শিরোনাম
।। মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন।।
ফেনী, ৩০ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজধানীসহ সারাদেশ যখন উত্তাল তখন ফেনী শহরও ক্রমেই উত্তপ্ত হতে থাকে। এসময় বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহণে আন্দোলনের রেশ ছড়িয়ে পড়ে শহর থেকে গ্রামেও। ক্ষুব্ধ হয় সরকার। ৩০ জুলাই থেকে ফেনী শহরে পাহারা বসায় আওয়ামী লীগ।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি স্মরণ করে জেলার সিনিয়র সাংবাদিক মামুনুর রশীদ বাসসকে বলেন, ‘ছাত্রদের কোটাবিরোধী আন্দোলন একপর্যায়ে সরকারবিরোধী এক দফার দুর্বার আন্দোলনে পরিণত হয়। এতে ক্ষুব্ধ সরকারদলীয় ক্যাডাররা শহরে মহড়া দিতে শুরু করে। ৩০ জুলাই ফেনী শহরে পাহারা বসায় আওয়ামী লীগ। এতে শহর জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতির ধারাবাহিকতায় সাধারণ মানুষও নানাভাবে আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানান।’
ফেনী সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন ফাহিম দাগনভুঞার বাসিন্দা। জুলাই আন্দোলনের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘১৭ জুলাই থেকে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিই। এদিন মহিপালে স্কুল ও কলেজের ইউনিফর্ম পড়া শিক্ষার্থীদেরও মারধর করা হয়। হুমকি-ধামকির মুখে আমার নিজ উপজেলা দাগনভূঞায় কর্মসূচি পালন করতে না পারলেও উপজেলা থেকে সংগঠিত হয়ে জেলা শহরে ১০-১৫ জন নিয়ে অংশ নিতাম।’
তিনি বলেন, ৩ আগস্ট রকিবুল ইসলাম জাবেদসহ ১৪-১৫ জনকে নিয়ে দাগনভূঞা থেকে ফেনী শহরের কর্মসূচিতে অংশ নিই। পথিমধ্যে পাঁচগাছিয়া, তেমুহনী থেকে অনেকে অংশ নেয়। এভাবেই বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনে যুক্ত ছিলাম।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক গাজী সালাহউদ্দিন আমান জুলাই আন্দোলনে নিজের ভূমিকা সম্পর্কে বাসসকে বলেন, আন্দোলনের সময় প্রত্যেক সমন্বয়কের একটি করে ফেসবুক গ্রুপ খোলা হয়। একটি গ্রুপের দায়িত্বে আমি ছিলাম। ওই গ্রুপে দুই শতাধিক সদস্য ছিল। তাদের মধ্যে ৭০-৮০ জন সবসময় সক্রিয় থাকতেন। এখানে ৭ জন সংগঠকের ভূমিকা পালন করে। আমি যখন অনলাইনে থাকতাম না তখন ফারদিন গ্রুপ পরিচালনা করতো। সংগঠকেরা বিভিন্ন সময় একত্র হয়ে সিদ্ধান্ত নিতাম। বেশিরভাগ বাসিন্দা গ্রামের হলেও তারা ভয়ভীতি উপেক্ষা করে জীবন বাজি রেখে কর্মসূচিতে অংশ নিতো।
দাগনভূঞা উপজেলার জায়লস্কর ইউনিয়নের উত্তর জায়লস্কর গ্রামের বাসিন্দা আবু সাঈদ ভূঞা অনি বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরু থেকেই সক্রিয় হই। ১৭ জুলাই ট্রাংক রোডের কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার পর থেকে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীরা আমাকে টার্গেট করে। ৩০ জুলাই আওয়ামী লীগ পাহারা বসালে সতর্ক হয়ে যাই। গোপনে আন্দোলনকারীদের সাথে যোগাযোগ রেখেছি। ভয় পেয়ে পিছু হটিনি।’
সিনিয়র সাংবাদিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের বাসসকে বলেন, ‘কোটা আন্দোলন দমাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারদলীয় ক্যাডাররা জুলুম-নিপীড়ন এর মাত্রা যত বাড়াতে থাকে আন্দোলনও তত গতিশীল হয়। বিশেষ করে জুলাই এর শেষদিকে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ছাত্রদের এ আন্দোলনে যুক্ত হতে থাকে। যা পরে এক দফার আন্দোলনে রূপ নেয়।’