলেট করতে হুমকি দেয়া হয়। সভা চলে রাত ২ টা পর্যন্ত। সভায় জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপার আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা করলে তা কঠোর হস্তে দমনের ঘোষণা দেন।
উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঝলকাঠি জেলা শহরে বা শহরতলীতে কেউ নিহত হয়নি। তবে ঝালকাঠি জেলার বাসিন্দা ১০ জন ঢাকার বিভিন্ন স্থানে শহীদ হন।
যাদের মধ্যে ৯ জনকে ঝালকাঠির গ্রামের যার যার বাড়িতে দাফন করা হয়। আর একজনকে ঢাকার মিরপুরে দাফন করা হয়।
ঢাকায় নিহতরা হলেন, ঝালকাঠির শিরযুগ গ্রামের বাসিন্দা ঢাকা মিরপুরের কাপড়ের দোকানের কর্মচারী মো. হৃদয় হাওলাদার (১৮), নলছিটির মল্লিকপুর গ্রামের বাসিন্দা ঢাকার গার্মেন্টেসের চাকুরীজীবি সেলিম তালুকদার (৩২), চ্যানেল আই এর গাড়ি চালক বিনয়কাঠির কামাল হোসেন সবুজ (৩৫), ঝালকাঠির চরহাইলাকাঠির গার্মেন্টস কর্মী রুবেল হোসেন (৩০), কাঠালিয়ার মহিষকান্দির দোকান কর্মচারী রাকিব হাওলাদার বুলেট (১৬), ঝালকাঠির দেউলকাঠির রাজমিস্ত্রী সাইফুল ইসলাম, নলছিটির রানাপাশার ছাত্র মো. নাঈম (২৪), ঝালকাঠির হোসেনপুরের মিজানুর রহমান (৩২), রাজাপুরের বড় কৈবর্তখালী গ্রামের মনির হোসেন (৩০) ও কাঠালিয়া উপজলার দক্ষিণচেচরী গ্রামের কাপড়ের দোকানের কর্মচারী মো. সুজন খান (৩৩)।