শিরোনাম
ঢাকা, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : জলবায়ু উষ্ণায়নকে প্রাক-শিল্প স্তরের ওপরে ১.৫ সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে যাচ্ছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস শুক্রবার এএফপিকে এ কথা জানিয়েছেন।
জাতিসংঘ তার বার্ষিক কূটনৈতিক সমাবেশের পাশাপাশি একটি জলবায়ু সপ্তাহ অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
জাতীয় নির্ধারিত অবদান (এনডিসি) নামেও পরিচিত প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর ২০৩৫ সালের জলবায়ু লক্ষ্য, প্রাথমিকভাবে কয়েক মাস আগে প্রত্যাশিত ছিল।
তবে, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা ও বাণিজ্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা সম্পর্কিত অনিশ্চয়তা প্রক্রিয়াটির গতি ধীরে পর্যবসিত করে তুলেছে।
গুতেরেস এএফপিকে বলেন, ‘আমরা এই লক্ষ্য ভেঙে পড়ার দ্বারপ্রান্তে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশগুলোকে এমন জলবায়ু কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে, যা সম্পূর্ণরূপে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সীমার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং তাদের সমগ্র গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ও সমগ্র অর্থনীতি কভার করবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের সীমা বজায় রাখতে হলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে কার্বণ নির্গমনের ব্যাপক হ্রাস অপরিহার্য।’
২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তির সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য হলো প্রাক-শিল্প যুগের সঙ্গে তুলনীয় বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫ সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখা।
ব্রাজিলে কপ-৩০ সম্মেলনের দুই মাসেরও কম সময় আগে, বেশ কয়েকটি দেশ তাদের পরিকল্পনা ঘোষণা করতে ধীরগতি দেখিয়েছে।
বিশেষ করে জলবায়ু কূটনীতির ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত শক্তি চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এদের অন্তর্ভূক্ত।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অসংখ্য সংকটের কারণে মানবসৃষ্ট বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব মোকাবিলার প্রচেষ্টা পিছনে ফেলেছে। যার মধ্যে রয়েছে করোনাভাইরাস মহামারী ও বেশ কয়েকটি যুদ্ধ। গুতেরেস এই বিষয়ের ওপর পুনরায় মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করছেন।
জাতিসংঘ আশা করছে যে কপ-৩০-এর আগে বুধবার অনুষ্ঠেয় জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনটি প্রচেষ্টায় প্রাণ সঞ্চার করার একটি সুযোগ হবে। নিউইয়র্কে গুতেরেস ও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইস ইনাসিও লুলা দা সিলভার যৌথ সভাপতিত্বে এটি অনুষ্ঠিত হবে।
গুতেরেস বলেন, তিনি উদ্বিগ্ন যে জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান, বা জাতীয় জলবায়ু কর্ম পরিকল্পনা, বৈশ্বিক উষ্ণতাকে প্রাক-শিল্প স্তরের উপরে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখার লক্ষ্যকে চূড়ান্তভাবে সমর্থন নাও করতে পারে।’
তবে তিনি বলেন, এটা আতঙ্কিত হওয়ার বিষয় নয় বরং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হওয়ার বিষয়।’
২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তির সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য হলো শিল্প-পূর্ব যুগের সঙ্গে তুলনীয় বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫ সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা।
বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানীদের কাজকে একত্রিত করে আন্তঃসরকারি জলবায়ু পরিবর্তন প্যানেল (আইপিসিসি) ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে ২০৩০-২০৩৫ সালের মধ্যে জলবায়ু গড়ে ১.৫ সেলসিয়াস উষ্ণ হওয়ার আনুপাতিক সম্ভাবনা ৫০:৫০।
বিজ্ঞানীরা বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণের গুরুত্বের ওপর জোর দিচ্ছেন, কারণ প্রতিটি ডিগ্রি বৃদ্ধি তাপপ্রবাহ বা সামুদ্রিক প্রাণীর ধ্বংসের মতো ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তোলে।
আইপিসিসির মতে, উষ্ণতা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের পরিবর্তে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখা হলে, এর সবচেয়ে বিপর্যয়কর পরিণতি উল্লেখযোগ্যভাবে সীমিত হবে।
জাতিসংঘের মতে, ২০২৪ সাল ছিল রেকর্ডকৃত উষ্ণতম বছর।