বাসস
  ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:৪২

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের জন্যে ফিডিং কার্যক্রম নভেম্বরে শুরু হচ্ছে: মহাপরিচালক

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মোহাম্মদ শামসুজ্জামান । ছবি : বাসস

।। মোশতাক আহমদ।।

ঢাকা, ২৭ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস): আগামী নভেম্বর থেকে দেশের ১৬৫ উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের  পুষ্টিকর খাবার দেয়া শুরু হবে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মোহাম্মদ শামসুজ্জামান এ কথা বলেন। 

মিরপুরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নিজ কার্যালয়ে আজ বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-বাসসকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।

মহাপরিচালক বলেন, আমরা আশা করি নভেম্বর  মাস থেকে দেশের ১৬৫  উপজেলার  প্রাইমারি স্কুলগুলোর ৩১ লাখ শিশুকে  দেশীয় ফলসহ ডিম, দুধ, কলা, পাউরুটি ও বিস্কিট দেয়া হবে। সপ্তাহে পাঁচ দিন তারা এই খাবার পাবে। নভেম্বর মাসের  ১৭ তারিখে  এ ফিডিং কার্যক্রম শুরু হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য নিয়ে দারিদ্র্যের হার অনুযায়ী প্রতিটি জেলায় একটি করে উপজেলাকে বেছে নেয়া হয়েছে। নির্ধারিত ওই উপজেলার প্রতিটি স্কুলে খাবার দেয়া হবে।

তবে বান্দরবান এবং কক্সবাজারের সব উপজেলার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী  এই স্কুল ফিডিং কার্যক্রমের আওতায় থাকবে।

মহাপরিচালক বলেন, আশা করি প্রতিটি স্কুলে ডিম, দুধ, কলা, পাউরুটি, উন্নত মানের বিস্কিট ও মৌসুমী ফল আমরা আমাদের শিশুদের সরবরাহ করতে পারব।

তিনি বলেন, মানসম্মত খাবার পেলে  বাচ্চারা স্কুলে আরো বেশি মনোযোগী হবে। পুষ্টির যে চাহিদা তা মিটবে। স্কুলে ঝরে পড়ার হার অনেক কমে যাবে।

শামসুজ্জামান বলেন,  আমরা প্রধান শিক্ষকদের জন্য  দশম গ্রেড ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছি এবং সেই লক্ষ্যে কাজও হচ্ছে। খুব সহসাই দশম গ্রেড বাস্তবায়ন হবে। আর সহকারী শিক্ষক যারা আছেন তাদের ১১ তম গ্রেডের জন্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠিয়েছি। পে কমিশনে এটা নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। শিক্ষকদের যে শূন্য পদগুলো আছে তা পূরণ করার জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি।

মহাপরিচালক বলেন, সারাদেশে এ মুহূর্তে ১৩ হাজার ৫শ’ সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। আমরা শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালাটা হাতে পেলেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে যাব। আশা করি খুব অল্প সময়ে অর্থাৎ আগামী নভেম্বর মাসে আমরা বিজ্ঞপ্তি দিতে পারব।

তিনি বলেন, এর বাইরেও দীর্ঘদিনের একটা সমস্যা জমে আছে। সেটা হলো ৩২ হাজার সহকারী শিক্ষক এই মুহূর্তে চলতি দায়িত্বে অথবা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। এটা নিঃসন্দেহে তাদের জন্য খুব যন্ত্রণাদায়ক।

মহাপরিচালক বলেন,  পদগুলো শূন্য থাকার পরও তাঁরা পদোন্নতি পাচ্ছেন না একটি মামলার জন্য।  আশা করছি খুব অল্প সময়ে এ মামলার রায় হয়ে যাবে। এরফলে এই ৩২ হাজার প্রধান শিক্ষকের পদ আমরা পূরণ করতে পারব। একই সাথে তখন সহকারী শিক্ষকের পদগুলোও শূন্য হবে। এরপর ৩২ হাজার পদে আবারো নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া যাবে।

মহাপরিচালক বলেন, আমরা শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে খুব গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা তাদের লিডারশিপ ট্রেনিংসহ  অন্য ট্রেনিংগুলোকে কীভাবে আরো ইনক্লুসিভ করা যায় সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন,  আমরা প্রধান শিক্ষকদের ক্ষমতা বাড়াচ্ছি।  আগে ক্ষুদ্র মেরামত বা স্লিপের জন্য প্রধান শিক্ষকরা দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে পারতেন। এটাকে বাড়িয়ে তিন লক্ষ টাকা করাসহ অন্যান্য জায়গাতেও কীভাবে তাঁরা আর্থিকভাবে ক্ষমতাবান হতে পারেন সেই জায়গায় আমরা কাজ করছি। বিশেষ করে নির্মাণ কাজ অথবা মেরামতের কাজের বিল প্রদানের ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রধান শিক্ষক এবং আমাদের শিক্ষা অফিসারের যৌথ স্বাক্ষরের প্রয়োজন হবে। দুজনেরই প্রত্যায়ন ছাড়া কোন বিল প্রদান করা হবে না।

মহাপরিচালক আরো বলেন, আমরা আশা করছি যে আগামী দিনগুলোতে প্রধান শিক্ষকদের আরো ক্ষমতা দিতে পারব। আমরা আমাদের প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য সারাদেশে যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে তার নির্মাণ কাজ থেকে শুরু করে সংস্কার কাজের জন্য অনেকগুলো প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এসব প্রকল্পের কাজ শেষে আশা করি আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে জরাজীর্ণ কোন স্কুল থাকবে বলে আমি মনে করি না।

শামসুজ্জামান বলেন, এছাড়া প্রাইমারির  সকল স্কুলেই যাতে ইন্টারক্টিভ ফ্ল্যাট প্যানেল একেবারে প্রদান করা যায় সে লক্ষ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি। আমরা ইতোমধ্যে তিন হাজার  ইন্টারক্টিভ ফ্য¬াট প্যানেল বিতরণের পর্যায়ে রয়েছি।  আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে হয়তো আমরা অর্ধেকেরও বেশি স্কুল কাভার করতে পারব। ক্রমান্বয়ে সব স্কুলেই ইন্টারক্টিভ ফ্ল্যাট প্যানেল দেয়া হবে।

তিনি আশা করে বলেন, আমরা যে উদ্যোগ নিয়েছি তাতে আগামীতে বাচ্চারা খুবই একটা ভালো পরিবেশে লেখাপড়া করতে পারবে। সর্বোপরি আমাদের স্কুলগুলোতে যে ম্যানেজিং কমিটি আছে সেটা এই মুহূর্তে স্থগিত আছে। আমরা পরবর্তীকালে যখন এটা আবার নিয়মিত করবো তখন সংস্কার করবো।