বাসস
  ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৫০

ভেনেজুয়েলার তেলবাহী ট্যাংকার অবরোধের নির্দেশ ট্রাম্পের

ঢাকা, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলায় আসা-যাওয়া করা ‘নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত তেলবাহী জাহাজ’ অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন।

মঙ্গলবার দেওয়া এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে কারাকাসের ওপর ওয়াশিংটনের চাপ আরও বৃদ্ধি পেল। একইসঙ্গে দেশটির অপরিশোধিত তেলের বিষয়ে নতুন দাবি উত্থাপন করেছেন ট্রাম্প।

ল্যাটিন আমেরিকায় মাদক পাচার রোধের নামে গত কয়েক মাস ধরে ক্যারিবীয় অঞ্চলে বিশাল সামরিক বাহিনী মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এই অভিযানের মূল লক্ষ্য মূলত ভেনেজুয়েলা।

কারাকাসের দাবি, বামপন্থী নেতা নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করতেই এই চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। 
ওয়াশিংটনসহ অনেক দেশই মাদুরোকে অবৈধ প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিবেচনা করে।

ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে মার্কিন যুদ্ধবিমানের মহড়া এবং মাদক পাচারকারী সন্দেহে বিভিন্ন নৌযানে প্রাণঘাতী হামলায় এখন পর্যন্ত ৯০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।

এর কয়েক সপ্তাহ পর গত সপ্তাহে দক্ষিণ আমেরিকার দেশটি থেকে ছেড়ে আসা একটি তেলবাহী ট্যাংকার জব্দ করে ট্রাম্প প্রশাসন। এরপর আরও বেশ কিছু জাহাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ ট্রাম্প লেখেন, ‘আজ আমি ভেনেজুয়েলায় আসা-যাওয়া করা সমস্ত নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত তেল ট্যাংকারের ওপর পূর্ণাঙ্গ ও সর্বাত্মক অবরোধের নির্দেশ দিচ্ছি।’

ট্রাম্প বলেন, ক্যারিবীয় অঞ্চলে মোতায়েন করা বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবাহী রণতরীসহ মার্কিন নৌবহর ‘আরও বড় করা হবে’। ভেনেজুয়েলা যতক্ষণ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ‘চুরি করা’ সমস্ত তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ফিরিয়ে না দিচ্ছে, ততক্ষণ এই অবস্থা চলবে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্দিষ্ট করে কোনো তেল বা ভূমির কথা উল্লেখ না করলেও, ১৯৭০-এর দশকে ভেনেজুয়েলা দেশটির তেল শিল্প জাতীয়করণ করে। পরবর্তীতে হুগো শাভেজের শাসনামলে বিদেশি কোম্পানিগুলোকে ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি পিডিভিএসএ-এর কাছে তাদের মালিকানা ছেড়ে দিতে বাধ্য করা হয়।
ট্রাম্প আরও লেখেন, ‘অবৈধ মাদুরো সরকার এই চুরি করা তেলের খনি থেকে পাওয়া অর্থ মাদক সন্ত্রাস, মানবপাচার, হত্যা এবং অপহরণের কাজে ব্যবহার করছে।’

অন্যদিকে মাদুরো বারবার দাবি করে আসছেন যে, মাদকবিরোধী অভিযানের অজুহাতে এই বিশাল মার্কিন সামরিক মোতায়েন আসলে তাকে উৎখাত এবং ভেনেজুয়েলার বিপুল তেল সম্পদ ‘চুরি’ করার একটি চক্রান্ত।
যুক্তরাষ্ট্র আগে থেকেই ভেনেজুয়েলার তেল খাতের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। তবে রপ্তানি জাহাজ জব্দ করা হলে দেশটির ভঙ্গুর অর্থনীতি পুরোপুরি অচল হয়ে পড়তে পারে, যা মাদুরোর জন্য বড় ধরনের রাজনৈতিক সংকট তৈরি করবে।

ভেনেজুয়েলার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘ওরিনোকো রিসার্চ’-এর ইলিয়াস ফেরার সম্প্রতি এএফপিকে বলেন, ‘তেল রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেলে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার বাজার ও আমদানিতে ধস নামবে। এর ফলে কেবল মন্দাই নয়, খাদ্য ও ওষুধের তীব্র সংকটও দেখা দিতে পারে।’

নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ভেনেজুয়েলা বছরের পর বছর ধরে কালোবাজারে বিশেষ করে চীনের কাছে কম দামে তেল বিক্রি করে আসছিল। 

ওপেক-এর তথ্য অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেলের মজুদ প্রায় ৩০ হাজার ৩০০ কোটি ব্যারেল, যা বিশ্বের যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি।