বাসস
  ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১৩:৪৫

পিরামিডের পাশেই মিশরের গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়ামের উদ্বোধন

ঢাকা, ২ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : মিশরের গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে। বিলিয়ন ডলারের এ প্রকল্পকে দেশটির সরকার পর্যটন পুনরুজ্জীবন ও অর্থনীতি চাঙ্গা করার বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে।

কায়রো থেকে এএফপি এ খবর জানায়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি বলেন, ‘আজ আমরা শুধু একটি জাদুঘর উদ্বোধন করছি না, বর্তমান ও ভবিষ্যতের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় রচনা করছি।’

৫ লাখ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই জাদুঘরে প্রায় ১ লাখ প্রত্নবস্তু স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেক অর্থাৎ প্রায় ৫০ হাজার প্রত্নবস্তু দর্শনার্থীদের জন্য প্রদর্শিত হবে।

এগুলোর ইতিহাস ছয় হাজার বছরেরও বেশি পুরোনো।

অনুষ্ঠানে অতিথিরা জাদুঘরের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা পিরামিডগুলোকে পটভূমি করে এক জমকালো আলো ও সংগীতের প্রদর্শনী উপভোগ করেন। এ সময় ফারাওদের পোশাকে সাজা শিল্পীরা ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীত পরিবেশন করেন। লেজার শো-তে ফারাওদের চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয় এবং আতশবাজিতে আলোকিত হয় রাতের আকাশ।

সিসি বলেন, ‘এ জাদুঘর মিশরীয় মানুষের সৃজনশীলতার জীবন্ত সাক্ষ্য।’

শনিবার সকাল থেকেই জাদুঘরের আশপাশে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বন্ধ রাখা হয় রাস্তা, ভবনগুলোতে ঝুলানো হয় উদ্বোধন ঘোষণার ব্যানার।

মিশরের প্রধানমন্ত্রী মোস্তফা মাদবুলি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এই স্বপ্ন আমরা সবাই দেখেছিলাম। আজ সেটি বাস্তব হলো।’

পিরামিডের ছায়া ঘেঁষে গিজা মালভূমির ঢালে নির্মিত হয়েছে জাদুঘরটি। জাপানের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় এটি গড়ে তোলা হয়েছে। এর নির্মাণকাজ, সাজসজ্জা ও উন্নয়নগত বেশিরভাগ কাজ গত সাত-আট বছরে সম্পন্ন হয়।

দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা প্রকল্পটি রাজনৈতিক অস্থিরতা, আঞ্চলিক সংঘাত ও কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বহুবার বিলম্বিত হয়।

মিশরীয় কর্মকর্তাদের মতে, একক সভ্যতার ওপর ভিত্তি করে নির্মিত এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাদুঘর।

প্রবেশ করলেই দর্শনার্থীরা দেখতে পাবেন বালুকাময় পাথরের দেয়াল ও উঁচু ছাদের আলো ঝলমলে বিশাল হলরুম। প্রধান অ্যাট্রিয়ামের কেন্দ্রে রয়েছে ৮৩ টন ওজনের ফারাও রামেসিস দ্বিতীয়ের ভাস্কর্য, যিনি ৬৬ বছর মিশর শাসন করেছিলেন এবং দেশটির স্বর্ণযুগের নেতৃত্ব দেন।

কায়রোর পুরনো শতবর্ষী ও ছোট্ট মিশরীয় জাদুঘরের তুলনায় নতুন এখানে রয়েছে আধুনিক প্রদর্শনী কক্ষ, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি শো, চমৎকার আলোকসজ্জা ও শিশুদের জন্য বিশেষ বিভাগ।

জাদুঘরের অন্যতম আকর্ষণ হলো লাইভ কনজারভেশন ল্যাব। কাচে ঘেরা এই ল্যাবে দর্শনার্থীরা দেখতে পাবেন সাড়ে ৪ হাজার বছর আগে খুফুর পিরামিডের পাশ থেকে উদ্ধার করা সৌর নৌকা বিশেষজ্ঞরা কীভাবে ধাপে ধাপে জোড়া লাগাচ্ছেন। বিশ্বাস করা হয়, সূর্য দেবতা ‘রা’ তাঁর সঙ্গে আত্মা বহনের জন্য এটি তৈরি করেছিল।

তবে মূল আকর্ষণ কিং তুেতন খামেনের সংগ্রহ। ৫ হাজারেরও বেশি নিদর্শন প্রথমবারের মতো একসঙ্গে প্রদর্শিত হয়েছে। যা আগে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিল।

জাদুঘরটি মঙ্গলবার থেকে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হচ্ছে। এখানে প্রদর্শিত হবে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা হাজারো সমাধি সম্পর্কিত নিদর্শন।

মিশরের পর্যটন খাত গত দেড় দশকে বারবার ধাক্কা খেয়েছে। ২০১১ সালের গণঅভ্যুত্থান, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সন্ত্রাসী হামলার কারণে এই খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পর্যটনে কিছুটা গতি এসেছে। ২০২৫ সালের প্রথম নয় মাসে ১ কোটি ৫০ লাখ পর্যটক মিশর ভ্রমণ করেছেন। আয় হয়েছে ১২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ২১ শতাংশ বেশি।

পর্যটনমন্ত্রী শরিফ ফাতি শনিবার জানান, এ বছর শেষে পর্যটক সংখ্যা ১ কোটি ৮০ লাখে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, সরকার আশা করছে, জাদুঘরটি বছরে ৫০ লাখ দর্শনার্থীকে আকর্ষণ করবে। বর্তমানে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ হাজার দর্শক আসছেন। আমরা লক্ষ্য এটিকে ১৫ হাজারে উন্নীত করা।

তবে প্রত্নতত্ত্ববিদ ও ঐতিহ্যরক্ষক মনিকা হান্না বলেন, জাদুঘরটি মিশরের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে কি না তা এখনই বলা কঠিন।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রকল্পটির সফলতা নির্ভর করবে নিয়মিত দর্শনার্থী, রক্ষণাবেক্ষণ ও অবকাঠামোর ওপর।

তারা সতর্ক করে বলেন, অর্থনৈতিক চাপ বিশেষ করে গাজা ও সুদানের যুদ্ধসহ আঞ্চলিক অস্থিরতা মিশরের পর্যটন পুনরুদ্ধারে বড় বাধা হতে পারে।