শিরোনাম
ঢাকা, ২ আগস্ট, ২০২৫(বাসস): বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ বলেছেন, আওয়ামী লীগের সময়ে সেন্সরশিপ একটি স্মার্ট রূপ লাভ করেছিল। আওয়ামী লীগ লেখক ও প্রকাশকদের ওপর অঘোষিত সেন্সরশিপ আরোপ করতো। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনামলে বই নিষিদ্ধ না করে প্রচার ও প্রকাশ বন্ধ করে দিত।
আজ শনিবার বিকেলে বাংলা একাডেমিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থান বইমেলার ‘রক্তাক্ত জুলাই: আমাদের স্মরণে আমাদের সাহসে’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনের ‘সেন্সরশিপ এবং বাংলাদেশের চিন্তা-জগৎ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, সে সময়ে আমরা নানা ধরনের সেন্সরশিপের মধ্য দিয়ে গিয়েছি। দেখা গেছে, বাংলা একাডেমি কোন একটি নির্দিষ্ট প্রকাশনীকে কিছু বই প্রকাশ করার কারণে স্টল বরাদ্দ দিচ্ছে না। আবার তাকে বলাও হচ্ছে না কেন স্টল বরাদ্দ দেওয়া হবে না। অর্থ্যাৎ সরকার একটি বইয়ের প্রচার ও প্রকাশ বন্ধ করে দিতে চায় কিন্তু তার দায় নিতে চায় না।
মাহবুব মোর্শেদ বলেন, আমরা দেখেছি, লেখক ও প্রকাশকদের বিভিন্নভাবে ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে। কোন কোন প্রকাশকের ব্যবসা পর্যন্ত ধ্বংস হয়ে গেছে। ফাহাম আব্দুস সালাম, জিয়া হাসান, ফয়েজ তৈয়ব আহমদসহ আরও যাদের বই নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তাদের কিন্তু বলা হয়নি যে, এই বইটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমরা খুঁজে বের করেছি, তাদের বই প্রকাশ করার কারণে প্রকাশককে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।
বাসসের প্রধান সম্পাদক বলেন, স্মার্ট সেন্সরশিপের আরও উচ্চতর রূপ আমরা দেখি আওয়ামী লীগের সময়ে যারা তাদের সমালোচনা করতো তাদেরকে নানাভাবে হয়রানি, নির্যাতন করা হতো। সে সময়ে শেখ হাসিনা, শেখ মুজিবকে নিয়ে সমালোচনা করে বই লিখে কেউ টিকে থাকতে পারেনি। ফেসবুকে এ সংক্রান্ত স্ট্যাটাস দিলে তাকে মামলা দেওয়া হতো, গ্রেপ্তার করা হতো। সারাদেশে অসংখ্য সাংবাদিক, সাধারণ মানুষ শিক্ষকদের কথা জানি যারা শেখ পরিবারের সমালোচনা করার কারণে জেল খেটেছে।
সেন্সরশিপের বিস্তৃতির কথা উল্লেখ করে মাহবুব মোর্শেদ বলেন, সেন্সরশিপ শুধু বই বা লেখার মধ্যে নেই। ফেসবুকেও একধরনের রেস্ট্রিকশনের মধ্য দিয়ে আপনাকে যেতে হয়। আওয়ামী লীগের সময়ে আমরা দেখেছি তাদের সমালোচনা করার কারণে কিছু প্রোফাইলকে রেস্ট্রিকশনের আওতায় এনে নিয়ন্ত্রণ করতো।
লেখক ও চিন্তক ইমরুল হাসান বলেন, সেন্সরশিপ আরোপ হয় এক ধরনের নয়েজ এর মাধ্যমে। নয়েজ এর মাধ্যমে আপনি যে কথাগুলো বলবেন সেগুলো হারিয়ে যাবে।
নানান নয়েজ তৈরি করা হয় যাতে আপনি গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলো বলতে না পারেন। যেমন, পরিমণি নাটকের শুটিং করলে ২০/২৫টা নিউজ পোর্টাল এটাকে নিয়ে নিউজ করে অকুপাই করে রাখে। এতে করে গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলো হারিয়ে যায়। আর এই সেন্সরশিপ বাস্তবায়ন হয় এক ধরনের নেটওয়ার্ক এর মধ্য দিয়ে। এ ছাড়া নীরবতার দিকে ঠেলে দেওয়ার মাধ্যমে সেন্সরশিপ আরোপ করতে আমরা দেখি।
আলোচনা সভায় এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন পুস্তক প্রকাশনীর পরিচালক আবুল বাশার ফিরোজ ও প্রকাশক আবু বকর সিদ্দিক রাজু।