বাসস
  ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২:৩০

মিয়ানমারে নতুন করে নৃশংসতার বিষয়ে সতর্ক করলেন জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক। ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক মিয়ানমারের রাখাইন অঙ্গরাজ্যে বেড়ে চলা নৃশংসতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তিনি সতর্ক করে বলেছেন, দেশটির বর্তমান পরিস্থিতি ২০১৭ সালের সামরিক অভিযানের সাথে ‘দুঃখজনকভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ’। ওই অভিযানের কারণে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হন।

মঙ্গলবার জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমার সেনারা প্রায় ৭ হাজার ১০০ জনকে হত্যা করেছে, যাদের এক-তৃতীয়াংশ নারী ও শিশু। অন্তত ২৯ হাজার ৫৬০ জনকে রাজনৈতিক কারণে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ২২ হাজারের বেশি এখনো সামরিক নিয়ন্ত্রিত আদালতে বিনা বিচারে আটক রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, রাখাইনে সহিংসতা বিস্তারে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। শুধু ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। আগে থেকে শরণার্থী শিবিরে থাকা প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে তারা যুক্ত হয়েছেন।

টুর্ক বলেন, রোহিঙ্গা ও জাতিগত রাখাইন উভয় সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষ সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। সেনারা বেসামরিক নাগরিক ও সুরক্ষিত স্থাপনায় নির্বিচারে হামলা চালাচ্ছে। জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি, গুম, ইচ্ছামতো গ্রেপ্তার, অগ্নিসংযোগ, সম্পদ ধ্বংস, মানবিক সহায়তা বন্ধ এবং ভীতি সঞ্চারের জন্য বারবার নৃশংসতা চালানো হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মি প্রায় সম্পূর্ণ দায়মুক্তির সঙ্গে কাজ করছে। এতে বেসামরিক জনগণের ওপর ভয়াবহ নিপীড়নের চক্র চলছেই। ভিডিও ও ছবিতে যে মৃত্যু, ধ্বংস ও বেপরোয়া ভাব দেখা যাচ্ছে, তা ২০১৭ সালে সেনাদের রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো নৃশংসতার ছবির সঙ্গে দুঃখজনকভাবে মিলে যাচ্ছে। একই ঘটনা আবার ঘটছে দেখে আমি গভীরভাবে ব্যথিত।

জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান মিয়ানমারের পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে সম্পূর্ণভাবে প্রেরণের জন্য পুনরায় আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন অব্যাহত থাকার পাশাপাশি দায়মুক্তি বিদ্যমান থাকায় এ উদ্যোগ নেয়া জরুরি।

২০২৫ সালের ৩১ মে পর্যন্ত বিগত ১৪ মাসের তথ্যের আলোকে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মিয়ানমারের বেসামরিক লোকদের প্রাণহানির প্রায় অর্ধেকই বিমান হামলায় ঘটেছে। এতে আরও নতুন প্রবণতার কথা বলা হয়—যেমন বিস্ফোরকে রাসায়নিক ব্যবহার এবং ‘প্যারামোটর’ দিয়ে বেসামরিক এলাকায় বোমা নিক্ষেপ।

টুর্ক জরুরি মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। তিনি উল্লেখ করেন, এ বছর মিয়ানমারের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ তীব্র খাদ্য সংকটের ঝুঁকিতে রয়েছে।

তিনি বলেন, এমন ভয়াবহ সহিংসতা বন্ধে এবং বছরের পর বছর সহিংসতা, অনাহার ও বাস্তুচ্যুতির শিকার হয়ে মানবিক সহায়তা থেকে বঞ্চিত জনগণের কাছে জরুরি সহায়তা পৌঁছাতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার সময়।

তিনি আরও বলেন, এ জন্য জরুরি ভিত্তিতে অর্থায়ন প্রয়োজন। আমি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি অনুরোধ জানাই,  তারা যাতে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর দায়িত্ব পালনে সব পক্ষকে বাধ্য করে এবং আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘনের জন্য দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে।

জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত বিশ্বের বৃহত্তম জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা বাংলাদেশ মিয়ানমারে তাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক চাপ জোরদারের আহ্বান জানিয়ে আসছে বলে পর্যবেক্ষকরা জানান।