বাসস
  ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৪:৩৯
আপডেট : ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৭:২৮

কুমিল্লায় একদিনে অন্তত ৫০০ জনকে গ্রেফতার 

গত বছরের ৩১ জুলাই কুমিল্লা নগরীর ফৌজদারী মোড়ে বসানো হয় পুলিশের নজরদারি চেকপোস্ট। ছবি : বাসস

দেলোয়ার হোসাইন আকাইদ

কুমিল্লা, ৩১ জুলাই, ২০২৫ (বাসস): বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে ৩১ জুলাই জাতীয়ভাবে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালিত হয়। কুমিল্লায় দিনভর নজরদারি, দমন-পীড়ন ও নীরব প্রতিরোধ অব্যাহত থাকলেও জেলার ছাত্র-জনতা এ কর্মসূচিতে অংশ নেন। 

দেশের অন্যান্য জেলায় পুলিশি হামলা ও সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেলেও কুমিল্লায় এদিন বড় কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। তবে প্রশাসনিক দমন এবং রাতভর গণগ্রেপ্তার নতুন মাত্রায় পৌঁছায়। কুমিল্লায় ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ৫০০ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

চব্বিশের শেষ জুলাইয়ের সকাল থেকেই নগরীর কান্দিরপাড়, টমছম ব্রিজ, ফৌজদারি মোড়, মোঘলটুলি, ঝাউতলা, শাসনগাছা, পদুয়ার বাজার, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাসহ বিভিন্ন স্থান ছিল পুলিশের কঠোর নজরদারিতে। শহরের মোড়ে মোড়ে বসানো হয় চেকপোস্ট। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মহড়া চলে বিভিন্ন পয়েন্টে। সাধারণ জনগণ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ে।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পূর্ব প্রস্তুতির অংশ হিসেবে কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত প্রতিরোধ কমিটির জরুরি বৈঠকে ‘গণবিক্ষোভ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ’ নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ফলস্বরূপ, ৩১ জুলাই সকাল থেকেই প্রশাসনের কঠোর অবস্থান নিশ্চিত করা হয়।

দিনভর পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর যৌথ অভিযানে শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে সক্রিয় ছাত্রনেতা, আন্দোলনকারী এবং সন্দেহভাজন সমর্থকদের গ্রেপ্তার করা হয়। কুমিল্লা কোতোয়ালি, মুরাদনগর, লাকসাম, চৌদ্দগ্রাম ও দেবীদ্বারসহ প্রায় প্রতিটি উপজেলায় পুলিশ অভিযানে নামে। পুলিশ এদিন আবাসিক এলাকাতেও অভিযানে নামে। দিন শেষে কুমিল্লা জেলা পুলিশের তরফে জানানো হয়, ৩১ জুলাই জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় ৫০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আটকদের মধ্যে অধিকাংশই বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ছাত্রনেতা ও সচেতন নাগরিক বলে জানা যায়। 

এদিকে দমন-পীড়নের মধ্যেও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ৩১ জুলাই সকাল থেকে ক্যাম্পাস ও নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে 'মার্চ ফর জাস্টিস' কর্মসূচি পালন করেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা শাখার অন্যতম সমন্বয়ক মো. রুবেল হোসেন সেদিনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ৩১ জুলাইয়ের কর্মসূচিতে আমাদের একটাই বার্তা ছিল, ‘ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা’।  যারা গুম-খুন, ধরপাকড় চালিয়েছে, তারা ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। শিক্ষক, আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী, পেশাজীবীসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ সেদিন আমাদের এই প্রতিবাদে নীরবে এবং সরবে সংহতি প্রকাশ করেন।”

কুমিল্লা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. শহীদুল্লাহ বাসসকে বলেন, ‘কুমিল্লায় সেদিন যা হয়েছে, তা সুশাসনের সম্পূর্ণ বিপরীত। বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন গণতন্ত্রের প্রধান শত্রু। শিক্ষার্থীদের দাবিকে দমন করে কখনো স্থায়ী সমাধান আসে না।’

৩১ জুলাই ২০২৪ কুমিল্লার ইতিহাসে শুধু একটি ‘প্রশাসনিক নজরদারির’ দিন ছিল না। এটি ছিল নীরব প্রতিবাদ। বৃহৎ গ্রেপ্তার অভিযানের দিন। এটি একটি জাতীয় গণঅভ্যুত্থানকে তৃণমূল পর্যায়ে প্রতিরোধের প্রক্রিয়ায় অনুবাদের দিন।