বাসস
  ২৩ আগস্ট ২০২৫, ১২:৫৮

পুতিন-জেলেনস্কি বৈঠকের আশা ম্লান

ঢাকা, ২৩ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শান্তি প্রচেষ্টায় ক্লান্ত হয়ে পড়ায় এবং ইউক্রেনের ভয়াবহ যুদ্ধের অবসান ঘটানোর প্রচেষ্টায় মস্কো ঠান্ডা জল ঢেলে দেওয়ায় শুক্রবার রাশিয়া-ইউক্রেন শীর্ষ সম্মেলনের সম্ভাবনা ম্লান হয়ে গেছে। 

ওয়াশিংটন থেকে এএফপি এ খবর জানায়।

সোমবার ট্রাম্প এই বলে প্রত্যাশা বাড়িয়েছিলেন যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ইউক্রেনের ভলোদিমির জেলেনস্কি মুখোমুখি দেখা করতে রাজি হয়েছেন। কিন্তু শুক্রবার তিনি এই দুই ব্যক্তিকে ‘তেল এবং ভিনেগার’- এর সাথে তুলনা করেছেন।

রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, ট্রাম্পের মধ্যস্থতা প্রচেষ্টা থেমে যাওয়ায় ‘কোনও বৈঠক’ এর পরিকল্পনা করা হয়নি, অন্যদিকে জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়া যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করছে।

মস্কো ব্যাপক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে পারে অথবা তিনি ‘কিছুই নাও করতে পারেন’ উল্লেখ করে ট্রাম্প শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, তিনি ইউক্রেন শান্তি প্রচেষ্টার বিষয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ’ সিদ্ধান্ত নেবেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট, লাল বেসবল ক্যাপ পরে ওভাল অফিসে বলেন, ‘ট্যাঙ্গো (দক্ষিণ আমেরিকার নৃত্য) করতে দুইজন লাগে।’ ‘ট্রাম্প সবকিছুতেই ঠিক আছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘দুই সপ্তাহের মধ্যে, আমরা জানতে পারব আমি কোন পথে যাচ্ছি। কারণ, আমি এক বা অন্য পথে যাব এবং আমি শিখব যে আমি কোন পথে যাচ্ছি।’ ’সেটা হলো বিশাল নিষেধাজ্ঞা, বিশাল শুল্ক, নাকি দুটোই। 

নাকি আমরা কিছুই করব না এবং বলব এটা তোমাদের লড়াই।’

তবে ট্রাম্প একটি ছবি তুলে ধরে বলেন, পুতিন এক সপ্তাহ আগে আলাস্কায় তাদের ঐতিহাসিক শীর্ষ সম্মেলনের পর  এটি তাকে পাঠিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ইউক্রেন ইস্যুতে অগ্রগতি হলে তিনি রাশিয়ান নেতাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপ ফাইনালে আমন্ত্রণ জানাতে পারেন।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এবং ক্রেমলিনের সর্বোচ্চ দাবির পুনরাবৃত্তি করে লাভরভ চতুর্থ বছরে পড়া এই সংঘাত সমাধানের জন্য পুতিন-জেলেনস্কির সরাসরি আলোচনার আশা ম্লান করে দেন। 

‘এনবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ল্যাভরভ বলেন, ‘কোনও বৈঠকের পরিকল্পনা নেই। প্রবীণ রুশ কূটনীতিক বলেন, ‘পুতিন একটি এজেন্ডা প্রস্তুত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলেনস্কির সাথে দেখা করতে প্রস্তুত।’ তবে এই ধরণের এজেন্ডা ‘একেবারেই প্রস্তুত নয়।’ 

কিয়েভে সফররত ন্যাটো প্রধান মার্ক রুটের সঙ্গে আলোচনা কালে, জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেনের ‘রাশিয়ানদের সাথে কোনও চুক্তি নেই।’ 

বৃহস্পতিবার, জেলেনস্কি রাশিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন যে তারা ‘একটি বৈঠক আয়োজন থেকে সরে আসার চেষ্টা করছে।’ তিনি আরো বলেন, মস্কো আক্রমণ চালিয়ে যেতে চায়।

সংঘাতের অবসান ঘটাতে শান্তি চুক্তির মধ্যস্থতার জন্য মার্কিন নেতৃত্বাধীন সর্বশেষ কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ইউক্রেনের জন্য চূড়ান্ত নিরাপত্তা গ্যারান্টির প্রশ্নটি কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।

সোমবার হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কি, রুট এবং শীর্ষ ইউরোপীয় নেতাদের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো ট্রাম্প পুতিনকে ফোন করার আগে বলেন, রাশিয়া কিয়েভের জন্য কিছু পশ্চিমা নিরাপত্তা গ্যারান্টিতে সম্মত হয়েছে।

কিন্তু মস্কো পরে এই ধরণের কোনও ব্যবস্থা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে। বুধবার ল্যাভরভ বলেন, রাশিয়া ছাড়া তাদের নিয়ে আলোচনা ‘কোন পথে যাচ্ছে।’

জেলেনস্কি ভবিষ্যতে রাশিয়ার আক্রমণ ঠেকাতে ইউক্রেনে বিদেশি সেনাদের চান। তবে তিনি বলেন, ‘রাশিয়া যখন নিরাপত্তার গ্যারান্টির বিষয়টি উত্থাপন করে, তখন আমি সত্যি বলতে কি, এখনও জানি না কে তাদের হুমকি দিচ্ছে।’

ইউক্রেনের ন্যাটো উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে তাদের আক্রমণের অন্যতম অজুহাত হিসেবে উল্লেখ করে আসছে। ক্রেমলিন দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে যে তারা কখনই এটি মেনে নেবে না ।

রুট বলেন, ‘রাশিয়া যেকোনো চুক্তি মেনে চলবে এবং আর কখনও ইউক্রেনের এক বর্গকিলোমিটার দখলের চেষ্টা করবে না’ সেটি নিশ্চিত করার জন্য নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রয়োজন।

১৯৯৪ সালে মস্কো বুদাপেস্ট স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করে, যার লক্ষ্য ছিল ইউক্রেন, বেলারুশ ও কাজাখস্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সোভিয়েত আমলের অসংখ্য পারমাণবিক অস্ত্র ত্যাগ করা।

তবে, রাশিয়া এই চুক্তি লঙ্ঘন করে প্রথমে ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল করে এবং তারপর ২০২২ সালে পূর্ণ মাত্রার আক্রমণ শুরু করে, যার ফলে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয় এবং লাখ লাখ মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়।