শিরোনাম
ঢাকা, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ (বাসস): দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বুধবার বেইজিংয়ে এক বিশাল কুচকাওয়াজের উদ্বোধনী ভাষণে প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং বলেছেন, চীন ‘অপ্রতিরোধ্য’।
তিনি বলেন, ‘চীনা জাতির পুনর্জাগরণ অপ্রতিরোধ্য এবং মানবজাতির শান্তি ও উন্নয়ন অগ্রযাত্রার জয় হবেই।’
বেইজিং থেকে এএফপি জানায়, বেইজিংয়ের থিয়ানআনমেন স্কয়ারে এ সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিদেশি নেতা এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় সমবেত জনতার সামনে প্রদর্শিত হয় চীনের সর্বাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম। আর সেই সঙ্গে বেজে ওঠে আনন্দঘন সঙ্গীত।
উদ্বোধনী ভাষণে সি আরও বলেন, ‘মানবজাতি আবারও এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েছে— শান্তি না যুদ্ধ, সংলাপ না মুখোমুখি সংঘর্ষ, উভয়পক্ষের জয় না শূন্য অংকের খেলা— এটাই এখন বড় প্রশ্ন।’
তিনি বিশ্বব্যাপী জাতিগুলোকে যুদ্ধের মূল কারণগুলো নিরসন করতে এবং ঐতিহাসিক ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে আহ্বান জানান।
সি বলেন, ‘যখন বিশ্বজুড়ে জাতিগুলো একে অপরকে সমান হিসেবে গণ্য করবে, সৌহার্দ্য বজায় রাখবে এবং পারস্পরিক সহায়তায় এগিয়ে আসবে, তখনই সবার নিরাপত্তা বজায় থাকবে।’
চীনের সামরিক প্রযুক্তির এক উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হিসেবে বুধবারের অনুষ্ঠানে উন্মোচিত হয় ডিএফ-৫সি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম)।
‘ডংফেং’ ক্ষেপণাস্ত্র সিরিজের অংশ এই বিশাল পারমাণবিক অস্ত্রগুলো বড় ক্যামোফ্লাজ করা সামরিক যানবাহনের ফ্ল্যাটবেডে প্রদর্শিত হয়।
জাতীয়তাবাদী ট্যাবলয়েড গ্লোবাল টাইমস জানায়, ডিএফ-৫সি পৃথিবীর যেকোনো স্থানে আঘাত হানতে সক্ষম।
কুচকাওয়াজে এজেএক্স ০০২ এবং এইচএসইউ ১০০ নামে দুটি নতুন অতিবৃহৎ টর্পেডো-আকৃতির মানববিহীন জলযান প্রদর্শিত হয়, যা লম্বা ট্রাকের ওপর বহন করে প্রদর্শন করা হয়।
নেভাল নিউজের তথ্য অনুযায়ী, পানির উপরিভাগে নৌ শক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় চীন এখনও পিছিয়ে থাকলেও তাদের কাছে পানির নিচের বিশ্বের বৃহত্তম ‘মানববিহীন যান’ রয়েছে, যা ইতোমধ্যে পানিতে চলাচল শুরু করেছে।
তিয়ানআনমেন স্কয়ারের মধ্য দিয়ে এদিন চারটি নতুন অ্যান্টি-শিপ ক্ষেপণাস্ত্রও প্রদর্শিত হয়, যা কয়েক মিটার দীর্ঘ এবং যানবাহনের পেছনে স্থাপন করা ছিল। এগুলো হলো ওয়াইজে-১৫, ওয়াইজে-১৭, ওয়াইজে-১৯ এবং ওয়াইজে-২০। ওয়াইজে মানে ‘ইং জি’, যার অর্থ চীনা ভাষায় ‘ঈগল আক্রমণ’।
এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো জাহাজ বা বিমান থেকে নিক্ষেপ করা যায় এবং বড় জাহাজে গুরুতর ক্ষতি সাধনের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। ওয়াইজে-১৭, ওয়াইজে-১৯ এবং ওয়াইজে-২০ মডেলগুলো হাইপারসনিক হতে পারে, অর্থাৎ এগুলো শব্দের গতির অন্তত পাঁচগুণ বেগে উড়তে সক্ষম।
কুচকাওয়াজে পূর্বাভাস রাডার প্রযুক্তিও গুরুত্বের সঙ্গে প্রদর্শিত হয়। তিয়ানআনমেন স্কয়ারের মধ্য দিয়ে বিশাল সনাক্তকরণ যন্ত্র প্রদর্শন করা হয়। আকাশে রাডার-সজ্জিত বিমানগুলো উড়ে কুচকাওয়াজ প্রদর্শনের মাধ্যমে দেশের নজরদারি সক্ষমতা তুলে ধরে। সর্বপ্রথম জনসম্মুখে আনা হয় কেজে-৬০০ পূর্বাভাস বিমান।
রাষ্ট্র পরিচালিত চায়না ডেইলির মতে, কেজে-৬০০ মূলত বিমানবাহী রণতরীর জন্য ডিজাইন করা হয়েছে এবং আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই চীনের ফুজিয়ান জাহাজে তা যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
সামরিক কুচকাওয়াজের অংশ হিসেবে পানির নিচের ড্রোন, বিশাল ক্ষেপণাস্ত্র এবং লেজার অস্ত্র প্রদর্শনী দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে চীনের এ শক্তি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হলো।