শিরোনাম
বেলাল রিজভী
মাদারীপুর, ৩১ জুলাই, ২০২৫ (বাসস): ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতা গণঅভ্যুত্থানে ১৮ জুলাই মাদারীপুর ইউনাইটেড ইসলামীয়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে শিক্ষার্থীরা সমবেত হয়ে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে।
শিক্ষার্থীরা একটি প্রতিবাদী মিছিল নিয়ে শহরের শকুনী লেকের পাড়ে যায়। এ সময় নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের উপর বোমা হামলা ও গুলি বর্ষণ করে পুলিশ ও ছাত্রলীগ। এই হামলার কারণে মাদারীপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী দীপ্ত দেসহ শত শত শিক্ষার্থী প্রাণ বাঁচাতে পাশের শুকুনী লেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সেখানেও হামলা করে ছাত্রলীগ ও পুলিশ। পরে লেকের পানিতে ডুবে নিহত হয় দীপ্ত দে। এই ঘটনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে জেলা জুড়ে। বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে বিপ্লবী জনতা।
১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুর করে ছাত্র-জনতা। এসময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। পরে বিকেলে বিক্ষুব্ধ জনতা আগুন ধরিয়ে দেয় শহরের লঞ্চঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে। একই সময় দ্বিতীয় দফায় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগ করা হয়। এরপর জেলা জুড়ে শুরু হয় পুলিশের ধরপাকড়। তাতেও থামেনি আন্দোলন।
১৯ জুলাই শুক্রবার জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিপ্লবী জনতা আন্দোলন শুরু করে। জেলা সদর উপজেলার মস্তফাপুর, খাগদী এলাকাসহ জেলার দক্ষিণ অঞ্চল থেকে একটি বড় মিছিল আসতে শুরু করে জেলা শহরে।
এসময় শহরের খাগদী এলাকায় সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খানের মালিকানাধীন সার্বিক বাস ডিপো এবং সার্বিক ফিলিং স্টেশন পাড় হওয়ার আগেই পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ একযোগে হামলা করে মিছিলকারীদের উপর।
এসময় দুই পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। একপর্যায় ছাত্রলীগ ও পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয় রোমান বেপাারী এবং তাওহীদ সন্নাতম। চরমুগরিয়া আধুনিক হাসপাতালে গুলিবিদ্ধদের নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করে। এর জের ধরে বিক্ষুব্ধ জনতা শাজাহান খানের মালিকানাধীন বাস ডিপো এবং ফিলিং স্টেশনে আগুন ধরিয়ে দেয়। রাতের আধারে জেলা মুক্তিযোদ্ধা মিলনায়তন আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
এসময় ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠে জেলা । ২৭ জুলাই শনিবার দুপুরে ক্ষতিগ্রস্ত স্থান পরিদর্শনে আসেন তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি আন্দোলন কঠোর হাতে দমনের নির্দেশ দেন। তিনি শাজাহান খানের মালিকানাধীন বাস ডিপো পরিদর্শন শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বলেন, ‘সংযুক্ত আবর আমিরাতে সম্প্রতি কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের ঘটনায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাক্ষ্যপ্রমাণ নিয়ে সেভাবে তাৎক্ষণিক বিচার হয়েছে, ঠিক বাংলাদেশেও এমন অপরাধীদের দ্রুত সময়ে বিচারের আওতায় আনা হবে। সিসিটিভি ফুটেজ ও মোবাইলে ধারণ করা ভিডিওতে দুর্বৃত্তদের চেহারা ধরা পড়েছে।’
মাদারীপুরের খাগদী এলাকায় শাজাহান খানের মালিকানাধীন আগুনে পুড়ে যাওয়া বাস ও তেলের পাম্প পরির্দশন শেষে এ কথা বলে তিনি। আ ক ম মোজাম্মেল হক সেই সময় আন্দোলনকারীদের জঙ্গি আখ্যায়িত করেন। তিনি এই সময় দম্ভ করে বলেন, জঙ্গিদের একবারে নির্মূল করা সম্ভব হয় না। বিগত দিনে জামায়াত-শিবিরের আন্দোলন যেভাবে সংসদ সদস্য শাজাহান খান প্রতিহত করেছেন, সেই ক্ষোভেই তার মালিকানাধীন যানবাহন ও তেলের পাম্পে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করেছে দুষ্কৃতকারীরা।
তিনি আরও বলেন,‘১৯৭১ সালে যেভাবে পাক হানাদার বাহিনীদের সঙ্গে এদেশের দোসর রাজাকার, আলবদর, জামায়াত-শিবির তাণ্ডব চালিয়েছে, ঠিক তেমনি কোটা আন্দোলনের নামে যে ঘটনা, ১৯৭১ সালের হুবহু মিল রয়েছে। হামলাকারীরা চিহ্নিত সন্ত্রাসী, তাদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।’
এসময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন- নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মাদারীপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাজাহান খান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আসিবুর রহমান খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলাউল হাসান, শাজাহান খানের ভাই হাফিজুর রহমান যাচ্চু খান, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শাহজাহান হাওলাদার প্রমুখ।
এ প্রসঙ্গে জেলা জামায়াতের সদস্য গোলাম আজম ইরাদ বলেন, ২০২৪ সালের ২৭ জুলাই আমি কারাগারে ছিলাম। মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। হাসিনা সরকার পতনের পর আমি জেল থেকে মুক্ত হই। তৎকালীন আওয়ামী লীগের এমপি মন্ত্রীরা আমাদের বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দিতো। এখন তারা কেউ কারাগারে,কেউ পলাতক। এটা তাদের কর্মফল।
জেলা কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা নাজমুল হোসেন বলেন, কোটা বিরোধী আন্দোলন শুরু হলে এই আন্দোলনে যুক্ত হই। ১৭, ১৮ এবং ১৯ জুলাই মাদারীপুরে কঠোর আন্দোলন হয়। আমাদের ৩ সহযোদ্ধা শহীদ হয়। ব্যাপক ভাঙচুর হয় শহরের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। এর জের ধরেই অনেক মামলা হয়। আন্দোলনকারীরা থাকে পুলিশের ধাওয়ার উপর। আন্দোলনকারীদের ভয় দেখাতে ২০২৪ সালের ২৭ জুলাই মাদারীপুরে আনা হয় তৎকালীন এক প্রভাবশালী মন্ত্রীকে। তিনি আন্দোলনকারীতে জঙ্গি হিসেবে আখ্যায়িত করে দমন করার নির্দেশ দেন প্রকাশ্যেই। এই মন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের সব এমপি মন্ত্রীরাই গণহত্যার মদদদাতা। আমরা মোজাম্মেল হকসহ আওয়ামী লীগের সব এমপি মন্ত্রীদের বিচার বাংলার মাটিতে চাই।