শিরোনাম

ঢাকা, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : সৌদি আরব মঙ্গলবার এক বৃহৎ বিনিয়োগ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও ব্যবসায়িক নেতারা অংশ নিচ্ছেন। সম্মেলনের মূল লক্ষ্য দেশটির বিশাল গিগাপ্রকল্প ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) পরিকল্পনায় বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা।
রিয়াদ থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
রিয়াদের ফিউচার ইনভেস্টমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (এফআইআই) সম্মেলনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হান ঝেং, সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট এবং ১৫০ জনেরও বেশি ব্যবসায়ী নেতা।
যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাকস, জেপি মরগান ও ব্ল্যাকরকের প্রধানরা এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়রও অংশ নিচ্ছেন রাজধানীর রাজকীয় কিং আবদুলআজিজ আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে।
‘ডাভোস ইন দ্য ডেজার্ট’ নামে পরিচিত এই সম্মেলনের মাধ্যমে সৌদি আরব আবারও বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের চেষ্টা করছে। কারণ, বিশ্বের বৃহত্তম তেল রপ্তানিকারক দেশটি তার অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করতে চায়।
সৌদি আরবের পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের প্রধান ইয়াসির আল-রুমাইয়ান জানান, গত বছর বৈদেশিক বিনিয়োগ ২৪ শতাংশ বেড়ে ৩১.৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
উদ্বোধনী ভাষণে আল-রুমাইয়ান বলেন, আমরা সৌদি আরবকে বিশ্বে তুলে ধরেছি, আর এখন বিশ্ব সৌদি আরবে আসছে।
এই নবম এফআইআই সম্মেলনে প্রায় ২০ জন রাষ্ট্রপ্রধান অংশ নিচ্ছেন। এটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন গাজায় যুদ্ধবিরতি চলছে এবং উপসাগরীয় অঞ্চলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শক্তিশালী হচ্ছে।
তবে সৌদির গিগাপ্রকল্প বিশেষ করে ৫শ’ বিলিয়ন ডলারের ভবিষ্যত নগরী ‘নিওম’ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। বিলম্ব, জনবল পরিবর্তন ও নকশায় বড় ধরনের পরিবর্তনের কারণে প্রকল্পটি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এমন সময় তেলের রাজস্ব কমে বাজেট ঘাটতিও বাড়ছে।
ওয়াশিংটনের আরব গালফ স্টেটস ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ গবেষক রবার্ট মোগিয়েলনিকি বলেছেন, এফআইআই হলো এমন একটি বার্ষিক সুযোগ, যার মাধ্যমে ব্যয়বহুল ও জটিল অর্থনৈতিক রূপান্তর পরিকল্পনার জন্য বৈদেশিক অর্থায়ন নিশ্চিত করা যায়।
তিনি আরো বলেছেন, ব্যয়ের অগ্রাধিকারে পুনর্বিন্যাস চলছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা নজর রাখছেন অর্থ কোথায় যাচ্ছে।
মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের উপসাগরীয় অর্থনীতির বিশেষজ্ঞ ক্যারেন ইয়াং বলেছেন, কিছু মেগাপ্রকল্প থেকে সরে আসা বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করবে না, বরং এটি আর্থিক শৃঙ্খলার ইঙ্গিত দেয়।
তিনি বলেছেন, পর্যটন, বিনোদন, রিয়েল এস্টেট ও তেল অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে, যা দেশীয় অর্থনীতিতে আগ্রহের ইঙ্গিত দেয়।
সৌদি আরব প্রযুক্তি খাতে বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করতে চায়।
এফআইআই আয়োজকরা জানান, সৌদি পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের মালিকানাধীন এআই কোম্পানি ‘হিউমেন’ এবং আন্তর্জাতিক কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে।
মোগিয়েলনিকি বলেছেন, সৌদির নতুন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর অনেকেই এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তাই তারা বিশ্বকে আশ্বস্ত করতে চাইবে যে, তাদের প্রযুক্তি স্বপ্ন বাস্তবসম্মত, সম্ভাবনাময় ও রোমাঞ্চকর।
এই সম্মেলন এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের যুক্তরাষ্ট্র সফর ঘনিয়ে আসছে। ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ট্রাম্পের আগের রিয়াদ সফরে সৌদি আরব ৬শ’ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
মোগিয়েলনিকি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের ব্যাপক উপস্থিতি প্রমাণ করে যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি বাণিজ্যিক সম্পর্ক কতটা গুরুত্বপূর্ণ।