বাসস
  ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৯:১৩

গোয়েন্দা পুলিশের নজরদারিতে বানচাল হয় মেহেরপুরের মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচি 

প্রতীকী ছবি

দিলরুবা খাতুন

মেহেরপুর, ৩১ জুলাই ২০২৫ (বাসস): দেশের অন্যান্য জেলার মতো সংক্ষুব্ধ আন্দোলন না হলেও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে দূরে থাকেনি মেহেরপুরের শান্তিপ্রিয় মানুষ। তারা মিছিল,সমাবেশ বা বিক্ষোভে ফেটে পড়েননি। তবে আন্দোলনের জন্য তৈরি করা অনলাইন প্লাটফর্মগুলোতে তারা ছিল সদা সক্রিয়।  

মেহেরপুরের ছাত্রসমাজের প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মাঠে আন্দোলন সংগ্রাম না করলেও সারাদেশের মানুষের সাথে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। আন্দোলনে অংশ নিতে ইচ্ছুক ছাত্ররা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ কখন কী বলছে, কি করছে সেগুলো অনুসরণ করার চেষ্টা করতেন। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের অনুসরণে ফেসবুক প্রোফাইল লাল করে প্রতিবাদ জানান তারা। 

তারা জানান, যারা চাকুরি করে তাদের অনেকের ফেসবুক প্রোফাইল লাল দেখে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা অফিসে অফিসে গিয়ে হুমকি দেয়। অনেকে ভয় পেয়ে প্রোফাইল পরিবর্তন করে। স্থানীয় কয়েকজন ছাত্র-শিক্ষক সরাসরি আন্দোলন করতে চাইলেও মাঠে নামতে পারেননি। 

৩০ জুলাই দিবাগত রাতে তারা ৩১ জুলাই সন্ধ্যায় স্থানীয় শহীদ ড. সামসুজ্জোহা পার্কে মোমবাতি প্রজ্বলনের মাধ্যমে শহীদদের স্মরণ ও প্রতিবাদ জানানোর সিদ্ধান্ত নেন। গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) পুলিশ বিষয়টি জেনে যায়। ৩১ জুলাই ভোরে ডিবি পুলিশ সৈকত, বাপ্পী, সাব্বির ও রাব্বীসহ কয়েকজন ছাত্রকে তুলে নিয়ে যায়। ‘মোমবাতি প্রজ্বলন করবে না’ এই মর্মে মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়। এতে তাদের মোমবাতি প্রজ্বলনের পরিকল্পনাও ব্যর্থ হয়। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র সংগঠক হাসনাত জামান সৈকত বাসসকে বলেন, ‘আমরা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের অনুসরণ করে ফেসবুক প্রোফাইল লাল করি। এরপর ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন হুমকি আসে। আমরা হুমকিদাতাদের অমান্য করে কয়েকজন বসে ৩১ জুলাই সন্ধ্যায় ড. শহীদ সামসুজ্জোহা পার্কে মোমবাতি প্রজ্বলনের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানোর সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু ডিবি পুলিশ জানতে পেরে রাব্বি, বাপ্পী এবং আমাকে তুলে নিয়ে যায়। আমাদের সাথে আরো কয়েকজন ছাত্রকেও তুলে নেয় পুলিশ। ‘মোমবাতি প্রজ্বলন করব না’- মর্মে মুচলেকা নিয়ে সেদিনই আমাদের সবাইকে ছেড়ে দেয়। 

তিনি বলেন, আমার বাবাকেও সেদিন ডিবি হেফাজতে নিয়ে মোমবাতি প্রজ্বলন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সতর্ক করে পুলিশ। সেদিন আমাদের মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচি বন্ধ হয়ে যায়।

মেহেরপুরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক শিক্ষক খন্দকার মুইজ উদ্দীন বলেন, দেশজুড়ে যখন প্রবল আন্দোলন চলমান সেসময় মেহেরপুরেও চলছে প্রস্তুতি গ্রহণ। ৩০ তারিখ দিবাগত রাতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ৩১ তারিখে সন্ধ্যায় শহীদ ড. শামসুজ্জোহা পার্কে শহীদদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বলন করা হবে। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাত ১টা নাগাদ সাব্বির আহমেদ আমাদের গ্রুপে মোমবাতি প্রজ্বলনের আহ্বান জানিয়ে একটি ম্যাসেজ দেয়। মুহূর্তেই সেটি বিভিন্ন জায়গায় শেয়ার হয় এবং সে অনুযায়ী আন্দোলনকারীরা প্রস্তুতি নিতে থাকেন। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে ডিবি পুলিশের তলবে। 

তিনি জানান, ৩১ জুলাই সকাল ১১ টা নাগাদ সাব্বিরকে ডিবি অফিসে নিয়ে গিয়ে বিভিন্নভাবে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়। এসময় আন্দোলনে ইচ্ছুক মেহেরাব, আশিক ও রাব্বিসহ আরো কয়েকজনকেও নিয়ে যায় ডিবি। অনলাইনে লিড দেওয়া হাসনাত জামান, প্লাবন, আমার বিষয়ে খোঁজখবর নেন। ‘মোমবাতি প্রজ্বলনের কর্মসূচি’ না করার শর্তে মৌখিক মুচলেকা নিয়ে ঘণ্টাখানেক পরে সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়। 

মুইজ উদ্দীন বলেন, পুলিশের কাছে মুচলেকা দিয়ে আসলেও সেদিন আমরা দমে যাইনি। আমরা শুধু উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষা করতে থাকি। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নতুন পরিকল্পনা সাজাতে থাকি।