শিরোনাম

ঢাকা, ১ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আজ সোমবার প্যারিসে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের অবসান ঘটাতে একটি চুক্তির আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
প্যারিস থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি চুক্তির ভিত্তি তৈরি করতে ওয়াশিংটন যে পরিকল্পনা চায়, তার ওপর রোববার ফ্লোরিডায় উভয় পক্ষের মধ্যে ‘ফলপ্রসূ’ বৈঠকে মার্কিন ও ইউক্রেনীয় আলোচকরা কয়েক ঘণ্টা ধরে আলোচনা করেছেন।
প্রায় চার বছরের সংঘাতের পর কূটনৈতিক উত্তেজনা বিরাজ করছে। কিয়েভ সামরিক চাপের সঙ্গে লড়াই করছে এবং একটি অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি কেলেঙ্কারির কারণে জেলেনস্কি তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও শীর্ষ আলোচককে অপসারণ করতে বাধ্য হয়েছেন।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া পূর্ণ মাত্রার হামলা শুরু করার পর থেকে ইউক্রেনীয় নেতা প্যারিসে নিয়মিত সফর করেছেন। সর্বশেষ সফরটি স্থানীয় সময় আজ সকাল ১০ টায় শুরু হওয়ার কথা ছিল।
ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিন-নোয়েল ব্যারোট গতকাল রোববার বলেছেন, এই বৈঠকের লক্ষ্য ‘আলোচনা এগিয়ে নেওয়া।’
তিনি আরো বলেন, ‘রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন যদি প্রথমে ইউক্রেনকে পরাধীন করে সোভিয়েত সাম্রাজ্য পুনর্গঠনের তার ভ্রান্ত আশা ত্যাগ করেন, তাহলে শান্তি নাগালের মধ্যেই রয়েছে।’
ওয়াশিংটন যুদ্ধ বন্ধের জন্য একটি প্রাথমিক ২৮-দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করে, যা ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্রদের কাছ থেকে কোনো মতামত ছাড়াই খসড়া করা হয়। খসড়া প্রস্তাবটি ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে মস্কোর সর্বোচ্চ দাবির প্রতিফলনের খুব কাছাকাছি হিসেবে বলে বিবেচিত হয়।
এতে কিয়েভকে তার পূর্ব দোনেৎস্ক অঞ্চল থেকে সরে যেতে বলা হয় এবং যুক্তরাষ্ট্র কার্যত দোনেৎস্ক, ক্রিমিয়া ও লুহানস্ক অঞ্চলগুলোকে রাশিয়ার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফ পরবর্তী আলোচনার জন্য মস্কো যাচ্ছেন এবং মঙ্গলবার পুতিনের সঙ্গে ইউক্রেন নিয়ে আলোচনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
ইউক্রেনীয় ও মার্কিন উভয় আলোচকই ফ্লোরিডা আলোচনাকে ‘ফলপ্রসূ’ উল্লেখ করেছেন। কিন্তু মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, আরো কাজ প্রয়োজন এবং কিয়েভের প্রতিনিধিদলের একটি সূত্র জানিয়েছে, আলোচনাটি সহজ নয়।
তবে, ট্রাম্প এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের কাছে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমি মনে করি আমাদের একটি চুক্তি করার সম্ভাবনা রয়েছে।’
কিয়েভের রাজনৈতিক অস্থিরতার কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি। গত সপ্তাহে জ্বালানি খাতে দুর্নীতির কেলেঙ্কারির পর জেলেনস্কি তার ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং সংঘাতকালে শীর্ষ আলোচক আন্দ্রি ইয়েরমাককে অপসারণ করেন, যা পশ্চিমা মিত্রদের সমস্যায় ফেলেছে।
ট্রাম্প বলেন, ‘ইউক্রেনের কঠিন কিছু ছোট সমস্যা রয়েছে।’
ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের সচিব রুস্তেম উমেরভ ফ্লোরিডা আলোচনায় কিয়েভের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।
তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, জেলেনস্কিকে ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ সম্পর্কে অবহিত করেছেন তিনি।
ম্যাখোঁর সঙ্গে বৈঠকের আগে জেলেনস্কি সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেন, তিনি ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাবকে ট্রাম্পের সঙ্গে তার উষ্ণ সম্পর্কের কারণে একজন প্রভাবশালী খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচনা করেন। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যে সংকেত পাওয়া গেছে, তিনি সে সম্পর্কে অবহিত করেছেন।
তিনি ইইউ কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লিয়েন ও ন্যাটো প্রধান মার্ক রুটের সঙ্গেও আলাদাভাবে কথা বলেছেন।
এই কূটনৈতিক চাপ এমন এক সময় এসেছে যখন যুদ্ধে কয়েক হাজার বেসামরিক ও সামরিক কর্মী নিহত হয়েছে এবং লাখ লাখ ইউক্রেনীয় বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এছাড়া, যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
রুশ বাহিনী গত সপ্তাহান্তে পরপর দুই রাতভর ইউক্রেনের রাজধানী ও অঞ্চলটিকে মারাত্মক বিমান হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে।
এদিকে, এক ইউক্রেনীয় নিরাপত্তা সূত্র জানায়, কৃষ্ণ সাগরে দু’টি তেল ট্যাঙ্কারে হামলার জন্য কিয়েভ দায়ী। ট্যাঙ্কারগুলো গোপনে রাশিয়ার অনুমোদিত তেল পরিবহন করছিল বলে তাদের ধারণা।