বাসস
  ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১:২৯

ভারতে লাদাখের স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে প্রাণঘাতী বিক্ষোভের পর নিরাপত্তা জোরদার

ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : হিমালয় অঞ্চল লাদাখের বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে বিক্ষোভ চলাকালে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিবর্ষণে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এর একদিন পর বৃহস্পতিবার ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় শহর লেহে টহল দিচ্ছে ভারতীয় পুলিশ।

কমপক্ষে পাঁচজন নিহত এবং ৩০ জন পুলিশ কর্মকর্তাসহ ১শ’ জন আহত হয়েছেন। 

ভারতের লেহে থেকে এএফপি এই খবর জানিয়েছে।

এএফপি’র একজন প্রতিবেদক জানিয়েছেন, শহরটি সাধারণত পর্যটকদের ভিড়ে পরিপূর্ণ ছিল। কিন্তু গুলিবর্ষণের পর শহরটিকে জনশূন্য দেখাচ্ছিল। বেশিরভাগ প্রধান রাস্তা ক্ষুরের তার দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং দাঙ্গা পুলিশ বিভিন্ন সড়কে টহল দিচ্ছে।

লেহের এসএনএম হাসপাতালের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, বুধবার থেকে তারা প্রায় ১শ’জন আহতকে চিকিৎসা দিয়েছেন। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাও রয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডাক্তার বলেছেন, ‘আমরা আহত ছয়জনের অস্ত্রোপচার করেছি। তাদের মধ্যে তিনজনের গুলি লেগেছে এবং অন্যদের বুকে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ এবং পাঁজর ভেঙে গেছে’।

চীন ও পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী এই বিচ্ছিন্ন জনবসতিপূর্ণ উঁচু-উচ্চতার মরুভূমিতে বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানিয়ে বুধবার বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভে প্রায় ৩০০,০০০ লোক অংশ নেয়।

ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘বিক্ষুদ্ধ জনতা’ পুলিশের ওপর আক্রমণ করেছে। বুধবার রাতে জারি করা এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘৩০ জনেরও বেশি’ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন।

বিক্ষোভকারীরা একটি পুলিশের গাড়ি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হিন্দু-জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয়। এই সময় জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে অফিসাররা কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ এবং লাঠিচার্জ করে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আত্মরক্ষার জন্য পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছিল। যার ফলে দুর্ভাগ্যবশত কিছু হতাহতের খবর পাওয়া গেছে’। তবে মৃত্যুর বিষয়ে কোনো বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়নি।

তবে, একজন পুলিশ কর্মকর্তা এএফপি’কে বলেছেন, ‘বিক্ষোভের পর পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে’। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেছেন, লেহে একটি অটোমোবাইল খুচরা যন্ত্রাংশের দোকান চালান ৩৩ বছর বয়সী থিনলির পায়ে গুলি লেগেছে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থিনলি এএফপি’কে বলেছেন, ‘আমাদের দাবি না শুনে সরকার আমাদের ক্লান্ত করে ফেলেছে।’

২৩ বছর বয়সী জিগমেট স্ট্যানজিন বলেন, কাঁদানে গ্যাসের ক্যানিস্টার বলে মনে করে তিনি যখন পিছন দিকে ছুঁড়ে মারার চেষ্টা করছিলেন তখন তিনি আহত হন।

তিনি বলেন, ‘এটি বিস্ফোরিত হলে আমার হাত ভেঙে যায়’।

বৃহস্পতিবার ভাঙচুর করা বিজেপি অফিসের পাশে একটি পুড়ে যাওয়া নিরাপত্তারক্ষীর গাড়ির ধ্বংসাবশেষ পাহারা দিচ্ছিল পুলিশের একটি ইউনিট।

লেহ থেকে বেরিয়ে আসা ২৭ বছর বয়সী ভারতীয় পর্যটক পারস পান্ডে হাইওয়ে ধরে একা হেঁটে যাচ্ছিলেন ভারী ব্যাকপ্যাক নিয়ে বাইরে যাওয়ার জন্য একটা গাড়ি খুঁজছিলেন।

পারস বলেছে, ‘সবকিছু বন্ধ। গতকাল থেকে আমি খাবার পাচ্ছি না। ‘গতকাল আমি যা দেখতে পাচ্ছিলাম তা হল বিশৃঙ্খলা, ধোঁয়া এবং ভাঙা যানবাহন।’

লাদাখের প্রায় অর্ধেক বাসিন্দা মুসলিম এবং প্রায় ৪০ শতাংশ বৌদ্ধ।

এটি একটি ‘কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল’ হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ। যার অর্থ এটি ভারতের সংসদে আইন প্রণেতাদের নির্বাচিত করে কিন্তু সরাসরি নয়াদিল্লি দ্বারা শাসিত হয়।

বুধবারের বিক্ষোভে অংশ নেয়া বিক্ষুদ্ধ জনতা বিশিষ্ট কর্মী সোনম ওয়াংচুকের সাথে সংহতি প্রকাশ করে। তিনি লাদাখের জন্য পূর্ণ ফেডারেল রাজ্যের দাবিতে অথবা এর উপজাতি সম্প্রদায়, জমি এবং ভঙ্গুর পরিবেশের জন্য সাংবিধানিক সুরক্ষার দাবিতে অনশন করছিলেন।

নয়াদিল্লি বলেছে, এসব বিক্ষোভে ‘তার উস্কানিমূলক বক্তৃতা দিয়ে উস্কে দেওয়া হয়েছিল’ এবং উল্লেখ করেছে, এর শাসনব্যবস্থা নিয়ে আলোচনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

মোদির সরকার ২০১৯ সালে লাদাখকে ভারত-শাসিত কাশ্মীর থেকে পৃথক করে উভয়ের ওপর সরাসরি কেন্দ্রের শাসন জারি করে।

ভারতের সংবিধানের ‘ষষ্ঠ তফসিল’-এ লাদাখকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি এখনো পূরণ করতে পারেনি নয়াদিল্লি। 
জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বলেছেন, লাদাখের মানুষ ‘বিশ্বাসঘাতকতা এবং ক্ষুব্ধ’ বোধ করছেন।
লাদাখে ভারতের সেনাবাহিনীর বিশাল উপস্থিতি রয়েছে, যার মধ্যে চীনের সাথে বিতর্কিত সীমান্ত এলাকাও রয়েছে। ২০২০ সালে দুই দেশের সৈন্যরা সেখানে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে কমপক্ষে ২০ জন ভারতীয় এবং চারজন চীনা সৈন্য নিহত হয়।