শিরোনাম
ঢাকা, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : সোমবার কাঠমান্ডু এবং নেপালের অন্যান্য অংশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং দুর্নীতি মোকাবেলার দাবিতে তরুণ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ। এই সময়ে পুলিশের গুলিতে ১৯ জন নিহত এবং ১শ’ পুলিশসহ প্রায় ৪শ’ জন আহত হয়েছেন।
কাঠমান্ডু থেকে এএফপি এই খবর জানিয়েছে।
সরকার ২৬টি অনিবন্ধিত প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকে ফেসবুক, ইউটিউব এবং এক্সসহ বেশ কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম শুক্রবার থেকে নেপালে অ্যাক্সেসযোগ্য নয়। যার ফলে ব্যবহারকারীরা ক্ষুব্ধ এবং বিভ্রান্ত।
বিক্ষোভকারীরা কাঁটাতারের বেড়া ভেদ করে সংসদের কাছে একটি সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস, জলকামান এবং লাঠিচার্জ করে।
কাঠমান্ডু উপত্যকা পুলিশের মুখপাত্র শেখর খানাল এএফপি’কে বলেন, ‘সতেরো জন মারা গেছেন।’ স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, পূর্ব নেপালের সুনসারি জেলায় আরো ২জন মারা গেছেন।
খানাল বলেন, ১শ’ জনেরও বেশি পুলিশসহ প্রায় ৪শ’ জন আহত হয়েছেন।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সহিংসতার পর সন্ধ্যায় মন্ত্রিসভার বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক পদত্যাগ করেছেন।
২০ বছর বয়সী ইমান মাগার বলেছেন, ‘আমি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের জন্য সেখানে গিয়েছিলাম, কিন্তু সরকার বলপ্রয়োগ করেছে।’ এই সময় তার ডান হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
ডাক্তার বলেছেন, আমার অস্ত্রোপচার করা দরকার। কারণ ‘এটি রাবার বুলেট ছিল না, ধাতব বুলেট ছিল এবং এতে আমার হাতের একটি অংশ কেটে ফেলা হয়েছিল।’
আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় সারা শহর সাইরেন বেজে ওঠে।
সিভিল হাসপাতালের তথ্য কর্মকর্তা রঞ্জনা নেপাল বলেছেন, ‘হাসপাতালে এত বিরক্তিকর পরিস্থিতি আমি এরআগে কখনো দেখিনি।’ সেখানে অনেক আহতকে ভর্তি করা হয়েছে।
তিনি এএফপিকে বলেছেন, ‘হাসপাতালে কাঁদানে গ্যাস প্রবেশ করেছে। যার ফলে ডাক্তারদের কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে’।
- ‘জাতিসংঘ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে’ - জাতিসংঘ সহিংসতার দ্রুত এবং স্বচ্ছ তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
জাতিসংঘের অধিকার অফিসের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আজ মঙ্গলবার নেপালে বিক্ষোভকারীদের হত্যা এবং আহত হওয়ার ঘটনায় আমরা গভীরভাবে মর্মাহত এবং দ্রুত ও স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি’।
তিনি আরো বলেছেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনীর অপ্রয়োজনীয় অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের বেশ কয়েকটি গভীর উদ্বেগজনক অভিযোগ আমরা পেয়েছি।’
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীদের ওপর তাজা গুলি ব্যবহার করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন শহরের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কারফিউ জারি করেছে।
এর আগে, কিছু বিক্ষোভকারী দেয়াল টপকে সংসদ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে এবং এর গেট ভাঙচুর করে।
দেশের অন্যান্য জেলায়ও একই ধরণের বিক্ষোভ সংগঠিত হয়েছে।
ইনস্টাগ্রামের মতো জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মগুলোতে নেপালে লক্ষ লক্ষ ব্যবহারকারী রয়েছেন যারা বিনোদন, সংবাদ এবং ব্যবসার জন্য তাদের ওপর নির্ভরশীল।
২৪ বছর বয়সী ছাত্র যুজন রাজভান্ডারী বলেছেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়া নিষেধাজ্ঞার কারণে আমরা উদ্বিগ্ন হয়েছি, কিন্তু আমরা শুধু এই কারণেই এখানে জড়ো হইনি।’
‘নেপালে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নেওয়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ করছি।’
- ‘পরিবর্তন দেখতে চাই’-
বিক্ষোভকারীরা সামাজিক মিডিয়া বন্ধ এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়ার আগে জাতীয় সঙ্গীত দিয়ে তাদের প্রতিবাদ শুরু করে।
২০ বছর বয়সী ছাত্রী ইক্ষমা তুমরোক বলেছেন, তিনি সরকারের ‘কর্তৃত্ববাদী মনোভাবের’ প্রতিবাদ করেছেন।
তিনি এএফপিকে বলেছেন, ‘আমরা পরিবর্তন দেখতে চাই। অন্যরা এটা সহ্য করেছে, কিন্তু আমাদের প্রজন্মের আমলে এর অবসান ঘটাতে হবে’।
গত কয়েক বছরে মন্ত্রী, সাবেক মন্ত্রী এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে জড়িত বেশ কয়েকটি দুর্নীতির ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞার পর থেকে সাধারণ নেপালিদের সংগ্রামের সাথে রাজনীতিবিদদের সন্তানদের বিলাসবহুল জিনিসপত্র এবং ব্যয়বহুল ছুটি কাটানোর ভিডিওগুলো টিকটকে ভাইরাল হয়েছে, যা এখনো চলছে।
প্রতিবাদকারী ভূমিকা ভারতী বলেছেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিদেশে আন্দোলন হয়েছে এবং তারা ভয় পাচ্ছে যে এখানেও এটি ঘটতে পারে। সরকারের ধারনা তা-ই হয়েছে। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগ করেছেন।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বৈষম্য এবং আইন প্রণেতাদের জন্য বিলাসবহুল সুযোগ-সুবিধার ওপর অসন্তোষের কারণে সহিংস বিক্ষোভ ইন্দোনেশিয়াকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। এক বছর আগে চাকরির কোটা নিয়ে ছাত্র-জনতার নেতৃত্বাধীন একটি জনপ্রিয় বিদ্রোহ বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের নেতাকে ক্ষমতাচ্যুত করে।
নেপালের মন্ত্রিসভা গত মাসে প্রভাবিত সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলোকে নেপালে নিবন্ধন করার জন্য, যোগাযোগের একটি বিন্দু স্থাপন এবং আবাসিক অভিযোগ ও সম্মতি কর্মকর্তা নিয়োগ করার জন্য সাত দিন সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
রোববার এক বিবৃতিতে সরকার বলেছে, তারা চিন্তাভাবনা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সম্মান করে এবং ‘তাদের সুরক্ষা এবং অবাধ ব্যবহারের জন্য একটি পরিবেশ তৈরি করতে’ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
নেপাল অতীতে জনপ্রিয় অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে প্রবেশ সীমাবদ্ধ করেছে।
অনলাইন জালিয়াতি এবং অর্থ পাচার বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে সরকার জুলাই মাসে টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপটিতে প্রবেশ বন্ধ করে দেয়।
প্ল্যাটফর্মটি নেপালি নিয়ম মেনে চলতে সম্মত হওয়ার পর গত বছরের আগস্টে টিকটকের ওপর থেকে নয় মাসের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।